প্রথম বাংলাদেশি এবং ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে সাইকেলসহ নেপালের অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে (এবিসি) সামিট করেছেন বাংলাদেশের সাইক্লিস্ট তোজাম্মল হোসেন মিলন। বুধবার (২ এপ্রিল) নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ছয়টায় সাইকেলসহ এবিসিতে পৌঁছান মিলন। সেই সাথে একই যাত্রায় সাইকেলের প্যাডেলে চেপে তিলিচো লেক, থরং লা পাস, অন্নপূর্ণা সার্কিট এবং অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে পৌঁছে বিশ্বরেকর্ডও গড়েন বাংলার এই সাইক্লিস্ট।
আরও পড়ুন: হামজার দেখানো পথেই বাংলাদেশে ইংল্যান্ড প্রবাসী মতিন
১৭ মার্চ যাত্রা শুরু করা মিলন বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার হ্রদ তিলিচো লেকে পৌঁছান ২১ মার্চ। সেখান থেকে বাংলাদেশের এই সাইক্লিস্টের গন্তব্য ছিলো থরোং লা পাস। ৫৪১৬ মিটার উঁচুতে থাকা বিশ্বের অন্যতম এই উঁচু পাসে মিলন পৌঁছেছেন ২৬ মার্চে। তার তিন দিন পরেই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ট্র্যাকিং রুট অন্নপূর্ণা সার্কিটে পা রাখেন মিলন। নিজের শেষ গন্তব্যস্থল অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে গত বুধবার সামিট করেছেন বাংলাদেশের এই সাইক্লিস্ট।

নিজের ফেসবুক একাউন্টে করা এক পোস্টে মিলন জানান, “আলহামদুলিল্লাহ! বিশ্ব রেকর্ড! আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথম বাংলাদেশি এবং বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে সাইকেল নিয়ে সামিট করেছি! আজ নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৬:১৫-এ আমি সাইকেলসহ এবিসিতে পৌঁছাই, যা আমার জীবনের অন্যতম বড় অর্জন।”
আরও পড়ুন: স্যামসন ফেরায় নেতৃত্বের ভার থেকে মুক্ত পরাগ
দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে সামিট করলেও একই অভিযানে চারটি আলাদা গন্তব্যে পৌঁছানো প্রথম ব্যক্তি মিলন। নিজের পোস্টে এই নিয়ে মিলন লেখেন, “একই অভিযানে আমি তিলিচো লেক, থরং লা পাস, সম্পূর্ণ অন্নপূর্ণা সার্কিট এবং অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প সাইকেলে সম্পন্ন করেছি, যা আমাকে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই চারটি চূড়ান্ত গন্তব্য সাইকেলে সম্পন্ন করার অনন্য রেকর্ড এনে দিয়েছে! এটি শুধু আমার জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও এক নতুন ইতিহাস!”

নিজের এই অনন্য অর্জন মেয়ে মানহার নামে উৎসর্গ করেছেন মিলন। তিনি জানান, “এই অসাধারণ অর্জন আমি আমার প্রিয় মেয়ে মানহার নামে উৎসর্গ করছি। সে হয়তো এখন বুঝবে না, কিন্তু একদিন যখন জানবে, তখন হয়তো বাবার এই স্বপ্ন, সংগ্রাম ও অর্জন তার অনুপ্রেরণার উৎস হবে।। এই অভিযানের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল চ্যালেঞ্জিং, তবে আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আপনাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!”
আরও পড়ুন: ফাইনালে রিয়াল-বার্সা, ইপিএলে জয় পেলো ম্যানসিটি-লিভারপুল
গাজীপুরের জয়দেবপুরে বেড়ে ওঠা তোজাম্মল হোসেন ছোটবেলা থেকেই সাইকেল চালাতেন শখের বশে। তবে এই শখ এক সময় রূপ নেয় অদ্ভুত এক নেশায়। দুই চাকার এই যানে প্যাডেল চেপে দুনিয়া জয় করার স্বপ্নটাও দেখতে শুরু করেন তখন থেকেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করা মিলন বর্তমানে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শিক্ষকতা করছেন।

২০১৮ সালে খারদুংলা পাস অভিযান করে প্রথম বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন মিলন। সেবার টেকনাফ থেকে লাদাখের ৭০ দিনের ট্রিপে মিলন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮ হাজার ৩৮০ ফুট উচ্চতায় উঠেছেন শুধু মাত্র প্যাডেলে চেপে। আর এবার সেই কীর্তির প্রায় সাত বছর পর আবারো প্রিয় সেই বাহন নিয়ে আরো এক বিশ্বরেকর্ডে নিজের নাম লেখালেন তোজাম্মল হোসেন মিলন।