বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

বার্সার হোঁচট খাওয়ার দিনে জিতলো রিয়াল

আগের ম্যাচেই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসপানিওলকে হারিয়ে লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। জিতে নিয়েছে ঘরোয়া ট্রেবল। এমন অভাবনীয় সাফল্যের পর বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে ট্রফি প্যারেডও করেছে কাতালান ক্লাবটি। তবে ট্রফি জয়ের পরের ম্যাচেই অবশ্য লিগে বছরের প্রথম হার কপালে জুটলো বার্সার। ঘরের মাঠে পাঁচ গোলের থ্রিলারে কাতালান ক্লাবটি হেরেছে ৩-২ ব্যবধানে। এদিকে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। নয় জনের সেভিয়াকে হারিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।

আরও পড়ুন: ব্যর্থ সাকিব, তবুও জয় লাহোরের

বার্সার জন্য ম্যাচটি নিছকই আনুষ্ঠানিকতা হলেও ভিলারিয়ালের জন্য ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দলটি আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারবে কি না তা অনেকটাই নির্ভর করছিলো এই ম্যাচের ফলাফলের উপর। ফলে ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিকদের চাপে রাখার চেষ্টা করে ভিলারিয়াল। গোলের দেখা পেতেও অবশ্য খুব একটা সময় ক্ষেপণ হয় সফরকারীদের। মাত্র ৪ মিনিটেই প্রথম সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় ভিয়ারেয়াল। ডান দিক থেকে নিকোলাস পেপের পাস ধরে নিখুঁত শটে ফারপোস্টে গোল করেন আয়োসে পেরেস। গোলরক্ষক টের স্টেগেন কিছুটা ছুটে এলেও তার সেই শট ঠেকাতে পারেননি।

ম্যাচের শুরুতে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া বার্সেলোনাও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ৭ম মিনিটে ফারমিন লোপেজ ডি বক্সে ঢুকে দেখান চোখ ধাঁধানো পায়ের জাদু, কিন্তু শট নিতে গিয়ে অবশ্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এরপর ১০ম মিনিটে লোপেজের আরেকটি জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন ভিয়ারেয়ালের গোলরক্ষক লুইস জুনিয়র। ১৩ম মিনিটে বাঁকানো শটে চেষ্টা করেন ইয়ামাল। তবে সেই শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন বার্সার এই তরুণ তারকা। এরপর ২২তম মিনিটে লেওয়ানডস্কির হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক লুইস। ৩৪ম মিনিটে এরিক গার্সিয়ার হেডও ব্যর্থ করে দেন এই গোলরক্ষক। একের পর এক আক্রমণে সমতায় ফেরার সম্ভাবনা ঠিকই তৈরি করছিলো বার্সা, তবে কাঙ্খিত সেই গোলের দেখা মিলছিলো না।

শেষপর্যন্ত ৩৮তম মিনিটে গিয়ে গোলের দেখা পান লামিনে ইয়ামাল। শুরুতে শট নিতে চেয়েছিলেন এরিক গার্সিয়া, তবে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে গেলে পাস দিয়ে তা বাড়িয়ে দেন ইয়ামালকে। আর বল পেয়েই আবারো সেই ইয়ামাল ম্যাজিক। বাঁ পায়ের চিরচেন শটে ফার পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠান ১৬ বছর বয়সী এই বিস্ময় বালক।

আরও পড়ুন: দিল্লির একপেশে হারের দিনে বল হাতে উজ্জ্বল মুস্তাফিজ

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবারও আলো ছড়ান ইয়ামাল। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তার শট লেগে যায় ক্রসবারে। তবে এর কয়েক সেকেন্ড পরেই গোল করে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। গার্সিয়ার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল বাড়িয়ে দেন ভিয়ারেয়াল ডিফেন্ডার, যেটা পেয়ে বাইরে থেকে জোরালো শটে জালে পাঠান ফারমিন লোপেজ। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে স্বাগতিক বার্সেলোনা। 

খেলার গতিপথ যেভাবে ছিলো মনে হচ্ছিলো দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে আরও গোল পাবে বার্সা। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় ভিয়ারেয়াল। ৫০তম মিনিটে ইয়েরেমি পিনোর চমৎকার পাস ধরে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন সান্তি কোমেসানা। বল নিয়ে এগিয়ে এসে স্টেগেনের পাশ দিয়ে বল জাড়ে জড়ান এই ফুটবলার। এরপর বার্সেলোনা বলের দখল রেখে একের পর এক আক্রমণ চালায়। ইয়ামাল, লেওয়ানডস্কির, রাফিনিয়ারা বারবার ভিয়ারেয়ালের রক্ষণভাগ পরীক্ষা করতে থাকেন। তবে প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ান লুইস জুনিয়র বা ডিফেন্ডাররা।

খেলার গতির বিপরীতে ৮০তম মিনিটে জয়সূচক গোলটি পায় ভিলারিয়াল। বাম দিক থেকে সার্জি কার্দোনা দারুণ এক ক্রস বাড়ান, যেটা থেকে বল জালে পাঠান তাহন বুকানন। খুব কাছ থেকে নেওয়া শট ঠেকাতে পারেননি স্টেগেন। গোলের পর বার্সেলোনা যেন হয়ে ওঠে আরো মরিয়া। তবে তাতেও কোনো ফল আসেনি। লিগের শেষ হোম ম্যাচে হার দিয়েই আসর শেষ করলো হানসি ফ্লিকের বার্সেলোনা।

আরও পড়ুন: রোনালদো জুনিয়রের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

এদিকে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। শিরোপা আগেই হাতছাড়া হওয়ায় সেভিয়ার সাথে এই ম্যাচটি রিয়ালের জন্য ছিলো কেবল নিয়ম রক্ষার। এমন ম্যাচে রবিবার (১৮ মে) রাতে নিজেদের মাঠে সেভিয়াকে হারিয়েছে তারা ২-০ ব্যবধানে। ম্যাচের শুরুতেই দশ জনের দলে পরিণত হওয়া সেভিয়া দ্বিতীয়ার্ধে খেলে নয় জনের দল নিয়ে। তবে এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ৭৫ মিনিট পর্যন্ত গোলের দেখা পায়নি রিয়াল।

ম্যাচের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় সেভিয়া। ১২তম মিনিটেই এমবাপেকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন লোইক বাদে। এতে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য খেলার পথ সহজ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা প্রথমার্ধে তেমনভাবে সুবিধা করতে পারেনি। এমবাপে বেশ কয়েকবার আক্রমণে উঠলেও লাভ হয়নি। একবার ডান পায়ে নেওয়া তার শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে, প্রথমার্ধের শেষদিকে রিয়ালের রক্ষণের ভুলে সুযোগ পেয়েছিল সেভিয়া। তবে গার্সিয়া পাসকেল বল পেয়ে একা গোলরক্ষকের মুখোমুখি হয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন।

প্রথম ৪৫ মিনিটে রিয়াল বলের দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের জন্য বড় সুযোগ খুব কমই তৈরি করতে পেরেছিল। ছয়টি শটের মধ্যে কেবল একটি ছিল লক্ষ্যে। সেভিয়ার  নেওয়া চারটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল একটি। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার পরই আরও বড় ধাক্কা খায় সেভিয়া। বদলি খেলোয়াড় ইসাক রোমেরো চুয়ামেনিকে ফাউল করেন। রেফারি শুরুতে হলুদ কার্ড দেখালেও, ভিএআরের মাধ্যমে ফাউলের গুরুত্ব বুঝে লাল কার্ড দেখান। সেভিয়া তখন পরিণত হয় ৯ জনের দলে।

আরও পড়ুন: লাহোরের হয়ে বাইশগজে ফিরলেন সাকিব

এই সুযোগে একের পর এক আক্রমণে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ৬০ মিনিটে ভালভার্দের শট গোললাইন থেকে ফেরান সেভিয়ার ডিফেন্ডার। ৭১ মিনিটে এমবাপে দারুণ এক শট নেন, কিন্তু বল সোজা গিয়ে লাগে ক্রসবারে। তখনও অপেক্ষা চলছিলো সোনার হরিণ গোলের। শেষমেশ সেই অপেক্ষার অবসান হয় ৭৫তম মিনিটে। দারুণ এক শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন কিলিয়ান এমবাপে। স্বস্তি ফেলে আনচেলত্তিদের শিবিরে। এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় রিয়াল। ৮৭তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ান ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যাম। গার্সিয়ার হেড পাস থেকে একদম ফাঁকা জায়গা পেয়ে অনায়াসে বল জালে পাঠান তিনি। এই জয়ে বার্সার সাথে পয়েন্ট ব্যবধান চারে নামালো রিয়াল।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর