ঘরের মাঠে রেড ডেভিলদের হলো না বিদায়, হলো এক ইতিহাস। লেখা হলো এক রূপকথা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের বাতাসে বৃহস্পতিবার রাতে মিশে ছিল বিস্ময়, উত্তেজনা আর এক অসম্ভব প্রত্যাবর্তনের ঘ্রাণ। ৯ গোলের রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের মঞ্চে শেষ অঙ্কে এসে রূপকথার কল্পনায় মিশলো বাস্তবতা— হ্যারি ম্যাগুইরের হেডে উল্লাসে ফেটে পড়ল পুরো স্টেডিয়াম, নিশ্চিত হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইউরোপা লিগের সেমিফাইনাল।
প্রথমার্ধেই দুই গোলের লিড নিয়ে যখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা হয়তো আগেভাগেই ইউনাইটেডের পকেটে, তখনই ছন্দপতন। ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব লিওঁ মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়ালো, পরপর দুই গোল করে ম্যাচে ফিরল। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে আরও দুইবার বল জাল ছুঁয়ে গেলে আতঙ্কে কেঁপে উঠল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। স্কোরবোর্ড তখন বলছিল— সেমিফাইনালের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকদের জন্য।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় সফরে প্রথমবারের মতো চার নারী ক্রীড়াবিদ
কিন্তু নাটকীয় এই ম্যাচে রোমাঞ্চ তখনও বাকি ছিল। ম্যাচের ১১৪তম মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের পেনাল্টি গোলে ফের শুরু প্রত্যাবর্তনের। তারপর ১২০ মিনিটে কোবি মাইনোর সমতাসূচক গোল। আর ঠিক পরের মিনিটেই কাসেমিরোর পাস থেকে হেডে ম্যাচের শিরোনাম লিখে দেন হ্যারি ম্যাগুইর। যেন মহাকাব্যিক কোনো সিনেমার চূড়ান্ত দৃশ্য!
দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলে লিওঁকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ইউনাইটেড। ম্যাচ শেষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে লেখা হলো এক অমর আখ্যান— ‘বিশ্বাস না করলেও, এই ঘটনা সত্য!’
ম্যাচের শুরুটা ছিল ইউনাইটেডের নিয়ন্ত্রণে। ১০ মিনিটে উগার্তে এবং বিরতির আগে দালোটের গোলে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
তোলিসো ও তাগলিয়াফিকোর দুই গোল ম্যাচে ফিরিয়ে আনে লিওঁকে। অতিরিক্ত সময়ে রায়ান ও লাকাজেত্তের গোল যেন বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল ইউনাইটেডের জন্য।
কিন্তু ঠিক তখনই রঙ বদলায় স্ক্রিপ্ট। একজন কম নিয়ে খেলতে থাকা লিওঁ ছন্দ হারায়, আর সেই সুযোগে ম্যাচে ফিরে স্বাগতিকরা। তিনটি গোল একেবারে শেষ ৭ মিনিট— যেন অলৌকিক কোনো মুহূর্ত।
আরও পড়ুন: জর্ডানে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা
সব মিলিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যে রাতটা ছিল, তা যুগের পর যুগ মনে রাখবে ফুটবল বিশ্ব। এই জয়ে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের, যারা ২-০ গোলে দ্বিতীয় লেগে জিতে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে।