ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে সবার চেয়ে নিচে থাকা সাউদাম্পটন যে কিনা রেকর্ড পরিমাণে বাজে পারফরম্যান্স করে বসে থাকতে পারতো, তারাই কিনা থামিয়ে দিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিকে!
সেন্ট ম্যারিজে ০-০ গোলে ড্র করে শুধু পয়েন্টই বাঁচায়নি, বরং এড়িয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে রেকর্ডের দাগ। এই ড্রয়ের ফলে তাদের পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ১২, যা ২০০৭-০৮ মৌসুমে ডার্বি কাউন্টির করা সর্বনিম্ন ১১ পয়েন্টের নিচে নামা থেকে সাউদাম্পটনকে বাঁচিয়ে দিল।
ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাভাবিকভাবে আধিপত্য বিস্তার করে সিটি। ২৬টি শট নেয় তারা, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল খুবই কাছাকাছি। কিন্তু সাউদাম্পটনের রক্ষণ ছিল চমৎকারভাবে সংগঠিত। বিশেষ করে গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগ সিটির আক্রমণগুলো বারবার প্রতিহত করে দেয়।
আরও পড়ুন: স্কাই স্পোর্টসের মৌসুম সেরা একাদশে জায়গা পেলেন হামজা
অন্যদিকে এই ম্যাচে দীর্ঘ ছয় সপ্তাহ পর চোট কাটিয়ে মাঠে নামেন ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হালান্ড। কিন্তু তার প্রত্যাবর্তনেও গোলের মুখ দেখেনি পেপ গার্দিওয়ালার সিটি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায়, প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও ইতোমধ্যে লিভারপুলের হাতে— সব মিলিয়ে গার্দিওলার জন্য এ এক হতাশাজনক মৌসুম। চলতি মৌসুমে এখন সিটির অবস্থান লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে, ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে। তাদের খুব কাছাকাছি রয়েছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড ও চেলসি ও অ্যাস্টন ভিলা। যাদের মধ্যে যে কোনো দল সিটিকে টপকে যেতে পারে।
অন্যদিকে এই ড্রয়ের ফলে সাউদাম্পটনের সমর্থকদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। মৌসুমজুড়েই খারাপ পারফরম্যান্সে দলটি সমালোচনার মুখে ছিল। তবে এই একটি ম্যাচই প্রমাণ করে দিল, তারা এখনও লড়াই করতে জানে।
এর আগে একই দিনের আরেক ম্যাচে ব্রাইটন ২-০ গোলে হারায় উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সকে। মোলিনিউক্সে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথমার্ধেই ব্রাইটন এগিয়ে যায় পেনাল্টি থেকে ড্যানি ওয়েলবেকের গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে তরুণ ব্রাজান তার ক্যারিয়ারের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ গোলটি করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ওয়েলবেকের জন্য এটি ছিল বিশেষ একটি মুহূর্ত, কারণ এই গোলটি তার এক মৌসুমে ১০ গোল ছোঁয়ার রেকর্ড।
উলভস অবশ্য প্রথমার্ধে কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল, বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথিউস কুনহার শটটি গোলরক্ষক বার্ট ভারব্রুগেন অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধে উলভস কিছুটা জোরালোভাবে ফিরলেও গোলের দেখা পায়নি। পেরেইরার দল পরপর দুটি ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করার পাশাপাশি অনেক সুযোগ হাতছাড়া করেছে। গুয়েডেস ও মার্শাল মুনেতসি ভালো পজিশনে থেকেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন।
আরও পড়ুন: প্রিমিয়ার লিগে আবারো কি ফিরবেন হামজা?
এই হার উলভসের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এপ্রিল মাসে টানা পাঁচ জয়ের পর এখন তাদের পারফরম্যান্সে ধস নেমেছে। ম্যানেজার ভিটর পেরেইরা একাধিক পরিবর্তন এনেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না। এখন যদি তারা গোলের সামনে মনোযোগ না বাড়ায়, তাহলে মাঝামাঝি টেবিলেই তাদের জায়গা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
রাতের অন্য ম্যাচগুলোতেও উত্তেজনার কমতি ছিল না। অ্যাস্টন ভিলা, ব্রেন্টফোর্ড এবং এভারটন সবাই পেয়েছে জয়।
অ্যাস্টন ভিলার হয়ে ইংলিশ স্ট্রাইকার ওলি ওয়াটকিন্স গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে জিতিয়েছেন। এই জয় ভিলাকে পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে তুলে এনেছে, যা ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় জায়গা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াটকিন্সের পারফরম্যান্স এই মৌসুমে ধারাবাহিক এবং তার এই একমাত্র গোলের ফলেই চতুর্থ স্থানে থাকা নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ও পঞ্চম স্থানে থাকা চেলসির সমান ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে অ্যাস্টন ভিলাও শীর্ষ চারে উঠার দৌড়ে বেশ এগিয়ে গেলো।
এদিকে, ব্রেন্টফোর্ডও ১-০ গোলে জয় পেয়েছে, ম্যাচের একমাত্র গোল করেন কেভিন। এম্বুয়েমোর বাড়ানো বলে তার দুর্দান্ত শটেই নির্ধারিত হয় ম্যাচের ভাগ্য। দলটি ব্রাইটনের সঙ্গে পয়েন্টে সমান হলেও গোল ব্যবধানে কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে এই জয় তাদের ইউরোপের আশা টিকিয়ে রেখেছে।
আরেক ম্যাচে জয় পেয়েছে পয়েন্ট টেবিলের সেরা দশের বাইরে থাকা এভারটন। ফুলহামের মাঠে যদিও শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে তারা। মেক্সিকান ফরোয়ার্ড রাউল হিমিনিজের গোলে ১৭ মিনিটেই স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন তিনি। গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে এভারটন। যার ফলও পায় দ্রুত। প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত মিনিটে ভিটালি মাইকোলেঙ্কোর গোলে সমতায় ফিরেই ডাগ আউটে ফিরে সফরকারীরা।
আবারও পড়ুন: শমিতের দুর্দান্ত এসিস্টে বড় জয় ক্যাভালরির
এরপরে দ্বিতীয়ার্ধে ৭০ মিনিটে আবারও গোলের দেখা পায় এভারটন। এবার ডিফেন্ডার মাইকেল কিনের শটে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় এভারটন।
আর ৪ মিনিট পর আবারও এগিয়ে যায় তারা। এবার বেতোর গোলে ফুলহামের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় এভারটন। কার্লোস আলকারাজের বাড়ানো বলে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন বেতো।
শেষ পর্যন্ত প্রথমে পিছিয়ে গিয়েও ৩-১ গোলের বড় জয়ে মাঠ ছাড়ে এভারটন। সব মিলিয়ে ৩৬ ম্যাচ খেলে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত টেবিলের ১৩ নম্বরে আছে এভারটন। অন্য দিকে, সমান ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের ১১ নম্বরে আছে ফুলহাম।
সবমিলিয়ে এই সপ্তাহান্তে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দিনের ম্যাচগুলো ছিল হোঁচট, প্রত্যাবর্তন ও সম্ভাবনার গল্পে ঠাসা। একদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিটির হোঁচট, অন্যদিকে রেলিগেশন জোনে থাকা সাউদাম্পটনের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার।
চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আর্নে স্লটের লিভারপুলের। ৩৫ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ৮২। এরপরেই দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৭। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি এক ম্যাচ বেশি খেলে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে টেবিলের তিনে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেড, চেলসি, অ্যাস্টন ভিলাতে থাকা তিন দলেরই পয়েন্ট সমান ৬৩।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসতে চান কুইন সুলিভান