বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

জয় কেন অফস্টাম্পের বাইরের বলে বারংবার পরাস্ত হচ্ছেন?

মাহমুদুল হাসান জয়, বাংলাদেশের ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এক তারকা। জাতীয় দলে অভিষেকটাও হয়ে গেছে অনেক আগে, ২০২১ সালে। টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেন জয় এবং ক্যারিয়ারের শুরুতেই তার কাছে ধরা দেয় সাফল্য। ২০২২ সালের বিখ্যাত মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ঐতিহাসিক জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন মাহমুদুল এবং নিজের খেলা তার পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিঃসঙ্গ সৈনিক হয়ে লড়াই করে খেলেন ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

তখন থেকেই জয়কে নিয়ে একটি আলোচনা শুরু হয় যে বাংলাদেশকে নতুন ওপেনার পেল বোধ হয়। তবে তার ক্যারিয়ারের উত্থানটা যেমন হয়েছে, পতনটা হতেও তেমন একটা সময় লাগেনি। সেই ১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পর থেকেই জয় আছেন অফফর্মে। মাঝে মাঝে দু-একটা বিচ্ছিন্ন ইনিংস খেললেও মাহমুদুলের টেস্ট ক্যারিয়ারটা এখন পর্যন্ত ব্যর্থতাতেই মোড়ানো। ১৮ টেস্টের ক্যারিয়ার শূন্য রানে আউট হয়ে গেছেন সাতবার। এমনকি জিম্বাবুয়ের টেস্ট শুরুর আগে ১৫ ইনিংসে নেই কোনো ফিফটি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন মাত্র ১৪ রান করে। তার আউটের ধরন দেখলে যেকোনো ক্রিকেট ভক্তের চোখে যেটা পড়বে সেটা হলো, তিনি অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল শট খেলতে গিয়ে পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।

আরও পড়ুন: আল্লাহ কপালে না রাখলে হতো না, বিশ্বাস জ্যোতির

এই সমস্যাটা মাহমুদুল হাসানের অনেকদিন ধরেই বিদ্যমান। এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে আউট হয়েছেন একই ধরনে। জয়ের এই আউট নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি। তিনি মনে করেন, সাধারণত অফস্টাম্পের বাইরে কিংবা ষষ্ঠ স্টাম্পের বাইরে বল আসলে সেগুলোকে ব্যাটাররা ছেড়ে দেয়।

কিন্তু সব বল তো আর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ছেড়ে দেওয়াটা একটা সারভাইভাল টেকনিক হতে পারে, যে টেকনিক অবলম্বন করে আপনি ক্রিজে টিকে থাকতে পারবেন। কিন্তু বল ছেড়ে দিলে তো আর রান হবে না। রান করতে হলে তো শটস খেলতে হবে। সেই শট খেলতে গিয়েই যদি আউট হয়ে যান, তাহলে সেটা তো অবশ্যই একটি সমস্যা। এখন মাহমুদুল হাসান জয় আউট হয় দেখে কি আর শট খেলবে না? নাকি নিজের উন্নতি করবেন?

সৈয়দ সামি মনে করেন, এই জায়গায় জয়ের উন্নতি করার অনেক সুযোগ আছে। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, জয় যখন ষষ্ঠ স্টাম্পের বল খেলতে যান তখন তার শোল্ডার কিংবা কাঁধ থাকে সোজা, বোলারের বরাবর। তাই তিনি যখন শটটা খেলতে যান তখন তার ব্যাট আসে প্রথম স্লিপের দিক থেকে। এই জায়গাটাতেই সমস্যাটা পাকান জয়।

আরও পড়ুন: মিরাজের ৫ উইকেটের রহস্য ‘গতি’

এই টেকনিকে কাভার ড্রাইভের মত শট খেলতে গিয়ে তিনি বলের কাছে ঠিকঠাকভাবে যেতে পারছেন না, যার ফলে বল ব্যাটের কাণায় লেগে পেছনে ক্যাচ যাচ্ছে। এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিনশেষে ২৮ রানে অপরাজিত থাকলেও একই প্যাটার্নে তিনি ক্যাচ দিয়েছিলেন পেছনে, তবে কিপার তা ধরতে ব্যর্থ হন দেখে দ্বিতীয় দিন শেষে অপরাজিত আছে জয়।এই যে কাভার ড্রাইভ খেলার সময় জয়ের ব্যাট থাকে স্লিপ বরাবর কিংবা শোল্ডার থাকে সোজা — এই বলগুলো কি এই প্যাটার্নে খেলা হয়, নাকি অন্য প্যাটার্ন ফলো করা যায়? এ জায়গায় সৈয়দ সামি উদাহরণ নিয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি টেস্ট ব্যাটার জো রুটের। জো রুট যেভাবে অফস্টাম্পের বাইরের বল কিংবা ষষ্ঠ স্টাম্পের বলগুলো খেলেন, সেগুলো একজন ব্যাটারের জন্য অনুসরণ করার মতো হতে পারে।জো রুট যেটা করেন — যখন স্টাম্পের বাইরে বল আসে, তখন তিনি তার কাঁধটা নিয়ে যান বলের দিকে।

আরও পড়ুন: ইডেনে গুজরাটের দাপট, গিল ঝড়ে উড়ে গেল কলকাতা

অর্থাৎ, জয়ের মতো শর্ট খেলার সময় কাঁধ সোজা রাখেন না, বরং কাঁধ রাখেন বলের লাইন বরাবর। তাই জো রুটের ব্যাটও আসে কিপারের বরাবর থেকে, যার ফলে শটটা খেলা তার জন্য সহজ হয়।মাহমুদুল হাসান জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অন্যতম প্রতিভা। বয়স, টেম্পারামেন্ট আর টেকনিক—সবই আছে তার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শোধরাতে হবে কিছু ছোটখাটো ভুল, কাটিয়ে উঠতে হবে পুরনো দুর্বলতা। জয়ের ব্যাটে যে সম্ভাবনার সুর বাজে, সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দরকার ধৈর্য, পরিশ্রম আর টেকনিক্যাল টাচ। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন—আবার জয় ফিরবেন। শুধু ফেরা নয়, আরও পরিণত হয়ে, আরও নিখুঁত ব্যাটার হয়ে। যেন একদিন তার নামটাও উচ্চারিত হয় গর্বের সুরে—বাংলাদেশের ওপেনিং গ্লাভের এক বিশ্বস্ত নাম হিসেবে।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর