শেষ বাঁশি বাজতেই নিঃশব্দ হয়ে পড়েছিল শেফিল্ড ইউনাইটেডের ডাগআউট। সান্দারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা যখন উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা, তখন হামজা চৌধুরীর চোখে ক্লান্তি নয়, ছিল নিরব হাহাকার। এক মৌসুম ধরে যাঁর পা জুড়ে ছিল প্রিমিয়ার লিগে ফেরার স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটাকেই যেন আজ বিদায় জানিয়ে ফিরতে হলো চ্যাম্পিয়নশিপের গোধূলি আলোয়।
২০২৫ সালের মে-র এই বিকেলে ইতিহাস গড়তে পারল না শেফিল্ড। ক্লাবের শতবর্ষ পেরোনো অধ্যায়ে আজও অধরা রইল প্লে-অফের জয়। একবার নয়, আগেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। এবারও হলো। আবারও সেই শেষ মুহূর্তের আঘাতে। ৭৬ মিনিট অবধি এগিয়ে থেকেও হার মানতে হলো। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে গোল হজম করে ২-১ ব্যবধানে হেরে মাঠ ছাড়ল তারা।
আরও পড়ুন: হামজার শেফিল্ডের সামনে ৩৬৫ কোটি টাকার হাতছানি

সান্দারল্যান্ডের কাছে এই জয় নতুন এক সূচনা। ৮ বছর পর তারা ফিরছে ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে আলো ঝলমলে মঞ্চে—প্রিমিয়ার লিগে। তরুণদের নিয়ে সাজানো দলটা নিয়ে কোচ রেজিস লে ব্রিস দেখালেন নতুন স্বপ্নের পথ। বয়স নয়, সাহস আর ছকই এখানে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
কিন্তু শেফিল্ডের গল্পটা আলাদা। এই মৌসুমে তাদের সবকিছু যেন গড়ে উঠেছিল একটি লক্ষ্যকে ঘিরে, সেটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরা। সেই মিশনে সবচেয়ে বড় আশার নাম ছিলেন হামজা চৌধুরী। লেস্টার সিটি ছেড়ে ধারে এসেছিলেন কেবলই একটাই উদ্দেশ্যে— শেফিল্ডকে পুণরুদ্ধার করা। কিন্তু শেষটা হলো অপূর্ণ।
হ্যাঁ, আজকের ম্যাচই ছিল শেফিল্ডের হয়ে তার শেষ ম্যাচ। ধারের মেয়াদ ফুরোলো এই ফাইনাল দিয়েই। ফেরার ঠিকানা সেই পুরোনো ক্লাব— লেস্টার সিটি, যারা নিজেরাই এবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে। ফলে হামজার সামনের মৌসুমও হয়তো কাটবে ইংল্যান্ডের এই দ্বিতীয় স্তরের ফুটবলেই—যদি না দলবদলের বাজারে নতুন কোনো প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব হাত বাড়ায়।
আরও পড়ুন: সাকিবে মুগ্ধ লাহোর মালিক, প্রশংসায় ভেসেছে মিরাজ-রিশাদও

তবে বিদায়বেলায় তিনি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গেছেন। এদিন শেফিল্ডের রক্ষণে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক পজিশন মিডফিল্ড হলেও ফের দায়িত্ব পান রাইটব্যাক হিসেবে। প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে রেখেছেন নীরবে। ম্যাচজুড়ে ৬টি ক্লিয়ারেন্স, ৩টি হেড ক্লিয়ারেন্স, ২টি ইন্টারসেপশন, ২টি ডুয়েল জয় এবং একটি ব্লকে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।
তবু ফুটবল কেবল পরিসংখ্যানের খেলা নয়। ভাগ্যের পরিহাসে সব ম্লান হয়ে গেল যোগ করা সময়ের এক ভুল পাসে। কেফিরার মুরের সেই ভুলেই গোল হজম করে গেল শেফিল্ড, আর ভেঙে পড়ল হামজার স্বপ্নের পাড়।
এক মৌসুমে ৩২ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি, বারবার নিজের খেলার ধরন বদলে দলের প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে লড়াই করেছেন। আজও করলেন। কিন্তু ভাগ্য এবার পাশে দাঁড়াল না।

এই হারের মধ্য দিয়েই কার্যত শেষ হলো এই মৌসুমে ইংলিশ ফুটবলে হামজার পথচলা। লেস্টার, শেফিল্ড না অন্য কেউ—আগামী মৌসুমে কোথায় খেলবেন তিনি, তা এখনই নিশ্চিত নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত, আগামী মাসে যখন বাংলাদেশের ঘরের মাঠে ফিরবেন তিনি, তখন তাঁর আগমন হবে একটিমাত্র পরিচয়ে—জাতীয় দলের গর্ব হয়ে।
আরও পড়ুন: সাদা পোষাকে ভারতের নতুন অধিনায়ক শুবমান গিল