মোনাকোর রোদ-বৃষ্টির টানাপোড়েন, চোটে জর্জরিত প্রতিপক্ষ, আর ক্লে কোর্টের প্রতিটি পায়ের ছাপ— সবকিছু ছাপিয়ে কার্লোস আলকারাজ যেন আবারও জানিয়ে দিলেন, তিনিই ভবিষ্যতের রাজা। প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে ফিরে এসে ইতালিয়ান লরেঞ্জো মুসেত্তিকে হারিয়ে মন্টে কার্লো মাস্টার্সের শিরোপা তুলে নিলেন এই ২১ বছর বয়সী স্প্যানিয়ার্ড।
প্রথম সেটে আলকারাজকে যেন চিনতেই পারা যাচ্ছিল না। একের পর এক আনফোর্সড এরর, শুধু ফোরহ্যান্ড থেকেই ১১টি ভুল—এসব যেন তার নামের পাশে বেমানান। সুযোগটা লুফে নেন মুসেত্তি। একদিকে নিখুঁত প্লেসমেন্ট, অন্যদিকে বেজায় ধারালো ড্রপ শট— এক কথায় চমকপ্রদ। প্রথম সেট জিতে ফেলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শাস্তি বেড়ে দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা হৃদয়ের
কিন্তু দ্বিতীয় সেট থেকেই যেন জেগে ওঠেন আলকারাজ। মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে ‘ভামোস’ চিৎকার, গ্যালারির প্রতি হাত তোলা, ব্যাকহ্যান্ড উইনার— সব কিছু মিলিয়ে যেন সেই চেনা আগ্রাসী রূপে ফিরলেন তিনি। একের পর এক পাঁচটি গেম জিতে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসেন। মুসেত্তি তখনও লড়ছিলেন, তৈরি করেছিলেন পাঁচটি ব্রেক পয়েন্ট, কিন্তু আলকারাজ কোনো কিছুকেই পাত্তা দিলেন না। আট মিনিটের এক মহাকাব্যিক গেম জিতে দ্বিতীয় সেট নিজের করে নিলেন।
তবে তৃতীয় সেটে নাটকীয়তা বদলে গেল চূড়ান্ত হতাশায়। মুসেত্তির ডান পায়ে চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে তিনি চলাফেরা করতেই পারছিলেন না। ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর চিকিৎসা নিলেও ফিরে আসতে পারেননি ছন্দে। আলকারাজ তখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করে উড়িয়ে দিলেন প্রতিপক্ষকে। ম্যাচ শেষে জয়ের উল্লাসের মাঝেও মুসেত্তিকে কাছে টেনে সান্ত্বনা জানালেন, যা ভক্তদের চোখেও এনে দেয় আবেগঘন মুহূর্ত।
এই জয়ে আলকারাজ শুধু ছয় নম্বর মাস্টার্স ১০০০ শিরোপাই জেতেননি, বরং চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন, সরিয়ে দিয়েছেন জার্মানির আলেকজান্ডার জভেরেভকে।
শেষ ১৩ মাসে এটিই তার প্রথম মাস্টার্স জয়। গতবার তিনি জিতেছিলেন ইন্ডিয়ান ওয়েলস, আর এবার মন্টে কার্লো। একইসাথে এটি তার ক্যারিয়ারের ১৮তম একক শিরোপা।
ম্যাচ শেষে আলকারাজ বলেন, “এই সপ্তাহটা আমার জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। কোর্টের ভেতর আর বাইরে অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে। কিন্তু নিজের ওপর গর্ব হচ্ছে যে সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করে শিরোপা জিতেছি।”
আরও পড়ুন: জয় দিয়ে লিগপর্ব শেষ করলো অগ্রণী-গাজী-পারটেক্স
এছাড়া প্রতিপক্ষের সুস্থতা কামনা তিনি আরও জানান, “মুসেত্তির জন্য খারাপ লাগছে। এত দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট খেলার পর এমনভাবে শেষটা কেউ চায় না। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরবে।”
মুসেত্তির জন্যও এই টুর্নামেন্ট ছিল স্মরণীয়। প্রথমবারের মতো মাস্টার্স ১০০০ ফাইনালে উঠেছেন, এই পথে হারিয়েছেন সেভেন টেনিসের তারকা স্টেফানোস চিচিপাস ও অ্যালেক্স ডি মিনরকে। ২৩ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান উঠছেন ক্যারিয়ার সেরা ১১ নম্বরে। চোট না পেলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারত।
তবে দিন শেষে জয় এবং রাজত্ব কার্লোস আলকারাজের। মোনাকোর মাটিতে এই জয়ের বার্তা বলে দেয়, রেড ব্রিকের রাজপুত্র এখন পূর্ণ রাজা হওয়ার পথে।
পরবর্তী গন্তব্য— মাদ্রিদ। সেখানে ঘরের মাঠে আবারো ক্লে কোর্টে ঝড় তুলতে মুখিয়ে স্পেনের এই বিস্ময়বালক।