ফুটবলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ বলতে চোখে ভাসে চকচকে ট্রফি, মোটা অঙ্কের চেক কিংবা ঝলমলে গিফট বক্স। কিন্তু নরওয়ের দক্ষিণের ছোট্ট শহর ব্রাইনে এসব পুরস্কারের সংজ্ঞাই যেন বদলে গেছে। এখানে মাঠের নায়ককে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়— একটি জীবন্ত ভেড়ার বাচ্চা!
শুধু ভেড়াই নয়, কখনো দেওয়া হয় এক বোতল দুধ, আবার কখনো চারটি ট্রে ভর্তি ডিম। শুনে মুচকি হাসি আসতেই পারে, কিন্তু এই ব্যতিক্রমী রীতি আসলে এক গভীর মাটিঘেঁষা বার্তা— ‘শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা।’
ব্রাইন শহরটি পরিচিত গবাদিপশু ও দুগ্ধশিল্পের জন্য। আর এখানকার ফুটবল ক্লাব ব্রাইন এফকে সেই কৃষিভিত্তিক পরিচয়কেই বুকভরা গর্বে ধারণ করে। সমর্থকেরা গলা ফাটিয়ে বলেন, “আমরা কৃষক, আর আমরা তাতেই গর্বিত।” মাঠের পাশেই থাকে ট্রাক্টর, যেখান থেকে ম্যাচ দেখা যায় ‘ভিআইপি’ টিকিটে!
আরও পড়ুন: ম্যাচে সুযোগ পেলে নিজের সামর্থ্য দেখাতে চান তানভীর

এই আবেগেরই বিস্তার ঘটেছে মাঠের পুরস্কারেও। এবার ম্যাচসেরা হয়ে ক্লাবটির মিডফিল্ডার অ্যাক্সেল ক্রাইগার হাতে পেয়েছেন একটি ভেড়ার বাচ্চা। সেটা এখন রাখা হয়েছে ‘হলান্ড কিওত’ নামের এক কসাইখানায়। তবে এটা কসাইয়ের ছুরি নয়— লালন-পালনের নিরাপদ আশ্রয়। গ্রীষ্মকালজুড়ে ভেড়াটিকে চারণভূমিতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বড় করা হবে। মাঝে মাঝে স্টেডিয়ামেও আনা হবে, দর্শকদের আনন্দ দিতে।
আর ঠিক শরতের শেষভাগে— এই জীবন্ত পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে ক্রাইগারের হাতে। মাঠে ঘাম ঝরিয়ে পাওয়া পুরস্কারটা তখন হবে এক পশমে মোড়া আবেগের জাদুঘর!
তবে ক্রাইগার একা নন— এর আগে গোলকিপার ইয়ান দে বোয়ের পেয়েছিলেন চার ট্রে ডিম। আরেকজনের হাতে উঠেছে এক বোতল দুধ। এভাবে মাঠের পারফরম্যান্স আর কৃষির গন্ধ মিশে যাচ্ছে এক গভীর আত্মপরিচয়ে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আটকা পড়েছেন ভারতীয় সম্প্রচারকর্মীরা

ব্রাইন এফকে যেন জানিয়ে দিচ্ছে, ফুটবল শুধু গ্ল্যামারের খেলা নয়— এটা মাটির ঘ্রাণ, প্রাণের সংযোগ, আর জীবনের গল্প। এখানকার ভেড়া-দুধ-ডিম তাই পুরস্কার নয়, একান্ত নিজের হয়ে ওঠা ঐতিহ্যের প্রতীক।