বুধবার, জুন ২৫, ২০২৫
সামি'স কর্নার

রিয়ালের রুদ্ধশ্বাস জয়ের রাতে লিভারপুল-ইউনাইটেডের লজ্জা

লা লিগার মঞ্চে আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই রিয়াল মাদ্রিদের। একটা হার কিংবা ড্র— যেকোনো এক ভুলের মাসুল গ্যালাক্টিকোদের ছিটকে দিতে পারে তাদের শিরোপার লড়াই থেকে। এমন চাপের মুহূর্তে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রবিবার (৪ মে) সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় জয় তুলে নিল লস ব্লাঙ্কোস। এই জয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানও কমিয়ে এনেছে চার-এ।

যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধেই গোল বন্যা বইয়ে দেয় রিয়াল। আরও একবার নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেন রিয়ালের তুরষ্কের মিডফিল্ডার আর্দা গুলার। তার দুর্দান্ত এক শটে গোল আসলে ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এরপরই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠা মাদ্রিদকে দেখা যায় সেই পুরোনো রুপে। অর্থাৎ, ‘ক্লাসিকাল কাউন্টার অ্যাটাক।’ টিম কম্বিনেশনের দুর্দান্ত সমন্বয় দেখিয়ে এমবাপের পা থেকে আসে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।

আরও পড়ুন: জাতীয় দলের তারকাদের নিয়ে ‘এ’ দলের স্কোয়াড ঘোষণা 

এরপর ম্যাচের ৪৮ মিনিটে আবারও দৃশ্যপটে এমবাপে-গুলার যুগল। এই দুজনের দারুণ বোঝাপড়ায় লাভটা হয় রিয়াল মাদ্রিদের। গুলারের মাপা পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় তারা। অর্থাৎ, গুলার-এমবাপের দুর্দান্ত গোলের পাশাপাশি গোলপোস্টে কর্তোয়ার অবিশ্বাস্য সেভ থেকে — সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল সেল্টার আজ রেহাই নেই।

কিন্তু ফুটবল নাটকের শেষ দৃশ্য যেন সব সময়ই চমকে দেয়। ৬৯ ও ৭৬ মিনিটে জাভি রদ্রিগেজ ও উইল্ট সুইডবার্গ গোল করে হঠাৎই রিয়ালের লিডটা কমিয়ে আনেন ৩-২ এ।

এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বার্নাব্যুতে। একের পর এক আক্রমণ করে রিয়ালের রক্ষণে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালায় সেল্টা। ভাগ্যজোরে ও কর্তোয়ার দক্ষতায় শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরাতে পারেনি তারা।

এই জয় রিয়ালের জন্য শুধু তিন পয়েন্টই নয়, ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। ৩৪ ম্যাচ শেষে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ৭৫, আর বার্সার ৭৯। সামনে দুই দল মুখোমুখি হবে ক্লাসিকো লড়াইয়ে। সেই মহারণই হয়ে উঠতে পারে শিরোপা ভাগ্যের চূড়ান্ত রায়। রিয়ালের জন্য এটি হতে চলেছে— বাঁচা না মরার শেষ লড়াই।

আরও পড়ুন: নতুন টি-২০ অধিনায়ক লিটন, সহ-অধিনায়ক শেখ মেহেদী

অপরদিকে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের দিনে ঠিক উল্টো চিত্র ইংল্যান্ডে। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হোঁচট খেয়েছে গোলবন্যার এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে। ব্রেন্টফোর্ডের মাঠ জিটেক কমিউনিটি স্টেডিয়ামে ৭ গোলের এক দমবন্ধ করা লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৪-৩ গোলে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে রেড ডেভিলদের।

ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ইউনাইটেডের পক্ষেই গিয়েছিল। ১৪ মিনিটে ম্যাসন মাউন্টের গোলে এগিয়ে যায় অতিথিরা। তবে লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। ২৭ মিনিটে দুর্ভাগ্যজনকভাবে লুক শ নিজেদের জালেই বল জড়ালে সমতায় ফেরে ব্রেন্টফোর্ড। এরপর ৩৩ মিনিটে কেভিন শেডের গোলে লিড নেয় স্বাগতিকরা। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্রেন্টফোর্ড যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ৭০ মিনিটে কেভিন শেড নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। আর ৭৪ মিনিটে স্কোরলাইনে যুক্ত হয় ইউয়ান উইসার নাম—৪-১! তখন মনে হচ্ছিল, ইউনাইটেডের রক্ষণের পতন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

আরও পড়ুন: ম্যাচ হারের পুরো দায় নিজের কাঁধে নিলেন ধোনি

তবে হাল ছেড়ে দেয়নি রেড ডেভিলস। ৮২ মিনিটে গারনাচো একটি গোল করে ব্যবধান কমান। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে আমাদের গোলে ৪-৩ করে রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে— শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।

এই হারে চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সেরা দশে ফেরার স্বপ্নটাও আরও কঠিন হয়ে উঠল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য। রক্ষণভাগের দুর্বলতা, সাময়িক জাগরণ— সব মিলিয়ে আবারও সমালোচনার মুখে ইংলিশ জায়ান্টরা।

একদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যখন গোলবন্যার ম্যাচে হেরে বসে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে, অন্যদিকে শিরোপা উদযাপন করা লিভারপুল হেরেছে পরের মাঠে। শিরোপা নিশ্চিত করার পরের ম্যাচেই হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আর্নে স্লটের দলের। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছে তারা।

প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এটি মাত্র চতুর্থ ঘটনা, যেখানে শিরোপা নিশ্চিত করার পরের ম্যাচেই হারে চ্যাম্পিয়নরা। এর আগে ১৯৯৮ সালে আর্সেনাল, ২০০৬-এ চেলসি এবং ২০২০ সালে লিভারপুলই একই পরিণতির শিকার হয়েছিল।

এদিন শুরু থেকেই দাপট দেখায় চেলসি। চার মাস গোলহীন থাকার পর অবশেষে গোলের দেখা পেয়েছেন কোল পালমার। যদিও তা একেবারে শেষ মুহূর্তে। তবে নিজে গোল করার পাশাপাশি দলকে নেতৃত্ব দেন আক্রমণে। ম্যাচে আরও গোল করেন এনজো। এছাড়া আত্মঘাতী গোলও করে বসে স্লটের দল। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে একটা সময় ফিরেই আসে লিভারপুল, তবে শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি তারা।

ম্যাচ শেষে লিভারপুল অধিনায়ক ফন ডাইক অকপটে স্বীকার করেন, “আমরা চেয়েছিলাম জিততে, তবে চেলসি তার প্রাপ্যটা নিয়েছে। আমরা যেভাবে প্রতিপক্ষকে জায়গা দিয়েছি, সেটা আমাদের মানায় না।”

অন্যদিকে, কোচ আর্নে স্লট বলেন, “ফলাফল ভালো না হলেও ওদের জেতার প্রয়াস ছিল। খেলোয়াড়দেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যারা সিজনজুড়ে কষ্ট করেছে।”

চেলসি কোচ এবং খেলোয়াড়রাও ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কোল পালমার বলেন, “আমি জানি, অনেকদিন গোল পাইনি, কিন্তু সেটা আমাকে আরও ক্ষুধার্ত করেছে। ট্রল আর সমালোচনাকে পাত্তা দিই না। আজ দলকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি।”

এই জয়ের ফলে চলতি মৌসুমে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে আছে চেলসি। ৩৫ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ৬৫। অন্যদিকে, সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচেই ট্রফি নিশ্চিত করেছিল লিভারপুল।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর