ক্রিকেট বিশ্বে এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যা কেবল স্কোরবোর্ড দেখে বোঝা যায় না; সেগুলো অনুভব করতে হয়। ২০১৩ সালের নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে এলিস পেরির পারফরম্যান্স ছিল তেমনই এক অধ্যায়। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার পায়ের গোড়ালির চোট নিয়ে লড়াই করে প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দিয়ে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০১৩ নারী বিশ্বকাপ চলাকালীন গোড়ালির চোটে পড়েছিলেন এলিস পেরি। পুরো আসরেই তিনি প্রায় মাঠের বাইরে ছিলেন। তবে ফাইনালের আগে অস্ট্রেলিয়া দল ঝুঁকি নিয়ে পেরিকে একাদশে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।
ফাইনাল ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২৫৯ রান সংগ্রহ করে। পেরি ব্যাটিং করতে এসেছিলেন ৭ম উইকেট পতনের পর। তখন দলের সংগ্রহ ছিলো ৪৩ ওভারে ২০৯ রান। পেরির ২২ বলে অপরাজিত ২৫ রানের কার্যকরী ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে ২৫৯ রানের লড়াকু পুঁজি এনে দিতে সাহায্য করে।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। উদ্বোধনী জুটি ৯ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে যুক্ত করে ৩২ রান । তখন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক বল তুলে দিলেন পেরির হাতে।
প্রথম বল করতে গিয়েই গোড়ালির ব্যথায় কেঁপে উঠলেন পেরি, রান-আপে গিয়েও থেমে গেলেন। এরপর আবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ব্যথা তাঁকে দমিয়ে রাখলো। ফিজিও মাঠে এলেন সবাই ধরে নিলো পেরির আর খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু পেরি হার মানলেন না। তৃতীয় প্রচেষ্টায় তিনি প্রথম বলটা করলেন।
ব্যথার মধ্যেই বোলিং করতে থাকলেন পেরি। প্রথম ওভারের শেষ বলে তিনি ভাঙলেন ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক স্টেফানি টেলরকে। এক হাত বাড়িয়ে ক্যাচ নিলেন নিজেই! পরের ওভারে পেলেন আরেকটি উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকেই ফিরিয়ে দিলেন একাই!
মাত্র ৩ ওভার বোলিং করেই তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৩ ওভার ২ রান ২ মেইডিন ৩উইকেট! যেখানে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে ছিলো, পেরির এক স্পেলেই তারা মুহূর্তে ম্যাচ থেকে ছিটকে। পুরো ১০ ওভার বোলিং করে পেরি মাত্র ১৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নিলেন। আর অস্ট্রেলিয়া পেল ১১৪ রানের বিশাল জয়।
ম্যাচের পর জানা গেল, পেরির গোড়ালির চোট আসলে অনেক গুরুতর ছিল। তিনি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের (হাড় ফেটে যাওয়া) মধ্যে দিয়ে খেলেছিলেন। তবুও দলকে জেতাতে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন।
এলিস পেরি শুধু একজন ক্রিকেটার নন তিনি ক্রিকেটের এক অধ্যায়। একজন সাহসী যোদ্ধা যিনি বারবার দেখিয়ে দেন শুধু প্রতিভাই নয় অদম্য মানসিকতা আর আত্মত্যাগই সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নদের আলাদা করে তোলে। এলিস পেরি একজন কিংবদন্তি, যিনি অসাধারণত্বের সীমানা বারবার বাড়িয়ে দেন!