একবিংশ শতাব্দীর ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম যদি কেউ হন, তিনি নিঃসন্দেহে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস আভেইরো। মাঠে যেমন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা, মাঠের বাইরেও তেমনি অদম্য প্রভাব— দুটি মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এক অনন্য ‘ব্র্যান্ড রোনালদো’।
ফুটবল বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ১০০০ গোলের পেছনে ছুটছেন এই পর্তুগীজ সুপারস্টার। স্প্যানিশ দৈনিক ‘মার্কা’র তথ্য মতে, সব ঠিক থাকলে ২০২৭ সালের মধ্যেই রোনালদো পৌঁছে যাবেন সেই স্বপ্নের মাইলফলকে। তবে এবার আবারও খবরের শিরোনামে রোনালদো, মাঠের বাইরেও আপাতত সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড যে তিনিই।
আরও পড়ুন: আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে অবশেষে জয়ী মোহামেডান

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালে এই পর্তুগিজ মহাতারকার ব্র্যান্ডমূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫০ মিলিয়ন ইউরোতে। এমন নয় যে এই অর্জন হুট করে এসেছে। ২০১১ সালে যেখানে রোনালদোর ব্র্যান্ডের দাম ছিল মাত্র ২৪.৫ মিলিয়ন ইউরো। এক যুগ পর তা বেড়েছে প্রায় ৩২৫ শতাংশ। হিসাবটা করেছে পর্তুগালেরই ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড মার্কেটিং (IPAM)।
সৌদি ক্লাব আল নাসরের হয়ে, প্রতি মৌসুমে রোনালদো আয় করছেন ২০০ মিলিয়ন ইউরো, সঙ্গে রয়েছে নাইক, ট্যাগ হিউয়ার ও লুই ভিতোঁ’র মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সঙ্গে ১৫০ মিলিয়নের বিজ্ঞাপনচুক্তি।

রোনালদোর গল্পটা শুধু ফুটবলের নয়— এটা এক সফল উদ্যোক্তার গল্প। মাঠের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যবসা, ব্র্যান্ডিং আর বিনিয়োগেও তিনি রেখেছেন সমান দক্ষতার ছাপ। জুতা, সুগন্ধি, অন্তর্বাস থেকে শুরু করে হোটেল, রিয়েল এস্টেট, ফিটনেস সেন্টার, এমনকি সিনেমা— রোনালদো এখন এক বিশাল পরিসরের প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি ব্রিটিশ পরিচালক ম্যাথু ভনের সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমা প্রযোজনায়ও নাম লিখিয়েছেন তিনি।
তবে রোনালদোর সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে অবাক করা দিক— তাঁর বৈশ্বিক প্রভাব। গুগলে বছরে ১৮৭ মিলিয়ন বার তাঁর নাম সার্চ হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবছর ২২ মিলিয়নের বেশি প্রতিবেদন হয় তাঁকে ঘিরে। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ৬৪ কোটির বেশি। ইউটিউবেও তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ৭৪ মিলিয়নের বেশি। সব প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে অনুসারীর সংখ্যা এক বিলিয়নেরও ওপরে— যা তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাবলিক ফিগারে পরিণত করেছে।

মাঠেও থেমে নেই তিনি। সৌদি আরবের আল নাসরের হয়ে নিয়মিত গোল করছেন, স্বপ্ন দেখছেন ১০০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার। কেবল সংখ্যাতেই নয়, পারফরম্যান্সেও রোনালদো এখনও আগের মতোই ক্ষুরধার। আর এই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে, তবে গবেষকরা বলছেন— আগামীতে তাঁর ব্র্যান্ড ভ্যালু আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: মেসিকে ছাড়বে না মায়ামি, হতে পারে নতুন চুক্তি
IPAM-এর ভাষ্যমতে, একজন অ্যাথলেট, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, ইনফ্লুয়েন্সার ও বিনিয়োগকারী— এই চারটি পরিচয়ে রোনালদো এখন বিশ্ব ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় ‘আইকন’। খেলাধুলার সীমা ছাড়িয়ে তিনি আজ এক সাংস্কৃতিক শক্তির নাম।
একটা সময় পর্তুগালের রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়া ক্রিস্টিয়ানো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাম। রোনালদো দেখিয়েছেন— কীভাবে হার না মানার মানসিকতা দিয়ে জয়ী হতে হয়। জীবন যুদ্ধের এই মঞ্চে সফল হওয়ার সবচেয়ে জলজ্যান্ত উদাহরণও একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস আভেইরো।