বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে শুধু ক্রিকেটার কিংবা কোচই নন, পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টদের চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ম্যাচ-পূর্ব পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণ এবং দলীয় পারফরম্যান্স মূল্যায়নে একজন দক্ষ অ্যানালিস্টের ভূমিকা এখন অপরিহার্য। পাশাপাশি এই পেশাটি এখন অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে এতদিন ভালো মানের টিম অ্যানালিস্টদের অভাব ছিল। এমনকি দেশে এই বিষয়ে কোর্স বা প্রশিক্ষণের সুযোগও ছিল না। সেই অভাববোধ থেকেই এগিয়ে আসে ‘অন-ফিল্ড’। ‘বিয়োন্ড বর্ডার্স’ (Beyond Borders)কে নিয়ে ‘অন-ফিল্ড’ এর পক্ষ থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন।

আরও পড়ুন: বার্নাব্যুতেও রিয়ালের আত্মসমর্পণ, অবশেষে সেমিতে আর্সেনাল
তিনি ভারত থেকে প্রখ্যাত ক্রিকেট অ্যানালিস্ট দেবরাজ রাউতকে বাংলাদেশে এনে আয়োজন করেন একটি পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট কোর্স। এই কোর্সে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন।
১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগে প্রথমবারের মতো ছয়টি দল—আবাহনী, মোহামেডান, অগ্রণী ব্যাংক, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স—সবার সঙ্গেই থাকছে পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট। এর আগে ঘরোয়া লিগে এমন নজির দেখা যায়নি। আবাহনী বাদে বাকি পাঁচটি দলের সঙ্গে ‘অনফিল্ড’-এর কোর্স করা শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেছে বিসিবি। এতদিন কেন হয়নি? কারণ ছিল প্রস্তুত জনবলের অভাব। সেই প্রস্তুত জনবলই তৈরি করে দিয়েছে ‘অন-ফিল্ড’। ‘অন-ফিল্ড’এর উদ্যোগে হওয়া অ্যানালাইসিস কোর্স থেকে ২০ জনের বেশি অ্যানালিস্টকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: হাঙ্গেরিতে গ্রান্ডমাস্টারকে বধ করে স্বপ্নপূরণে এক ধাপ এগিয়ে তাহসিন
এই অ্যানালিস্টদের শুধু ডিপিএলে নয়, বয়সভিত্তিক দল, বিসিএল এমনকি ভবিষ্যতে জাতীয় দলের বাইরেও বিভিন্ন স্তরে কাজে লাগানো হবে। কারণ একটি দেশের ক্রিকেট কাঠামোতে শুধু জাতীয় দলের একজন বা দুজন অ্যানালিস্ট দিয়ে আধুনিক চাহিদা মেটানো যায় না। দরকার একটি শক্তিশালী পুল, যেখানে থেকে তৈরি হবে দক্ষ ও ভবিষ্যতমুখী পারফরম্যান্স বিশ্লেষকরা।

এই উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন ‘অন-ফিল্ড’ সিইও সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি। দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কিছু করার ভাবনা থেকেই তিনি এই পথ বেছে নেন। তাঁর এই প্রস্তাবটি বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ফাহিম সিনহা সাদরে গ্রহণ করেন। যদিও পুরো ডিপিএলে ১২ দলের জন্য না হলেও, অন্তত সুপার লিগ পর্ব থেকেই শুরু হচ্ছে এই নতুন যাত্রা। ছয় দলের সঙ্গে ছয় অ্যানালিস্ট—এ যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণের এক যুগান্তকারী সূচনা।