রিচ জেমসের দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকে সহজেই জয় পাওয়ার কথা ছিল চেলসির। তবে ইংলিশ এই ক্লাবের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ান একজন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের শেষ মুহূর্তে গোল করে বেনফিকাকে আশার স্রোতে ভাসিয়ে দেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৪-১ গোলে হেরেই বিদায় নিতে হয়েছে বেনফিকাকে। তবু ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। আর এরপরেও নাকি তিনি এবার ইউরোপ ছাড়ছেন!
চলতি ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করে সবচেয়ে বেশি কার্যকর পাস দেওয়া ফুটবলারও ডি মারিয়া, দিয়েছেন মোট ১২টি পাস। এছাড়া নকআউট রাউন্ডে চেলসির বিপক্ষে গোল করে চলতি টুর্নামেন্টে আপাতত সর্বোচ্চ গোলদাতা তালিকাতেও শীর্ষে আছেন তিনি। তবুও ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এই ম্যাচ দিয়েই শেষ হলো ডি মারিয়ার অধ্যায়। এবার ফিরছেন সেখানে, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারের পথচলা।
আরও পড়ুন: বরখাস্ত হলেন হামজাদের কোচ

লিওনেল মেসির মতোই ডি মারিয়া জন্মেছিলেন আর্জন্টিনার রোজারিওতে। মাত্র চার বছর বয়সেই যোগ দেন রোজারিও সেন্ট্রাল ক্লাবে। এই ক্লাবের হয়েই ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো সিনিয়র ফুটবলে অভিষেক হয় ডি মারিয়ার।
এর ঠিক ২ বছর পর অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতে প্রথমবারের মতো আলো কাড়েন বিশ্ব ফুটবলে। সেখান থেকেই তাকে দলে ভিড়িয়ে নেয় পর্তুগীজ জায়ান্ট বেনফিকা। ক্লাবটির হয়ে চার বছরের ক্যারিয়ারে জিতেছেন বেশ কয়েকটি শিরোপা। এরপরেই যেনো ইউরোপিয়ান ফুটবলেও আলাদাভাবে নজর কাড়েন তিনি। যোগ দেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা-লিগা জয়, সুপার কাপ কিংবা কোপা দেল রে। মাদ্রিদিস্তাদের মনে আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি আলাদাভাবে মনে থাকবেন লা ডেসিমা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ তে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করা মাদ্রিদের হয়ে লিসবনের সেই ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন একজন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
আরও পড়ুন: স্কুল শিক্ষকের গোলে বোকা বনে গেল বোকা জুনিয়র্স
এরপর রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, প্যারিস সেইন্ট জার্মেই, জুভেন্টাস হয়ে আবারও ফিরে এসেছিলেন বেনফিকায়। এবং ফিরেই আবারও পর্তুগীজ এই ক্লাবের হয়ে জিতেছিলেন শিরোপা। তবে এবার ফিরছেন ঘরে। যে রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবার সেখানেই ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

ইউরোপ ছাড়লেও ডি মারিয়া রেখে যাচ্ছেন এক অবিশ্বাস্য ফুটবল জীবনগাথা। ঘরোয়া লিগ থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনার হারের বেদনা আর ২০২২ বিশ্বকাপে তাঁর হাত ধরে শিরোপার স্বপ্নপূরণ— সব কিছুতেই ছিল ডি মারিয়ার স্পর্শ।
দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপাও আর্জেন্টিনা জিতেছিল এই কিংবদন্তির গোলেই। কোপা আমেরিকা হোক কিংবা বিশ্বকাপ, অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে অলিম্পিকের গোল্ড মেডেল। সব বড় মঞ্চেই পেয়েছেন গোল, জিতেছেন শিরোপাও।

এবার ঘরে ফেরার পালা। তবে কিংবদন্তি অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া চিরদিন স্মরণীয় থাকবেন ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে।
আরও পড়ুন: ভিনিসিয়াসের ঝলকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ