রেফারি বিতর্কে ম্যাচ শুরুর আগেই এল ক্লাসিকোর উত্তাপ টের পেয়েছিলো ফুটবল বিশ্ব। সেই উত্তাপের জেরে দ্বন্দ্ব লেগেছিলো দুদলের সমর্থকদের মাঝেও। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিলো এবারের এল ক্লাসিকো হতে চলেছে একটু বেশিই স্পেশাল।
আরও পড়ুন: আবারও নিষেধাজ্ঞার কবলে তাওহীদ হৃদয়
শেষ পর্যন্ত মাঠের খেলাতেও সেই আভাসই যেন সত্যি হলো। ক্লাসিকো মানেই যে চরম নাটকীয়তা সেটারও প্রমাণ মিললো খেলার মাঠেই। প্রথমার্ধে রিয়ালের অসহায় আত্মসমর্পণের পর দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় আনচেলোত্তি বাহিনী। তবে তখনো নাটকের বাকি বেশ অনেকটাই। ফেরান তোরেসের গোলে সমতায় ফেরা বার্সা ১১৬ মিনিটে জয় পায় জুলস কুন্দের গোলে। কামব্যাক কিং রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই রাজকীয় কামব্যাকে ৩২ তম কোপা দেল রের শিরোপাটা নিজেদের ঘরে নেয় পেদ্রি-লামিনে ইয়ামালরা।

সেভিয়ার লা কার্তোহা স্টেডিয়ামে এদিন শুরু থেকেই দাপট ছিলো বার্সার। গোলের দেখাটাও তাই আগেই পায় ফ্লিক শিষ্যরা। প্রথমার্ধে ২৮ মিনিটে পেদ্রির দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় কাতালনরা। ইয়ামালের পাসে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের নিখুঁত শটে বল জালে জড়িয়ে দেন তরুণ তারকা পেদ্রি। প্রথমার্ধে রিয়াল কার্যত ছিল ছন্নছাড়া। তাদের আক্রমণভাগ ছিল নিষ্প্রভ, রক্ষণেও দেখা গেছে অগোছালো ভাব। বার্সার ৯ শটের বিপরীতে রিয়াল শট নেয় মাত্র একটি।
আরও পড়ুন: আবাহনী-মোহামেডান লড়াই হতে পারে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ
তবে বিরতির পর বদলে যায় পুরো ম্যাচের চিত্র। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুতেই বদলি খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালকে জীবন ফেরান। ৭০ মিনিটে তার ফ্রি-কিক থেকে গোল করে সমতা ফেরায় রিয়াল। সাত মিনিট পর কর্নার থেকে চুয়ামেনির হেডে এগিয়ে যায় লস ব্লাঙ্কোসরা। তখন মনে হচ্ছিল, বার্সেলোনার জন্য আর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। কিন্তু বার্সা আবারও দেখিয়ে দেয় তাদের অদম্য মানসিকতা। ৮৪ মিনিটে ইয়ামালের দারুণ পাস থেকে ফেরান তোরেস গোলকিপার কোর্তোয়ার পাশ কাটিয়ে বল জালে জড়ান। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-২।

নির্ধারিত সময়ে ফলাফল মীমাংসিত না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সবাই যখন পেনাল্টি শুটআউটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন ১১৬ মিনিটে আসে ম্যাচের জয়সূচক গোল। রিয়ালের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ বক্সের কিছুটা ভুল পাস করেন। সেই বল নিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে জুলস কুন্দে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে জালে পাঠিয়ে দেন। ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।
আরও পড়ুন: বিজয়-মুস্তাফিজদের নিয়ে ‘এ’ দলের স্কোয়াড ঘোষণা
তবে নাটকীয়তার তখনো বাকি ছিল কিছুটা। শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দেড়েক আগে (১২৩ মিনিটে) রেফারিং সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। এমবাপ্পে ফাউল আদায়ে ব্যর্থ হলে রিয়াল বেঞ্চ থেকে প্রতিক্রিয়া আসে। রুডিগার বেঞ্চ থেকে উঠে এসে রেফারির দিকে তেড়ে যান। সতীর্থরা আটকে রাখলেও রেফারি রুডিগারকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। এরপর লুকাস ভাসকেজও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।

এদিকে এই জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা এ মৌসুমে তিনটি ক্লাসিকোতেই রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করল। অক্টোবরে লিগে ৪-০, জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপে ৫-২ এবং এবার কোপা দেল রে ফাইনালে ৩-২ ব্যবধানে। তিন ম্যাচে মোট ১২ গোল করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল বার্সা।
আরও পড়ুন: নাসুমের কল্যাণে শিরোপার লড়াইয়ে টিকে রইলো মোহামেডান
কোপা দেল রে জয় বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের জন্য প্রথম বড় ট্রফি। যদিও জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপও জিতেছে বার্সা, তবে ঐতিহ্যগত গুরুত্বের দিক থেকে কোপা দেল রে অনেক বড়। তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে ফ্লিকের পরিকল্পনা এবার সফল প্রমাণিত হয়েছে। ইয়ামাল, পেদ্রি, ফেরান তোরেসরা মাঠে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে আগেই বাদ পড়া রিয়াল মাদ্রিদ এখন লা লিগা শিরোপার জন্যও হুমকির মুখে। বার্সেলোনা এখন লিগ টেবিলে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে। এই পরাজয়ের পর কোচ কার্লো আনচেলত্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। মৌসুম শেষে তার সঙ্গে রিয়ালের সম্পর্ক থাকছে কি না, সেটা নিয়েও সৃষ্টি হওয়া গুঞ্জনে পালে এই পরাজয় নতুন হাওয়া লাগিয়েছে তা বলাই যায়।