স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হলো আর্সেনাল। ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল দল হয়েও এখনো পর্যন্ত একবারও ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব জেতা হয়নি আর্সেনালের। বুকায়ো সাকা-ডেকলান রাইসদের কল্যাণে এবার অবশ্য ইউরোপ সেরা মুকুট পড়ার স্বপ্নের বিভোর ছিলো গানাররা। তবে পিএসজির বিপক্ষে সেমিফাইনালে প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগেও ধরা দিয়েছে পরাজয়। ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ হারা আর্সেনাল দুই লেগ মিলিয়ে হেরেছে ৩-১ ব্যবধানে।
আরও পড়ুন: উর্ভিল-ব্রেভিস ঝড়ে চেন্নাইয়ের নাটকীয় জয়
ম্যাচের শুরুতেই একের পর এক আক্রমণে পিএসজির রক্ষণভাগকে কোণঠাসা করে তোলে আর্সেনাল। মাত্র তিন মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিলেন ডেকলান রাইস, তবে তার হেড গোলপোস্টের খুব কাছে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির শট রুখে দেন দোন্নারুম্মা। দশ মিনিট পেরোনোর আগে আবারো পিএসজির ত্রাতা হয়ে আসেন দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক। মার্টিন ওডেগার্ডের নিচু শটও ঠেকান ইতালিয়ান এই গোলরক্ষক।

আর্সেনালের মুহুর্মুহু সব আক্রমণ যেন প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিহত করেন গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা। প্রথমার্ধেই কয়েকটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে তিনি মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। আর্সেনালের কাছে খেলার নিয়ন্ত্রণ থাকলেও প্রথম গোলের দেখা পায় পিএসজি। ২৭তম মিনিটে দারুণ এক গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফাবিয়ান রুইস। আর্সেনালের টমাস পার্টির ব্যর্থ ক্লিয়ারেন্সকে পুঁজি করে বুক দিয়ে বল নামিয়ে দুর্দান্ত এক বুলেট শট নেন রুইস, যা আটকানোর সুযোগই পাননি ডেভিড রায়া।
গোলের পরই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্রপট। চাপে পড়ে যায় আর্সেনাল। একের পর এক পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালকে কোণঠাসা করার সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিক পিএসজি। তবে গোলবারের সামনে যেয়ে সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় লুইস এনরিকে শিষ্যরা। ১-০ ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় পিএসজি।
আরও পড়ুন: রুশো-নাওয়াজের রেকর্ড জোড়া শতকে বড় জয় কোয়েটার
দ্বিতীয়ার্ধেও চলতে থাকে দোনারুম্মা ম্যাজিক। ৬৩তম মিনিটে বুকায়ো সাকার দূরের পোস্টে নেওয়া শট আবারও ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। সারা ম্যাচেই একে একে প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলো নষ্ট করে দেন এই ইতালিয়ান গোলরক্ষক। এর কিছুক্ষণ পরই পিএসজির হাতে সুযোগ আসে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের। লুইস-স্কেলির হ্যান্ডবলের কারণে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজে। কিন্তু ভিতিনিয়া যে শট নেন এতটাই দুর্বলভাবে ছিলো যে সেটি অনায়েসে আটকে দেন আর্সেনাল গোলরক্ষক রায়া।

যদিও তার কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান আরো বাড়িয়ে দেয় পিএসজি। বদলি হিসেবে নামা উসমান দেম্বেলের পাস থেকে দুর্দান্ত এক শটে স্কোরলাইন ২-০ করেন আশরাফ হাকিমি। তখন দুই লেগ মিলিয়ে স্কোর দাঁড়ায় ৩-০। ফাইনালে ওঠার সব আশা যেন শেষ হতে থাকে আর্সেনালের। তবে ৭৬তম মিনিটে অবশ্য এক গোল শোধ দেয় আর্তেতার দল। ছয় গজ বক্সে প্রতিপক্ষের ট্যাকল সামলে, গোলরক্ষককে কাটিয়ে গোল শোধ করেন বুকায়ো সাকা।
চার মিনিট পরই আর্সেনালের সামনে সুযোগ ছিলো ম্যাচে সমতায় ফেরার। তবে রিকার্দোর ক্রস থেকে বল পেয়েও একেবারে ফাঁকা পোস্টে শট নিতে ব্যর্থ হন সাকা। গোলরক্ষক ভুল দিকে ঝুঁকে থাকলেও বল উড়িয়ে মারেন তিনি। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ম্যাচে ফেরার সব সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: ব্রুকের পরিবর্তে দিল্লিতে সেদিকুল্লাহ, মায়াঙ্ক ফিরলেন বেঙ্গালুরুতে
লিওনেল মেসি-নেইমার-এমবাপের বিদায়ের পর অনেকে ভেবেছিল পিএসজির তারকাময় অধ্যায় হয়তো শেষ। কিন্তু কোচ লুইস এনরিক যেন অন্য গল্প লিখতে শুরু করেছেন। বিশ্বমঞ্চে প্রমাণ করেছেন পিএসজি এখন আর ‘তারকানির্ভর’ নয়, তারা এখন ‘দল’ হিসেবেই খেলে।

ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল ফ্রান্সের এই দলটি। প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিল ২০২০ সালে, সেবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল তাদের। অধরা সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে মিউনিখে মাঠে নামবে পিএসজি, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলান।