সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি— দেশবরেণ্য ক্রিকেট বিশ্লেষক এবার বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে এক দারুণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুধু ক্রিকেট নয়, জিতে যাবে মানবজাতিও, উপকৃত হবে সেই নিপীড়িত গা’জাবাসী, যাদের কষ্টে আজ ব্যথিত পুরো দেশ। ক্রিকেট কখনো শুধুই একটি খেলা না। এটি হয়ে ওঠে সংস্কৃতি, হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা, এবং কখনো কখনো হয়ে ওঠে মানবতার হাতছানি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড — বিসিবি চাইলে সামনে এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে—যা শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।
সাম্প্রতিক সময়ে গা’জায় চলমান মানবিক সংকট বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা সংগঠনের মাধ্যমে সহানুভূতি জানাচ্ছেন। কিন্তু একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ—বিশেষ করে ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যদি সহায়তার হাত বাড়ানো যায়, তাহলে সেটি হবে এক অভূতপূর্ব ও কার্যকর প্রয়াস। এই প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে একটি অনন্য পরিকল্পনার কথা, যা নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি।
আরও পড়ুন: ফি’লিস্তিনি শিশুদের সহায়তায় অভিনব উদ্যোগ রিজওয়ানদের
তার ভাষায়, “জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট দেখতে মানুষ যাবে না, কথা সত্য৷ কিন্তু এই টেস্টের মাঝে যদি থাকে সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তাহলে অবশ্যই মানুষ যাবে৷” তার প্রস্তাব অনুযায়ী, বিসিবি যদি এই সিরিজের টিকিটের ৫০% আয় গাজাবাসীর জন্য ডোনেট করে, তবে এটি শুধু একটি খেলাই হবে না, হয়ে উঠবে জীবনের পক্ষে এক বলিষ্ঠ অবস্থান।এই ভাবনাটি বাস্তবায়ন করা খুব একটা কঠিনও নয়। গ্যালারির অর্ধেক অংশ এমনিতেই খালি থাকে টেস্ট ম্যাচগুলোতে। সেখানে যদি এমন ঘোষণা দেওয়া হয়—১০০ টাকার টিকিটের ৫০ টাকা, ৫০০ টাকার টিকিটের ২৫০ টাকা, কিংবা ১০০০ টাকার টিকিটের ৫০০ টাকা গাজায় সহায়তা হিসেবে যাবে—তাহলে শুধু সিলেট বা চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও দর্শকরা ম্যাচ দেখতে আসবেন, শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, সহানুভূতির অংশীদার হতে। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন সামি—অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন ভিডিও দেখে আবেগে গা ভাসিয়ে ডোনেট করতে চান, কিন্তু কীভাবে করবেন তা জানেন না। ক্রিকেটের মাধ্যমে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলে সেই মানুষেরাও সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ পাবেন। এখানে সম্প্রচার স্বত্বের দিকটিও আলোচনায় এসেছে।
উল্লেখ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্ট বাংলাদেশ খেলবে সিলেট ও চট্টগ্রামের মাঠে। প্রথম টেস্টটি শুরু হবে এপ্রিল ২০ থেকে, যেটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেটে। নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়ক করে সে দলের ১৫ সদস্যে নতুন চমক হিসেবে আছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। অন্যদিকে দ্বিতীয় টেস্টটি হবে চট্টগ্রামের মাটিতে। তবে এই সিরিজটির সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ৬৪ জেলায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
সৈয়দ সামি প্রস্তাব দিয়েছেন, সম্প্রচার স্বত্ব থেকে ২০% বা ৫০% অর্থ যদি গাজায় পাঠানো যায়, তাহলে সেটিও হবে এক শক্ত বার্তা। এ উদ্যোগ শুধু মানবিক নয়, সম্প্রচারকারীদের সিএসআর এবং ব্র্যান্ড রেপুটেশনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাকিস্তানের পিএসএলে যেমন মুলতান দল ছক্কা বা উইকেটের বিপরীতে ডোনেশনের ব্যবস্থা করেছিল, তেমনি বাংলাদেশও হতে পারে এই ধারার পথিকৃৎ।আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী, চ্যারিটি বা ফান্ড রেইজিং বৈধ। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বার্তা মাঠের ভেতরে নিষিদ্ধ হলেও, টিকিট বিক্রি বা সম্প্রচারের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয় বিসিবির এখতিয়ারেই পড়ে। তাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধাও থাকার কথা নয়।সবশেষে, এটা শুধু ক্রিকেট নয়—এটা হতে পারে আমাদের জীবনের জয়গান। এমন একটি সময়, যখন খেলাধুলার মাঠ থেকেও মানবতা ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি, তখন এই সিরিজটি হয়ে উঠতে পারে ইতিহাসের অংশ। বিসিবি যদি সাহস করে এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ক্রিকেট কেবল একটি খেলা থাকবে না—তা হয়ে উঠবে আশার আলো, হয়ে উঠবে ভালোবাসার ভাষা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ যদি গা’জাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর সেতু হয়ে ওঠে, তাহলে সেটি কেবল একটি খেলা নয়—একটি জাতির বিবেকের প্রতিফলন হয়ে থাকবে। মাঠের স্কোরবোর্ডের বাইরেও যে মানবতার জয় সম্ভব, তা প্রমাণ করতে এই উদ্যোগ হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম গর্বের অধ্যায়। এখন সময় বিসিবির—ক্রিকেটকে কেবল খেলায় নয়, আশার এক বাতিঘরে রূপ দেওয়ার।