একটা জয় বদলে দিতে পারে সবকিছু, আবার একটা হার ঠেলে দিতে পারে ছিটকে। লাহোরের সকালটা আজ তাই নিগার সুলতানাদের জন্য শুধুই আরেকটি ম্যাচ নয়, বরং একটি স্বপ্নের নিয়তি নির্ধারণের দিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ নারী দলের বিশ্বকাপ ভাগ্য এখন দাঁড়িয়ে আছে এক জটিল সমীকরণের মোড়কে, যেখানে প্রতিটি রান, প্রতিটি উইকেট, এমনকি প্রতিপক্ষের ম্যাচও প্রভাব ফেলতে পারে পরিণতিতে।
ছয় দলের এই বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত একমাত্র পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে তাদের টিকিট— জিতেছে চারটি ম্যাচই। বাকি একটি টিকিটের পেছনে ছুটছে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ড। তবে এগিয়ে আছে নিগাররা, কারণ নিজেদের খেলা চার ম্যাচে জয় এসেছে তিনটিতে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে। আর তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ড আছে ৪ পয়েন্টে।
আরও পড়ুন: হামজার নৈপুণ্যে মুগ্ধ কোচ, বিস্মিত ধারাভাষ্যকাররাও
সবচেয়ে সরল ও নির্ভরযোগ্য পথ হচ্ছে, পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়া। তাহলেই ৮ পয়েন্ট নিয়ে কোনো হিসেব ছাড়াই নিশ্চিত হবে বিশ্বকাপের টিকিট। সে ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী হলেও তাদের কোনো লাভ হবে না, কারণ পয়েন্টে পেছনে থেকেই শেষ করতে হবে। কিন্তু ম্যাচ যদি বৃষ্টিতে ভেসে যায়? এমন পরিস্থিতিতেও স্বস্তির জায়গা রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। পয়েন্ট ভাগাভাগি হলে তাদের সংগ্রহ দাঁড়াবে ৭-এ, যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলেও পাবে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট— তাতে করেই মিলবে বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র।
তবে বিপদটা তৈরি হবে যদি বাংলাদেশ হেরে বসে পাকিস্তানের কাছে। তখনই সমীকরণ জটিল হয়ে উঠবে। হারলেও অবশ্য সুযোগ একেবারে হারিয়ে যাবে না। যদি থাইল্যান্ড অঘটন ঘটিয়ে হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, তবে বাংলাদেশের টিকে থাকা নিশ্চিত। কিন্তু যদি ক্যারিবীয়রা প্রত্যাশিত জয় তুলে নেয়, তবে শুরু হবে রান রেটের হিসাব।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নেট রান রেট +১.০৩৩, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের –০.২৮৩। দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা এতটাই বিস্তর যে, ক্যারিবীয়দের রান রেটে এগিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে পাকিস্তান, আর নিজে বিশাল ব্যবধানে জিততে হবে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে।
এই টুর্নামেন্টে আগেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে পাকিস্তান। বিপরীতে, থাইল্যান্ড এখন পর্যন্ত একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি। বাস্তবতা বলছে, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তুলনামূলকভাবে কঠিন। অথচ এমন বাস্তবতার মাঝেই আশা জাগিয়েছে নিগাররা। বাছাইপর্বে এর আগে তারা হারিয়েছে থাইল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে, কেবল হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। একমাত্র সে হারই বাড়িয়ে দিয়েছে এই ম্যাচের চাপ।
আরও পড়ুন: সোবার্স-রিচার্ডসের পাশে নাম, বাবর ছাড়িয়ে যাবেন কোহলিকেও
বিশ্বকাপ মানেই স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্নে নাম লেখাতে হলে লড়াইটা আজ ঘুরছে কেবল মাঠেই নয়— অঙ্ক কষার টেবিলেও। কে কত রানে হারাবে, কে কখন ব্যাটিং নেবে, নেট রান রেট, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে— এসব প্রশ্নের মাঝেও লাল-সবুজের মেয়েদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর একটি— পাকিস্তানকে হারানো। তাহলেই সব প্রশ্নের ইতি, নিশ্চিতভাবে মিলবে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট।