বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

আফগান নারী ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়াল আইসিসি

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তালেবান শাসনে অধিকার থেকে বঞ্চিত আফগান নারী ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়াতে এবার এক উদ্যোগী পদক্ষেপ নিয়েছে সংগঠনটি। আইসিসির উদ্যোগে গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স, যার লক্ষ্য— আফগান নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলার সুযোগ অব্যাহত রাখা এবং তাদের প্রতিভা বিকাশে সক্রিয় সহায়তা প্রদান।

এই কর্মসূচিতে আইসিসির সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ভারতের বিসিসিআই, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। যৌথভাবে তারা একটি ‘বিশেষ সহায়তা তহবিল’ গঠন করবে, যার মাধ্যমে আফগান নারী ক্রিকেটাররা সরাসরি আর্থিক সহায়তা পাবেন। এর পাশাপাশি থাকবে একটি বিস্তৃত উচ্চ-দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, যেখানে খেলোয়াড়দের দেওয়া হবে পেশাদার কোচিং, উন্নত অনুশীলন সুযোগ এবং ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য পরামর্শক।

আরও পড়ুন: গেম চেঞ্জার’ রিশাদ, প্রশংসায় ভাসলেন বিলিংস-শাহীন ও লাহোরের ম্যানেজারের

আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এই উদ্যোগকে শুধুই একটি খেলা নয়, বরং “আশা, অন্তর্ভুক্তি এবং সম্ভাবনার প্রতীক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, “বিশ্বজুড়ে প্রতিটি প্রতিভাকে আমরা সম্মান করি— সেটি যত প্রতিকূল পরিবেশেই গড়ে উঠুক না কেন। এই উদ্যোগ সেই প্রতিশ্রুতিরই বহিঃপ্রকাশ, যেখানে আমরা চাই প্রত্যেক নারী ক্রিকেটার খেলায় নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারুক।”

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর নারীদের ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র কিংবা খেলাধুলা— সবখান থেকেই নারীরা একরকম নির্বাসিত হন। অথচ তালেবান শাসনের ঠিক আগেই আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ২৫ নারী ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেই নারী ক্রিকেটারদের অনেকেই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে রয়েছেন।

পুনর্বাসিত এই নারী ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে কয়েকজন গত বছর আইসিসিকে একটি আবেদন পাঠিয়ে তাদের ‘শরণার্থী দল’ হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে তারা মেলবোর্নে একটি প্রদর্শনী ম্যাচও খেলেন, যা ছিল এক দারুণ বার্তা— নীরবতার মাঝেও প্রতিরোধের আওয়াজ তোলে খেলা।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টি-টেন ফরম্যাট আনার কথা ভাবছে আইসিসি

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ এই পদক্ষেপকে ‘আফগান নারী ক্রিকেটারদের পুনর্জন্মের পথে একটি দৃঢ় ভিত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে ইসিবি প্রধান রিচার্ড গোল্ড জানিয়েছেন, “নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরব। আইসিসির এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপ নিলে তা শুধু আফগান নারী ক্রিকেটারদের নয়, বরং বিশ্বব্যাপী নারীদের জন্যও হবে এক প্রেরণার উৎস।”

যদিও নারী ক্রিকেটারদের বিষয়ে দারুণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানের পুরুষ দলকে এখনো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে— যা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ ইতোমধ্যেই আইসিসির কাছে দেশটির সদস্যপদ স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।

এবার দেখার পালা, আইসিসির নতুন এই উদ্যোগ নারীদের ক্রিকেটে কতটা ফলপ্রসূ হয়।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর