বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ব্রাজিলিয়ান ছোঁয়ায় বেতিসের ইতিহাস, ফাইনালে ইউনাইটেডও

ইউরোপিয়ান ফুটবলে রাতটা যেনো ছিল ব্রাজিলিয়ানদের দখলে। রিয়াল বেতিসের হয়ে দুর্দান্ত খেলে দলকে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠিয়েছে অ্যান্টোনি। একই রাতে ক্যাসেমিরোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড উড়িয়ে দিয়েছে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে।

ফিওরেন্টিনার মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল বেতিস। যার শুরুটা করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে জানুয়ারিতে এই দলে ধারে খেলতে আসা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার অ্যান্টোনি। ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। তার বাঁকানো শট থামাতে ব্যর্থ হোন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। তবে এরপরেই চমক দেখায় ফিওরেন্টিনা।

আরও পড়ুন: হামজার ঝলকে ফাইনালে এক পা শেফিল্ডের

ঘরের মাঠে দর্শকদের সামনে ৮ মিনিটের ম্যাজিকে ম্যাচটা নিজেদের দখলেই নিয়ে নেয়৷ এবং সেই কাজটা একাই করেন রবিন গোসেন। ৩৪ মিনিটে দারুণ এক হেডে ম্যাচে সমতায় ফেরান তার দলকে। যদিও তখনও দুই লেগের গোলের এগ্রিগেটে পিছিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। তবে সেই হেডেই আবারও দলকে ম্যাচে ফেরান রবিন গোসেন। ৪২ মিনিটে তার মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় বেতিসের জালে। ফলে দুই মিলিয়ে গোলের এগ্রিগেট দাঁড়ায় ৩-৩। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত মিনিটে। আর সেখানেই আরও একবার দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান সেই অ্যান্টোনি।

৯৭ মিনিটে বক্সের ভেতর তার বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান মরোক্কান ফুটবলার আব্দে অ্যাজালজুলি। শেষ পর্যন্ত ১২০ মিনিটের এই মহারণে ২-২ গোলে ম্যাচ ড্র হলেও আগের লেগের ১ গোলের এগিয়ে থাকার সুবাধে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের এগ্রিগেটে জিতে নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল বেতিস।

এদিন আলাদা করে নজর কেড়েছেন অ্যান্টনি ম্যাথিউস দস সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার আয়াক্সে দারুণ মৌসুম কাটিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার পর থেকেই যেনো ক্যারিয়ারে শনির দশা লেগেছিল। রেড ডেভিলদের হয়ে ৯৬ ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ১২ গোল। প্রতি ম্যাচেই থাকতেন নিজের ছায়া হয়ে, ট্রল-সমালোচনার ভিড়ে হারিয়ে ফেলছিলেন নিজের সহজাত প্রতিভাও। সেই অ্যান্টনিই যখন জানুয়ারিতে লোনে খেলতে আসলেন বেতিসে। ঠিক তখন থেকেই যেনো নিজের হারিয়ে ফেলা ছন্দ ফিরে পেলেন। স্প্যানিশ এই ক্লাবের হয়ে এ পর্যন্ত ২১ ম্যাচ খেলে ৮ গোলের পাশাপাশি করেছেন ৫টি এসিস্ট। এছাড়া চলতি মৌসুমে লা-লিগায় তারা  রিয়ালের মতো দলকে হারিয়ে দিয়েছিল। আর ড্র করেছিল বার্সার সাথে।

আরও পড়ুন: ইতিহাস বলছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে পিএসজি!

আর সেই অ্যান্টোনির নেতৃত্বেই একমাত্র স্প্যানিশ দল হিসেবে চলতি মৌসুমে কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ফাইনালেও উঠেছে রিয়াল বেতিস। ইউরোপা কনফারেন্স লিগের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব চেলসি। এবার দেখার পালা, সব ভালো যার শেষটা ভালো করতে পারেন কিনা অ্যান্টোনির রিয়াল বেতিস।

অন্যদিকে রাতের আরেক ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চলতি মৌসুমে একমাত্র দল হিসেবে কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ম্যাচে এখনো হারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অ্যাথলেটিক বিলবাওকে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-১ গোলে হারিয়ে এবার তারা উঠে আসলো ইউরোপা লিগের ফাইনালে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম। অর্থাৎ, আরও একবার ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল দেখতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবল ভক্তরা।

ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বিলবাওর ঘরের মাঠেই ৩-০ গোলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছিল রুবেন আমোরিমের শিষ্যরা। তবুও রেড ডেভিলদের কোচ জানিয়েছিল তারা এখনো নিশ্চিন্ত নয়। তবে ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে ফিরতি লেগেও ৪-১ গোলের বড় জয়ে সেই দুঃশ্চিন্তা কাটিয়েই এবার ফাইনালে উঠেছে তারা। যেখানে বড় ভূমিকা রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো।

যদিও ম্যাচের প্রথম গোলটা আসে বিলবাওর মিকেলের পা থেকেই। ৩১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে দলকে এগিয়ে নেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। যদিও দুই লেগের গোলের এগ্রিগেটে তখনও ৩-১ গোলে পিছিয়েই ছিল তারা। এরপর প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলের স্কোরকার্ড রেখেই বিরতিতে যায় দুই দল।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের মোড় ঘোরান বদলি নামা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ট। ৭২ মিনিটে বক্সের ভেতর জটলার মাঝ দিয়ে দারুণ এক শটে প্রতিপক্ষের গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি। এর ৭ মিনিট পর আবারও গোলের দেখা পায় রেড ডেভিলরা।

এবার ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি কিক থেকে হেডে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো। এই নিয়ে ইউরোপা লিগে টানা তিন ম্যাচে গোল পেলেন তিনি। কোয়ার্টারের সেই ম্যাচে রেড ডেভিলদের মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে এনে ক্যাসেমিরো গোল পেয়েছিলেন সেমিফাইনালের প্রথম লেগেও। আর এই ব্রাজিলিয়ানের কল্যানে ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে কফিনের শেষ পেরেকটা তখনো ঠোকা বাকি ছিল ইউনাইটেডের।

আরও পড়ুন: হামজার শেফিল্ডই খেলবে প্রিমিয়ার লিগ– সুপার কম্পিউটারের ভবিষ্যদ্বাণী

৮৫ মিনিটে আমাদের পাস থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান রসমুন্ড হয়লুন্ড। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সাথে যোগ করা অতিরিক্ত মিনিটে ম্যাচের শেষ গোল ও বদলি নেমে দ্বিতীয় গোলের দেখা পান ম্যাসন মাউন্ট। যদিও এখানে বিলবাওর গোলকিপারের দায়ও ছিল অনেকটাই।

বক্সের বাইরে বল নিয়ে এসে নিজের দলের ফুটবলারকে পাস দিতে যান তিনি। কিন্তু, ভুলক্রমে তার পাস পেয়ে যায় মাউন্ট। আর প্রায় মাঝমাঠ থেকেই বাঁ পায়ের জোরালো এক শটে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আরও একবার এগিয়ে দেন এই ম্যাচে। সব মিলিয়ে ৪-১ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রুবেন আমোরিমের দল৷ আর দুই লেগ মিলিয়ে ৭-১ গোলের বড় জয়ে ফাইনালেও পৌছে গিয়েছে তারা।

আগামী ২২ মে বিলবাওর মাটিতেই ইউরোপা লিগের ‘অল ইংলিশ’ ফাইনালে মুখোমুখি হবে টটেনহ্যাম ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর