অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবারের রাতটা যেন মেতে উঠেছিল এক ফুটবলীয় উৎসবে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনা, তবে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের মধ্যকার ৬ গোলের নাটকীয় এই লড়াই উত্তেজনা ছাপিয়ে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। নাটকীয়তায় ঠাসা এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি কেউই। ৩-৩ গোলের ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বার্সা-ইন্টারকে।
আরও পড়ুন: অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ে মিরাজের কীর্তি প্রকাশ
খেলা শুরু হয়েছে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। অলিম্পিক স্টেডিয়ামের রেকর্ড সংখ্যক দর্শক তখনো গুছিয়ে বসার সুযোগ পাননি। আর এরই মধ্যে গোল! বার্সেলোনাকে রীতিমতো চমকে দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক ব্যাকহিলে বল জালে জড়ান ইন্টারের মার্কাস থুরাম। ডান দিক থেকে আসা ক্রসটি বক্সের ভেতর ডিফেন্ডার ঘেরা অবস্থায় পেছনের দিকে ব্যাক হিল করে জালে পাঠান ইন্টারের এই ফুটবলার।

এক গোলে পিছিয় পড়া বার্সা নিজেদের ছন্দ ফিরে পেতে পেতে আবারো ইন্টারের গোল। ওভার হেড কিকে বার্সার জালে এবার বল পাঠান প্রথম গোলের সহায়তাকারী ডামফ্রিস। তবে পুরো মৌসুমজুড়ে বার্সা দেখিয়েছে লড়াই করে ম্যাচে কিভাবে ফিরতে হয়। ঠিক আগের ম্যাচেই কোপা দেল রের ফাইনালেও সেটা প্রমাণ করেছিলো লামিনে ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা।
আরও পড়ুন: তামিমের অলরাউন্ড জাদুতে সিরিজে এগিয়ে টাইগার যুবার
২৪ মিনিটে ফুটবল বিশ্ব দেখলো মাত্র ১৭ বছর বয়সী ইয়ামালের জাদু। ইন্টারের পাঁচজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়া ইয়ামাল শট নেন জটলার ভেতর থেকেই। তার সেই দুর্দান্ত শটে দূরের পোস্ট ছুঁয়ে বল চলে যায় জালে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সার হয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা ইয়ামাল এই গোলের মাধ্যমে করেছেন এক রেকর্ডও। ১৭ বছর ২৯১ দিন বয়সী এই ফরোয়ার্ডই এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা। পেছনে ফেলেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পের ১৮ বছর ১৪০ দিন বয়সের রেকর্ডকে।

৩৮ মিনিটে সমতায় ফেরে বার্সা। রাফিনিয়ার দেয়া বলে শুধু পা লাগিয়ে বল জালে পাঠিয়েছেন ফেরান তোরেস। এই অ্যাসিস্টের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ গোল কন্ট্রিবিউশানে মেসির রেকর্ডে ভাগ বসালেন রাফিনিয়া। চার গোলের এক নাটকীয় লড়াই শেষে সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
আরও পড়ুন: অলরাউন্ডার মিরাজের কল্যাণে বিশাল জয় টাইগারদের
দ্বিতীয়ার্ধে আবারো বার্সার জালে ইন্টারের গোল, আবারো এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ৬৪ মিনিটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিস। দুই গোল ও এক এসিস্ট, অর্থাৎ তিন গোলে অবদান, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কোনো ডাচ ফুটবলারের তিন গোলে অবদান রাখার ঘটনা এটাই প্রথম। তবে নাটকের তখনো বাকি ছিলো অনেকটাই। দুই মিনিট পর আবারো গোল শোধ করেছে স্বাগতিকরা। রাফিনিয়ার রকেটে গতির এক শট ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে আসার সময় ইন্টার গোলকিপার ইয়ান সোমারের পিঠে লেগে জালে প্রবেশ করে। ফলে ম্যাচে আবারো ফেরে সমতা।

শেষ পর্যন্ত আর কেউই গোলের দেখা না পাওয়ায় ৩-৩ স্কোরলাইন নিয়েই শেষ হয় প্রথম লেগের এই ম্যাচ। আগামী সপ্তাহে সানসিরোতে দ্বিতীয় লেগের লড়াই শেষে নির্ধারণ হবে ফাইনালের টিকিট পাচ্ছে কারা।