ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরিচিত মুখ হামজা চৌধুরী এখন বাংলাদেশের। আর তার বাংলাদেশে পাড়ি জমানোর পর থেকেই বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররাও লাল-সবুজের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আসছেন আরও দুই তরুণ ফুটবলার—কাদির আব্দুল ও এলমান মতিন।
আগামী অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে জাতীয় দলের ট্রায়ালে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসছেন তারা। কাদির আব্দুল আসছেন ইতালি থেকে, আর এলমান মতিন আসছেন ইংল্যান্ড থেকে। ইতালির চতুর্থ স্তরের সিরি ডি লিগের ক্লাব ফারমানা এফসির অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছেন কাদির আব্দুল। তার স্বাভাবিক পজিশন লেফট উইং, তবে মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলতে পারেন। ইতালির প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে বেড়ে ওঠা এই তরুণ এখন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কাদির আব্দুল, ইতালির সিরি ডি লিগে খেলছি। খুব শীগ্রই বাংলাদেশে আসছি। আশা করি, সবার সাথেই দেখা হবে।’
অন্য দিকে এলমান মতিন খেলছেন ইংল্যান্ডের তৃতীয় স্তরের ক্লাব চার্লটন অ্যাথলেটিকের কলেজ দলের হয়ে। ইংল্যান্ডের ফুটবল কাঠামোর মধ্যে বেড়ে ওঠা এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পেতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশে আসার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি চার্লটন অ্যাথলেটিকের কলেজ দলের হয়ে খেলছি। আমার বয়স ১৭ বছর। আমি সিডিএম পজিশনে খেললেও দলের প্রয়োজনে বিভিন্ন পজিশনে খেলতে পারি। হোক সেটা রাইট উইং ব্যাক কিংবা লেফট উইং। খুব শীগ্রই বাংলাদেশে আসছি। ইচ্ছা আছে লাল-সবুজের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করার।’
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসবেন কাদির ও এলমান। বাফুফের ট্রায়ালে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে তারা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার সুযোগ পাবেন। এর আগে আরহাম, ইউসুফ, নবাবরা বয়সভিত্তিক দলে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তারা টিকে থাকতে পারেননি। এবার দেখা যাক, কাদির ও এলমান নিজেদের অবস্থান পাকা করতে পারেন কিনা।
এদিকে, জাতীয় দলে হামজা চৌধুরীর পাশাপাশি আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলাম এবারের ভারত সফরের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন। তিনি সৌদি আরবে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পেও অংশ নেন, তবে শেষ মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কোচিং স্টাফ জানিয়েছে, আপাতত বয়সভিত্তিক দলে তার সুযোগ বেশি। তবে জুনে বাংলাদেশের ম্যাচে তাকে আবারও সুযোগ দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, দেশের মাটিতে তার অভিষেকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
ফাহমিদুলও ইতালির চতুর্থ স্তরের লিগে খেলে থাকেন। তিনি ওলবিয়া কালসিওর হয়ে নিয়মিত মাঠে নামেন এবং ইতোমধ্যে ইতালির ফুটবলে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় দলে হামজার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলার খেলছেন। তাদের মধ্যে আছেন তারেক কাজি, কাজেম শাহ ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। জামাল ভূঁইয়া ছিলেন সেই পথিকৃৎ, যিনি প্রথম প্রবাসী হিসেবে জাতীয় দলে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেন। তার হাত ধরেই শুরু হয় প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশ দলে আসার ধারা।
তবে ইংল্যান্ড থেকে হামজা চৌধুরীর আগমনের পর এই গণজাগরণ যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। বছরখানেক আগে জামাল ভূঁইয়া যে পথ দেখিয়েছিলেন, এবার আরও ব্যাপকভাবে সেই পথ প্রসারিত করেছেন বর্তমানে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা এই মিডফিল্ডার। এবার দেখার পালা—এই ফুটবলারদের হাত ধরে বাংলাদেশের ফুটবলে সত্যিই কোনো পরিবর্তন আসে কিনা!