বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

হামজার মহারণে আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় জয় হাতছাড়া

ম্যাচের আগেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন হামজা চৌধুরী। ইংলিশ লিগে খেলা এই মিডফিল্ডার ভারতের বিপক্ষে কেমন খেলেন, তা নিয়ে ছিল কৌতূহল। তবে মাঠে নেমে সে প্রশ্নের জবাব যেন নিজেই দিয়ে দিলেন। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে না থাকলেও খেলায় নেতৃত্ব দিলেন হামজাই।

অভিষেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠলেন তিনি। তার অবিশ্বাস্য রক্ষণাত্মক দৃঢ়তায় ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। তবে ফরোয়ার্ডরা একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া না করলে হয়তো জয় দিয়েই অভিষেক উদযাপন করতে পারতেন হামজা।

আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে একাদশে হামজা, নেই জামাল ভূঁইয়া

শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল বাংলাদেশ। তবে সেই পুরনো গল্প—এক গাদা সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয়েছে দলকে।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই ভারতের গোলরক্ষক ভিশাল কাইথের ভুলে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন মিডফিল্ডার জনি। কিন্তু পোস্ট ফাঁকা পেয়েও নেটের বাইরে শট নিয়েছেন তিনি। শুরুতেই এই গোল হলে ম্যাচের গতিপথ বদলে যেত। এরপর আরও একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১১ মিনিটের মধ্যেই দুটি গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছিল দল, কিন্তু ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছে ফরোয়ার্ডদের।

অন্যদিকে, ভারতের জন্য ঢাল হয়ে ছিলেন হামজা চৌধুরী। ইউরোপের সেরা ফুটবল লিগে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিলংয়ের কঠিন আউটফিল্ডেও নিজের জাত চেনালেন তিনি। যেখানে ভারতীয় ফুটবলাররা ঘাসের মাঠে স্লিপ করে পড়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে একাই বারবার ছেত্রীদের আক্রমণ থামিয়েছেন হামজা।

আরও পড়ুন: হামজা এশিয়ার সম্পদ, বললেন ভারতের কোচ

অধিনায়কের আর্মব্যান্ড না থাকলেও পুরো মাঠজুড়েই যেন নেতা হয়ে খেলেছেন হামজা। এই বক্স থেকে ওই বক্স—তার নিরলস দৌড়, বল কভারেজ ও প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করার দৃঢ়তা আলাদা করে চোখে পড়েছে। সেট-পিস, কর্নার কিংবা থ্রো-ইন—দলের সবকিছুতেই ছিলেন তিনি।

ডিফেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করেছেন হামজা। শুধু বল কেড়ে নেওয়াই নয়, রক্ষণ থেকে আক্রমণ তৈরিতেও রেখেছেন দারুণ ভূমিকা। ১৩ মিনিটে যখন শাকিল তপু ফাউলের কারণে রেফারির সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেন, তখনই তাকে থামিয়ে দেন হামজা। জানতেন, রেফারির সঙ্গে অতিরিক্ত কথা বললেই বিপদ হতে পারে দলের জন্য।

প্রথমার্ধে বাংলাদেশের প্রেসিং ফুটবলের সামনে ভারত দিশেহারা ছিল। ফাইনাল থার্ডে সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগালে প্রথমার্ধেই বড় লিড নিতে পারত দল। তবে গোলশূন্য ড্র-ই ছিল দুই দলের প্রথমার্ধের সমাপ্তি।

দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশের প্রাণ ছিলেন হামজা চৌধুরী। ভারতের লিস্টন কোলাসো ড্রিবল করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন গোলের দিকে, কিন্তু নিখুঁত ট্যাকলে তাকে আটকে দেন হামজা। কর্নার থেকে ছেত্রীর নেওয়া হেডার ব্লক করেন কাঁধ দিয়ে—এক ইউরোপিয়ান লিগের খেলোয়াড়ের মতোই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তিনি।

তবে শেষ পর্যন্ত ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় জয় পায়নি বাংলাদেশ। গোলশূন্য ড্র নিয়েই এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ করেছে দল। তবে একজন হামজা চৌধুরী যেন জানিয়ে দিলেন—বাংলাদেশের ফুটবলে তার ইতিহাস রচনার শুরুটাই হলো দুর্দান্ত।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর