হলো না কামব্যাক, ঘরের মাঠেও ভূপতিত হলো রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর আকাশ ঢাকা ছিল ছাদে, গ্যালারিতে উত্তেজনা, চোখে স্বপ্ন আর হৃদয়ে প্রত্যাবর্তনের আশা। কিন্তু এই রাত রিয়াল মাদ্রিদের জন্য হয়ে থাকল শুধুই হতাশার প্রতিচ্ছবি।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে ঘুরে দাঁড়ানোর অসংখ্য গল্প রচিত করলেও এবার পারেনি তারা। আর্সেনালের সামনে ঘরের মাঠেও পথ হারিয়ে ফেলল রিয়াল, ২-১ গোলে হারের লজ্জা নিয়েই থেমে যেতে হলো কোয়ার্টার ফাইনালেই। দুই লেগ মিলিয়ে লন্ডনের ক্লাবটি জয় পেল ৫-১ ব্যবধানে।
আরও পড়ুন: হাঙ্গেরিতে গ্রান্ডমাস্টারকে বধ করে স্বপ্নপূরণে এক ধাপ এগিয়ে তাহসিন
প্রথম লেগে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও বার্নাব্যুতে সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিল— ‘এই তো রিয়াল, এখানেই তো ঘটে রূপকথা।’ এমবাপে, ভিনিসিয়াস, বেলিংহাম, রদ্রিগোদের পায়ে নতুন ইতিহাসের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিল তারা। কিন্তু, মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথমার্ধে গোলে কোনো শটও নিতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ।
প্রথমার্ধে ম্যাচের নাটকীয়তাও কম ছিল না— দুইবার পেনাল্টির বাঁশি, একবার ভিএআরে সিদ্ধান্ত বদল, একবার সাকার পেনাল্টি মিস, অফসাইডে গোল বাতিল— সব মিলিয়ে জমজমাট এক অর্ধ।
তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল ভিএআরে প্রায় ছয় মিনিট ধরে বিশ্লেষণের পর রিয়ালের সম্ভাব্য পেনাল্টি বাতিল হওয়া। সেই মুহূর্তে বার্নাব্যুর গ্যালারি যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া রিয়াল বদলিতে আনে একাধিক খেলোয়াড়। কিন্তু বদল এনে আশার চেয়ে অঘটনের জন্ম দেয় তারা। ৬৫ মিনিটে বুকায়ো সাকার গোলে এগিয়ে যায় আর্সেনাল, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সালিবার ভুলে পাওয়া বল থেকে ভিনিসিয়াস সমতায় ফেরান দলকে।
এই গোলের পর মনে হচ্ছিল আবারও সেই পরিচিত রিয়াল ফিরে আসছে, কিন্তু সেটি ছিল শুধুই ক্ষণিকের বিভ্রম। আক্রমণের ধার বাড়াতে গিয়ে রক্ষণে ফাঁক রেখে দেয় তারা, আর সেই সুযোগেই ইনজুরি টাইমে মার্তিনেলি গোল করে রিয়ালের কফিনে পেরেক ঠুকে দেন।
আরও পড়ুন: মুলতানকে হারিয়ে তিন ম্যাচ খেলেও অপরাজিত ইসলামাবাদ
এই হারে ২০২০ সালের পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারল না ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি। অন্যদিকে, ১৬ বছর পর আবারও শেষ চারে উঠল আর্সেনাল, যারা এবার ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজির মুখোমুখি হবে।
বার্নাব্যুর গ্যালারিতে শেষ বাঁশির পর শোকের ছায়া, হতাশার দীর্ঘশ্বাস। স্বপ্ন ছিল, সাহসও ছিল, কিন্তু রাতের শেষে হিসেবের খাতায় লেখা থাকল শুধুই হার। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে যেখানেই ফিরে দাঁড়ানোর গল্প, সেখানেই থাকবে এই পরাজয়ের পাতাটিও— নিঃশব্দ, অথচ অনেক কিছু বলে দেওয়া এক ব্যর্থতা।