আরও একবার নেশন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছেছে পর্তুগাল। বরাবরের মতো এবারও দৃশ্যপটে সেই একজন। আরও একবার সেমিফাইনালে গোল করে দলকে রক্ষা করলেন সেই পুরোনো ভরসা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাঁর গোলে জার্মানিকে হারিয়ে ২০০৪, ২০১৬, ২০১৯- এর পর চতুর্থবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। আর চমকপ্রদ ব্যাপার হলো— এই চারটি সেমিফাইনালেই গোল করেছেন রোনালদো! যেন পুরো একটা সময় ধরে সেমিফাইনাল মানেই রোনালদোর গোল।
২০০৪ ইউরোতে কিশোর রোনালদো গোল করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, এরপর ২০১৬ ইউরো ও ২০১৯ নেশন্স লিগের সেমিতেও ছিলেন স্কোরশিটে। আর এবার, ২০২৫ সালের নেশন্স লিগে আবারও তাঁর নাম জড়িয়ে গেল ম্যাচজয়ের গল্পে। অনেকেই বলে থাকেন, বড় ম্যাচে রোনালদো নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু এই চারটি সেমিফাইনালের পর সংখ্যাগুলোই যেন হয়ে উঠেছে তাঁর জবাব।
আরও পড়ুন: দুর্দান্ত হামজায় ভুটানকে হারাল বাংলাদেশ

এ রাতের আরেক গল্প ফ্রান্সিসকো কনসেইকাওকে ঘিরে। বদলি হিসেবে নেমে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি। তবে এই গোলের মাহাত্ম্য আরও বড় হয়ে ওঠে যখন পরিসংখ্যান বলে, ২০০০ সালে এই জার্মানির বিপক্ষেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন তাঁর বাবা সের্জিও কনসেইকাও। সেই ম্যাচটিই ছিল পর্তুগালের শেষ জার্মানবধ। এরপর দুই দশকের বেশি সময় কেটে গেছে, অবশেষে জার্মানিকে হারাতে পারল তারা, আর সেই ম্যাচে গোল করলেন এক কনসেইকাও-ই। অর্থাৎ, শুধু প্রজন্ম বদলেছে, স্কোরশিটের নামের পাশে রক্তের সম্পর্ক বদলায়নি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে প্রথমার্ধে কিছুটা নিষ্প্রভ ছিল পর্তুগাল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দৃঢ়ভাবে ফিরে আসে তারা। ৫১ মিনিটে কিমিখের চমৎকার পাসে হেডে জার্মানিকে এগিয়ে দেন ফ্লোরিয়ান ভের্টজ।

তবে খুব বেশি সময় তারা এগিয়ে থাকতে পারেনি। বদলি হিসেবে নামার পর মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় ৫৮ মিনিটে গোল করেন ফ্রান্সিসকো কনসেইকাও। ডান প্রান্ত থেকে ড্রিবল করে ঢুকে দূর থেকে নেওয়া তাঁর শটে কোনো জবাব ছিল না টের স্টেগেনের।
আরও পড়ুন: জামালের এসিস্টে হামজার গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ
এরপর ৬২ মিনিটে আসে সেই মুহূর্ত। বাঁ প্রান্ত থেকে মেন্ডেসের পাস পেয়েই বল জালে পাঠান রোনালদো। বয়স ৪০ হলেও গোলের ক্ষুধায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তাঁর মধ্যে। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল তাঁর ১৩৭তম গোল। নেশন্স লিগে এবারের মৌসুমেই করলেন সাতটি।
শেষ মুহূর্তে গোলরক্ষক টের স্টেগেন কয়েকটি চমৎকার সেভ করে ম্যাচে জার্মানিকে কিছুটা আশা দেখালেও পর্তুগালের রক্ষণ আর কোনো সুযোগ দেয়নি। অবশেষে, পাঁচ ম্যাচ পর জার্মানির বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল পর্তুগাল। সবশেষ জয় এসেছিল সেই ২০০০ সালের ইউরোতে, যখন গোল করেছিলেন ফ্রান্সিসকোর বাবা সের্জিও।

এই জয়ে ফাইনালে উঠল রবার্তো মার্টিনেজের দল। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে স্পেন অথবা ফ্রান্স। আর এই ফাইনাল মাঠেও রয়েছে চেনা আবহ। কারণ চার দিন আগেই এই আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছেন পর্তুগালের চার ফুটবলার। এখন জাতীয় দলের জার্সিতে এখানেই শিরোপা জয়ের হাতছানি তাদের সামনে। আর দলের পাশাপাশি আরও একবার আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপার হাতছানি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সামনেও।
আরও পড়ুন: হামজার গোলে এগিয়েই বিরতিতে বাংলাদেশ