বুধবার, জুন ২৫, ২০২৫
সামি'স কর্নার

পাইপলাইন মজবুত করতে প্রয়োজন ‘এ’ দলের নিয়মিত সিরিজ: সৈয়দ সামি

নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ ‘এ’। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেও, শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় কিউইরা। এই সিরিজে বাংলাদেশ এ দলের মিডল অর্ডার ভালো করলেও এ দলের টপ অর্ডারও ছিল হতাশাজনক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্পটাই এখন এরকম, টপ অর্ডারের ব্যর্থতার গল্প। হ্যাঁ, কিছু রান এসেছে টপ অর্ডার থেকে, কিন্তু সেই ইনিংসগুলো লম্বা হয়নি। প্রথম ম্যাচের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন অঙ্কন, যিনি মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে সোহান ও অঙ্কন শতক পেয়েছেন, এই দুজনই ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে। তৃতীয় ম্যাচে তো সবচেয়ে বেশি রান এসেছে ৮ নম্বর ব্যাটার নাসুম আহমেদের ব্যাট থেকে, ম্যাচে আরেকজন যিনি ফিফটি করেছেন ইয়াসির আলী, তিনিও মিডল অর্ডার ব্যাটার। তাই টপ অর্ডার যে ব্যর্থ ছিল তা বলাও যায়। কিন্তু এটাই কি তাদের শেষ সুযোগ?

আরও পড়ুন: শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো নিউজিল্যান্ড ‘এ’

পারভেজ হোসেন ইমন ডিপিএলে ভালো করলেও এই সিরিজে সুবিধা করতে পারেননি। এনামুল হক বিজয়, যিনি ডিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, করেছেন ৩ ম্যাচে মাত্র ৭৯ রান। আর টানা তিনটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে পারফর্ম করা নাঈম শেখ এই সিরিজে করেছেন মাত্র ৬২ রান। তাহলে কি এই সিরিজ দেখে বিজয়-নাঈমদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া উচিত? ‘অন-ফিল্ড’ এর সিইও ও বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি এমনটা মনে করেন না। বরং তাঁর মতে, এই এ দলকেই ধারাবাহিকভাবে সিরিজ খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত, যেন খেলোয়াড়রা তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে নিজেকে উন্নত করতে পারে। শুধুমাত্র ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে তিনি এনেছেন নাঈম শেখের কথাই। ক্যারিয়ারের শুরুতে নাঈম স্টাম্পের বলগুলো ভালো খেললেও অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে দুর্বল ছিলেন নাঈম, মূলত ফু্ট মুভমেন্ট ভালো না থাকায় সে সময় সমস্যায় পড়তেন। তবে ধীরে ধীরে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন। ‘অন-ফিল্ড’ এর এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গার্ড পজিশন বদল করায় ঘরোয়া ক্রিকেটে অফ-স্টাম্পের বাইরের বলেও নিয়ন্ত্রণে খেলতে পারছিলেন তিনি।

এই টেকনিকেই নাঈম এনসিএল টি-টোয়েন্টি ও বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। ডিপিএলে নাঈম শেখের দল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব সুপার লীগের আগে বাদ পড়ে গেলেও, তিনি রান সংগ্রাহক তালিকায় ছিলেন তিন নম্বরে, ১১ ম্যাচে ১২২ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৬১৮ রান, গড় ছিল ৬২। সেই নাঈম কেনো নিউজিল্যান্ড এ সিরিজে ব্যর্থ হলেন?

নিউজিল্যান্ড এ দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও নাঈম শেখ দুর্দান্ত কিছু শট খেলেন অফ-স্টাম্পের বাইরের বলগুলোতে। তবে পরের দুই ম্যাচেই তার সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: পেছাতে পারে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দল ও ম্যানেজমেন্টকে স্মার্ট বলেই জানে ক্রিকেটবিশ্ব। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের দুর্বলতা বিশ্লেষণে জুড়ি নেই কিউইদের। সেই স্মার্ট কিউই বোলাররা পরিকল্পনা বদলে ফেলে নাঈমের জন্য। সচরাচর শুরুর দিকে বোলাররা ওভার দ্যা উইকেট দিয়ে শুরু করলেও যখন বুঝলেন নাঈমের দুর্বলতা স্টাম্প করিডোর না, বরং অফ স্টাম্প করিডোর, তাই তারা রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে অফ-স্টাম্পের বাইরের বল করে তাকে বিপদে ফেলে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪০ রান করলেও শুরুতে ধুঁকছিলেন, আর তৃতীয় ম্যাচে তো মাত্র ৪ রান করে ফিরেন, তাও আবার যে চার রান করেছেন সেটাও স্লিপ ফিল্ডারের হাত ফসকে চার হয়ে যাওয়া এজ থেকে। প্রথম ওভারেই এদিন কিউই বোলারদের নতুন পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে আউট হন নাঈম।

এই দুর্বলতাগুলোই যে এখন কাজ করে সমাধান করা দরকার, সেটাই বলেন সৈয়দ সামি। সৈয়দ সামি মনে করেন, মূলত দুটি কারণে নাঈম শেখ এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, প্রথমত, নাঈমের ইনিশিয়াল মুভমেন্ট অর্থাৎ শুরুটা একটু দেরিতে করে ফেলছেন যে কারণে সুইং ধরতে পারছেন না, তার দরুণ আউটসাইড এজ হয়ে আউট হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, নাঈমের টো থাকছে পয়েন্ট বা কাভার বরাবর, যেটাও শট খেলতে বাঁধা দিচ্ছে নাঈমকে।

আরও পড়ুন: টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান কোহলি

সৈয়দ সামির মতে, এই টিউনিংয়ের জন্যই দরকার ‘এ’ দলের নিয়মিত সিরিজ। তিন ম্যাচ খারাপ করলেই কাউকে বাতিল করে দেওয়ার পক্ষে নন তিনি। বরং, এই দলটাকেই ধরে রেখে শ্রীলঙ্কার এ দলের সঙ্গে সিরিজ আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি—হোক সেটা বাংলাদেশে কিংবা বিদেশে। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে বাংলাদেশের, ওই সময়টাতে স্কোয়াডের বাইরের প্লেয়াররা ব্যস্তও থাকবেন না; সেই সময় দরকার হলে শ্রীলঙ্কার এ দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশ এ দলের সাথে সিরিজ আয়োজন করা যায়, কিংবা বাংলাদেশ এ দলকেও সেখানে পাঠানো যাবে।সৈয়দ সামি মনে করেন, যত ঘন ঘন এ দলের সিরিজ হবে, তত মজবুত হবে বাংলাদেশের পাইপলাইন। প্লেয়াররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আরও প্রস্তুত হবে। সেই প্রস্তুতিতে বাড়তি সংযোজন হিসেবে তিনি এ দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের পাশাপাশি স্বল্প সময়ের জন্য কোচ সালাউদ্দিনকেও এ দলে কনসালটেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে করে খেলোয়াড়দের উন্নয়ন হবে আরও দ্রুত ও কার্যকর। এক সিরিজের ৩ ম্যাচ দেখেই খেলোয়াড়দের ছেঁটে ফেলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। টপ অর্ডারে যারা খেলেছেন তারা ব্যর্থ হলেও ঘরোয়াতে এই তিনজনই বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। এটা ঠিল, তারা হয়তো ঘরোয়ায় পর্যাপ্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় না। এই চ্যালেঞ্জকে মোহাবিলা করতেই এ দলের সিরিজ। তাই ধারাবাহিকভাবে ‘এ’ দলের সিরিজ আয়োজন, অভিজ্ঞ কোচদের সম্পৃক্ততা আর খেলোয়াড়দের সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করার মাধ্যমে তৈরি হতে পারে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত একটি শক্তিশালী ও বিস্তৃত পাইপলাইন।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর