বাংলাদেশ বনাম ভারত—হোক তা রাজনৈতিক আলাপ, ক্রিকেটের ম্যাচ কিংবা ফুটবল—সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশের মুখোমুখি হওয়া মানেই যেনো বাড়তি উত্তেজনা। ক’দিন আগেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিত-কোহলিদের মুখোমুখি হয়েছিল শান্ত-মুশফিকরা, যদিও তাতে বাংলাদেশের জন্য ফলাফলটা ছিল একেবারেই শূন্য। তবে এবার ক্রিকেটের লড়াইয়ে হেরে আসা বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে ফুটবলের ময়দানে। যেখানে টাইগারদের বাড়তি আশা দেখাচ্ছে প্রথমবারের মতো লাল-সবুজের জার্সিতে সংযুক্ত হওয়া হামজা চৌধুরী।
নিয়মিতই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বেশ বড় একটা নাম। যদিও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফুটবলার খেলেছেন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলেও। সেখানে তার সতীর্থ ছিলেন জেমস ম্যাডিসন, ফিল ফোডেন, ম্যাসন মাউন্ট, ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আর্নল্ড, বার্নস, সোলাঙ্কে ও ডমিনিক কালভার্ট-লুইনের মতো তারকা ফুটবলাররা। অর্থাৎ, ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের সোনালী জেনারেশনের ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা হামজা চৌধুরীই এবার মাঠে নামবেন বাংলাদেশের হয়ে!
বাংলাদেশের ভক্তরা যখন হামজার আসার প্রহর গুনছে, ঠিক তখনই ভারতীয় ফুটবলে নতুন খবর—অবসর ভেঙে আবারও মাঠে ফিরছেন দেশটির ইতিহাসের সেরা ফুটবলার ও সাবেক অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ৪০ বছর বয়সী ছেত্রী কি তবে হামজার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তেই ফিরছেন? একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে নিয়মিত খেলা হামজাকে টেক্কা দিতে ভারতের স্ট্রাইকারদের ঘাম ঝরানোর কথা, আর ঠিক তখনই তাদের সেরা স্ট্রাইকার ছেত্রী অবসর ভেঙে আরও একবার দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
আগামী ২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। আর সেই ম্যাচেই হামজা চৌধুরীর সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল ছেত্রী।
আচ্ছা বাংলাদেশের বিপক্ষে সুনীল ছেত্রীর পারফরম্যান্স কেমন? Bangladesh Football – Walking Around The Dreams ফেসবুক গ্রুপে আরেফিন জিসানের শেয়ার করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে ছেত্রী করেছেন ৬টি গোল। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ, ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মিলিয়ে বাংলাদেশি ক্লাব ও জাতীয় দলের বিপক্ষে তিনি মোট ১১ ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ৫টি জয়, ৫টি ড্র এবং ১টি পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছেন। এই ১১ ম্যাচে তার গোল অবদান মোট ১১টি—৮ গোলের পাশাপাশি ৩টি অ্যাসিস্টও করেছেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের বিপক্ষে সুনীল ছেত্রী কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, তা সহজেই অনুমেয়।
অন্যদিকে, বাস্তবতার হিসাব করলে একজন হামজা চৌধুরী বাদেও আরও ১০ জন বাংলাদেশি ফুটবলার মাঠে খেলবেন। প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করবেন জামাল ভূঁইয়া, তারেক কাজী ও ইতালিয়ান লিগে খেলা ফাহামিদুল ইসলাম, যিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের হয়ে খেলার অপেক্ষায় আছেন।
তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সেই হামজা চৌধুরীই। ইংলিশ লিগে বরাবরই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা হামজা নিজের সর্বশেষ ম্যাচে রাইট-ব্যাক হিসেবেও খেলেছেন। তবে বাংলাদেশ যদি তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাকে ‘বক্স টু বক্স’ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানো উচিত। যেখানে ফ্রি রোলে খেলবেন তিনি, এবং বাংলাদেশের ফিনিশিং দুর্বলতা কাটাতে তার বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকেই স্ট্রাইকারদের গোল করতে হবে।
অন্যদিকে, সুনীল ছেত্রীর অবসরের পর টানা ১২ ম্যাচ জয়হীন ভারত। আর ৪০ বছর বয়সী একজন ফুটবলার অবসর ভেঙে এসেই আগের মতো খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। তবুও, ছেত্রীর বিপক্ষে সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকে। আর যদি বক্সের আশপাশে হামজাকে ফ্রি রোলে খেলতে দেওয়া হয়, তাহলে ছেত্রীর ভারতের বিপক্ষে গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারবেন বর্তমানে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা এই ফুটবলার।
এখন দেখার পালা—হামজা বনাম সুনীলের এই দ্বৈরথে দিনশেষে বিজয়ের হাসি কে হাসে। দেশের ফুটবলে হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি কি সত্যিই সাফল্য এনে দিতে পারবে? উত্তরের অপেক্ষায় বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা!