দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দ্বৈরথ মানেই উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর টানটান নাটকীয়তা। তবে এবারের লড়াইয়ে কোনো নাটক ছিল না—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্জেন্টিনার হাতে। লিওনেল স্কালোনির দল ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ব্রাজিলকে, তাও মেসিকে ছাড়াই!
ম্যাচের প্রথম ১২ মিনিটেই দুই গোল, প্রথমার্ধে ব্রাজিলের জালে আর্জেন্টিনা বল জড়িয়েছে মোট ৩ বার। এই ম্যাচের নায়ক হুলিয়ান আলভারেজ, এঞ্জো ফার্নান্দেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার ও বদলি হিসেবে নেমে গোল করা জিউলিয়ানো সিমিওনে। ব্রাজিলের একমাত্র সান্ত্বনার গোল এসেছে মাথিয়াস কুনহার পা থেকে।

আরও পড়ুন: হামজার মহারণে আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় জয় হাতছাড়া
ঘরের মাঠে ছিলেন না লিওনেল মেসি, চোটের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ ও পাওলো দিবালাও। তবু আর্জেন্টিনা কোনো দুর্বলতার ছাপ দেখায়নি। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আরও একবার বুঝিয়ে দিল, তারা দল হিসেবে কতটা শক্তিশালী।
ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই হুলিয়ান আলভারেজ গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। আট মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ। ব্রাজিল তখনও ছন্দ খুঁজে পায়নি, বলের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিতে পারছিল না। তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের ভুলেই প্রথমবারের মতো ম্যাচে নিজেদের খুঁজে পায় সেলেসাওরা। ২৬তম মিনিটে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার রোমেরোর ভুল কাজে লাগিয়ে মাথিয়াস কুনহা গোল করে ব্রাজিলকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন। তবে ৩৭তম মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টারের দুর্দান্ত গোল আবারও ব্রাজিলের সব আশা নিভিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল কোচ দরিভাল একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন। এন্ড্রিক, হোয়াও গোমেজ ও লিও ওর্তিজকে মাঠে নামিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তবে ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনাকে গুড়িয়ে দেওয়ার হু’ঙ্কার তোলা রাফিনহা ছিলেন নিষ্প্রভ, রদ্রিগো-ভিনিসিয়াস ছিলেন ছায়ার মতো। আক্রমণে ধারহীন ব্রাজিলকে রক্ষণেও দুর্বল মনে হয়েছে।
৭১তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা জিউলিয়ানো সিমিওনে তালিয়াফিকোর ক্রস থেকে গোল করে স্কোরলাইন ৪-১ করেন। এই গোলের পর পুরোপুরি ভেঙে পড়ে ব্রাজিল। শেষ দিকে গোল শোধের চেষ্টা করলেও একবারও আর্জেন্টিনার গোলরক্ষককে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা।
আরও পড়ুন: ম্যাচটা জেতা উচিত ছিলো: হামজা
এই জয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শীর্ষস্থান আরও শক্ত করল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, ব্রাজিলের জন্য এটি একেবারে ভুলে যাওয়ার মতো ম্যাচ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে এটি তাদের অন্যতম বড় হার। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে তারা চার গোল হজম করল।

অন্য দিকে এই হারের পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের অবস্থান আরও অনিশ্চিত হয়ে গেল। একসময় যাদের বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়ম ছিল, এবার তাদেরই পড়তে হতে পারে কঠিন পরীক্ষার মুখে। ১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা বাছাইপর্বের শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা। ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইকুয়েডর, ২১ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উরুগুয়ে। সমান ২১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ব্রাজিল।