জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ওঠার লড়াই। শনিবার (১০ মে) ম্যানচেস্টার সিটি ড্র করার পর নিউক্যাসেল কিংবা চেলসির সামনে সুযোগ ছিলো টেবিলের তিনে ওঠার। সেই কাজটাই যেন করলো নিউক্যাসেল, উঠে এলো তিন নম্বরে। এদিকে ইউরোপা লিগের ফাইনালে উঠলেও প্রিমিয়ার লিগে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহ্যাম। রবিবার (১১ মে) হেরেছে দুই দলই। তাছাড়া টেবিল টপার লিভারপুল ও আর্সেনালের ম্যাচ শেষ হয়েছে নিষ্পত্তি ছাড়াই।
চার ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ শিরোপা নিজেদের নামে করে নেয় লিভারপুল। তবে এরপরই যেন শুরু হয়েছে ছন্দপতন। প্রথমে চেলসির কাছে ৩-১ গোলে হারের পর এবার টেবিলের দুইয়ে থাকা আর্সেনালের সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি করলো আর্নে স্লট শিষ্যরা। নিজেদের ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে এদিন মিকেল আর্তেতার দলের কাছ থেকে গার্ড অফ অনার পায় অলরেডরা।
আরও পড়ুন: সালমানের চিকিৎসা করাবে বিসিবি
ম্যাচের শুরু থেকেই অবশ্য দাপট ছিলো স্বাগতিকদের। প্রথমার্ধেই দুই গোলের দেখা পেয়ে একপেশে এক লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছিলো সালাহ-ভ্যান ডাইকরা। ম্যাচের ২০ মিনিটেই গোলের দেখা পায় স্বাগতিক লিভারপুল। অ্যান্ডি রবার্টসনের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান কোডি গ্যাকপো। পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুইস ডিয়াজ। ডি-বক্সের ভেতর থেকে তার নেওয়া শট ঠেকানোর উপায় ছিলো না আর্সেনাল গোলরক্ষক ডেভিড রায়ার।

২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বেশ স্বস্তিতেই বিরতিতে যায় লিভারপুল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য নড়েচড়ে বসে আর্সেনাল। দ্বিতীয়ার্ধে, ৪৭তম মিনিটে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি লিয়ান্দ্রো ট্রোসার্ডের ক্রস থেকে হেড করে গোল করেন। এক গোল পরিশোধ করে যেন আরো মরিয়া হয়ে ওঠে আর্সেনাল। একের পর এক আক্রমণে কোনঠাসা করতে থাকে লিভারপুলের রক্ষণভাগকে। ৭০তম মিনিটে অবশ্য গোলের দেখাও পেয়ে যায় সফরকারীরা। মার্টিন ওডেগার্ডের শট লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বাঁচালেও, বল ফিরে পেয়ে মিকেল মেরিনো গোল করে সমতা ফেরান আর্সেনালকে।
যদিও ৭৯ মিনিটে বিপদট আরো বাড়িয়ে দেন সেই মেরিনোই। বাজে এক ফাউলের জেরে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। দশ জন নিয়ে বাকি সময় খেলতে হয় আর্সেনালকে। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে গোলের দেখা পায় লিভারপুল। আর্সেনালের জালে বল জড়ান লিভারপুল ডিফেন্ডার অ্যান্ডি রবার্টসন। তবে আক্রমণের শুরুতে এক ফাউলের কারণে বাতিল হয় লিভারপুলের গোল। ২-২ গোলের সমতা নিয়েই ম্যাচ শেষ করে টেবিলের দুই টপার। এই জয়ে ৩৬ ম্যাচে ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার উপরে লিভারপুল। সমান সংখ্যক ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান আর্সেনালের।
আরও পড়ুন: পিএসএলের পর স্থগিত পাকিস্তানের ঘরোয়া টুর্নামেন্টও
এদিকে ইউরোপা লিগে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে যেন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। নিজেদের ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১৮ বছর পর ওয়েস্ট হ্যামের কাছে ম্যাচ হারতে হলো রেড ডেভিলদের। ওল্ড ট্রাফোর্ডে একের পর এক আক্রমণ চালালেও এদিন গোল করার মূল কাজটাই করতে পারেনি আমোরিমের দল। সফরকারী ওয়েস্ট হ্যামের কাছে ম্যাচ হেরেছে ২-০ গোলে।

প্রথমার্ধেই গোলের দেখা পান টমাস সুচেক। নিজেদের মধ্যে দারুণ পাসিংয়ে বল জালে জড়ান ওয়েস্ট হ্যামের এই ফুটবলার। মোহাম্মদ কুদুসের এসিস্ট থেকে বা পায়ে বল জালে জড়ান সুচেক। প্রথমার্ধে স্বাগতিক ম্যানইউর বিপক্ষে একচ্ছত্র দাপট দেখাতে থাকে সফরকারীরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ঠিকই নিজেদের চিরচেনা ছন্দে ফিরে আসে স্বাগতিকরা। যদিও স্রোতের বিপরীতে উল্টো গোলের দেখা পায় ওয়েস্ট হ্যাম।
৫৭তম মিনিটে জ্যারড বোয়েন ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। মোহাম্মদ কুদুস সামনে বল বাড়িয়ে এক শট নিলেও তার শট ডিফ্লেক্টেড হয়ে অ্যারন ওয়ান বিসাকার সামনে পড়ে। তারই পাসে দ্বিতীয় গোল করে দলের লিড আরো সুসংহত করেন বোয়েন। দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময় গোলের ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে থাকে স্বাগতিকরা। শুধু দ্বিতীয়ার্ধেই পনেরোটি শট নিয়েও শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পায়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ফলে ২-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আমোরিম শিষ্যদের। এই হারে ৩৬ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১৬ নম্বর অবস্থানে আছে ইউনাউটেড। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে এক পয়েন্ট বেশি পাওয়া ওয়েস্ট হ্যামের অবস্থান এক ধাপ উপরে ১৫ নম্বরে।
আরও পড়ুন: ৩ বছর আগেই বাংলাদেশের কোচ হতে আগ্রহী ছিলেন টেইট
এদিকে ম্যানইউর মতো কপাল পুড়েছে ইউরোপা লিগের আরেক ফাইনালিস্ট টটেনহ্যামের। নিজেদের ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ম্যানইউর মতো ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছে স্বাগতিক টটেনহ্যাম হটস্পার। এবেরেচি এজের জোড়া গোলে এবারের লিগে ২০তম বারের মতো হারের মুখ দেখলো স্পার্সরা। সবশেষ ৬ এপ্রিল লিগে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো দলটি। এরপর থেকে খেলা পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টটেনহ্যামকে।

এদিন সফরকারী ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে বিন্দুপাত্র পাত্তাই পায়নি স্বাগতিক স্পার্সরা। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক ডিফেন্সকে নাচিয়ে ছেড়েছে প্যালেস। পুরো ম্যাচে মোট ২৩টি শট নেয় সফরকারীরা, যার মধ্যে আবার ১০টিই লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা। অন্যদিকে স্বাগতিক টটেনহ্যামের নেয়া ৮ শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র ১টি শট।
ম্যাচের দুই অর্ধেই একটি করে গোল করেন এবেরেচি এজে। প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে এসে গোলের দেখা পান এজে। ৪৫ মিনিটে দলকে এগিয়ে নিয়ে বিরতে যান এই উইঙ্গার। এরপর ৪৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান আরো বাড়িয়ে দেন এজে। চলতি মৌসুমে ৩২ ম্যাচে ৭ গোল ও ৮ অ্যাসিস্ট করেছেন এই উইঙ্গার। এই জয়ে ৩৬ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে ১২ নম্বরে এসেছে ক্রিস্টাল প্যালেস। অন্যদিকে ৩৬ ম্যাচে মাত্র ৩৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করা টটেনহ্যাম রয়েছেন রেলিগেশন জোনের ঠিক ওপরে, ১৭ নম্বরে।
আরও পড়ুন: আইপিএল বাতিল হলে ক্ষতির মুখে কয়েকশো কোটির অর্থনীতি
এদিকে ইংল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী মৌসুমে কারা খেলবে সেই লড়াইটা জমিয়ে তুলেছে নিউক্যাসেল। রবিবার (১১ মে) সেন্ট জেমস পার্কে চেলসির বিপক্ষে ২-০ গোলের গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়েছে এডি হাওয়ের দল। এই জয়ে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে উঠে এসেছে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড।

নিজেদের ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় নিউক্যাসেল। ২ মিনিটে জ্যাকব মারফির নিচু ক্রস থেকে গোল করে নিউক্যাসলকে এগিয়ে দেন স্যান্ড্রো টোনালি। ৩৫তম মিনিটে চেলসির ফরোয়ার্ড নিকোলাস জ্যাকসন বটম্যানকে কনুই দিয়ে আঘাত করলে প্রথমে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। তবে ভিএআরের সাহায্যে সেটিকে পরে লাল কার্ডে রূপান্তরিত করলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় চেলসি।
দশ জনের দল নিয়েও দ্বিতীয়ার্ধে চেলসি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে চেলসি। তবে নিউক্যাসলের গোলরক্ষক নিক পোপ দুর্দান্ত সেভ করে বাঁচান দলকে। উল্টো ম্যাচের ৯০তম মিনিটে ড্যান বার্নের পাস থেকে ব্রুনো গুইমারায়েসের শট চেলসির রক্ষণের গায়ে লেগে গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজকে ফাঁকি দিয়ে জালে প্রবেশ করে, আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় নিউক্যাসলের জয়।
আরও পড়ুন: ভূটানকে হারিয়ে সাফের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ
এই জয়ে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে নিউক্যাসেল। অন্যদিকে চেলসি ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। নিউক্যাসলের বাকি দুটি ম্যাচ আর্সেনাল ও এভারটনের বিপক্ষে, যেখানে একটি জয়ই তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা নিশ্চিত করতে পারে। অন্যদিকে এই হার চেলসির জন্য বেশ বড় এক ধাক্কা। কেননা তাদের বাকি দুটি ম্যাচ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে, যেখানে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই এনজো মারেসকার দলের সামনে।