আর্সেনালের হয়ে দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে জয় এনে দিলেন ডেকলান রাইস। তার এই গোলেই নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে হারিয়ে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা নিশ্চিত করল মিকেল আর্তেতার দল।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য বেশি ভালো খেলতে পারেনি আর্সেনাল। বরং প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল নিউক্যাসলই। দলটির মূল স্ট্রাইকার অ্যালেক্সান্ডার ইসাক ইনজুরির কারণে না খেললেও আক্রমণে কোনো ঘাটতি ছিল না। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটেই পাঁচবার গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় নিউক্যাসল। তবে সবগুলোই ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক দাভিদ রায়া।
দ্বিতীয়ার্ধে এসে খেলায় কিছুটা গতি আনেন আর্তেতা। ৫৫তম মিনিটে মার্টিন ওডেগার্ডের পাস থেকে দূরপাল্লার এক শটে দারুণ গোল করেন ডেকলান রাইস। এই গোলেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: দিল্লির একপেশে হারের দিনে বল হাতে উজ্জ্বল মুস্তাফিজ
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় ৭১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বেশ ভালোভাবেই অবস্থান গেড়েছে আর্সেনাল। তাদের নিচে থাকা নিউক্যাসেল ইউনাইটেড, চেলসি এবং অ্যাস্টন ভিলার সমান ৬৬ করে পয়েন্ট। যদিও টেবিলের ছয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি এক ম্যাচ কম খেলে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে উঠার লড়াইয়ে এখনো টিকে আছে।
ম্যাচ শেষে ওডেগার্ড বলেন, “আমাদের স্বীকার করতে হবে, লিগে আমরা খুব একটা ভালো পারফর্ম করতে পারিনি।” তবে রাইসের এই গোল কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে দলটির সমর্থকদের মধ্যে। এই মৌসুমে আর্সেনালের হয়ে এটি রাইসের ১৯তম গোল ইনভলভমেন্ট।
এদিকে নিউক্যাসল এই হারের পরও শীর্ষ পাঁচে থেকে মৌসুম শেষ করার ভালো সম্ভাবনা রেখেছে। শেষ ম্যাচে এভারটনের বিপক্ষে জয় পেলেই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট পাবে এডি হাওয়ের দল।

অন্যদিকে লেস্টার সিটির হয়ে নিজের শেষ ম্যাচটি গোল করে রাঙিয়ে রাখলেন জেমি ভার্ডি। রোববার ইপসুইচ টাউনের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছে লেস্টার, আর ম্যাচে প্রথম গোলটি করেছেন ভার্ডি নিজেই— যেটি ছিল ক্লাবের হয়ে তার ২০০তম গোল।
এই ম্যাচেই লেস্টারের হয়ে নিজের ৫০০তম ম্যাচ খেললেন ৩৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। ঠিক ১৩ বছর আগে ফ্লিটউড টাউন থেকে লেস্টারে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচের ২৮ মিনিটে জেমস জাস্টিনের পাস থেকে বল পেয়ে গোলটি করেন ভার্ডি। গোল করার পর তার পরিচিত ‘চুপ’ থাকার সেলিব্রেশন করে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের নীরব বানিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন: ব্যর্থ সাকিব, তবুও জয় লাহোরের
দ্বিতীয়ার্ধে এসে লেস্টারের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইসি ম্যাকআটিয়ার। উইলফ্রেড এনডিডির পাস থেকে ৬৯ মিনিটে জোরালো শটে নিজের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ গোলটি করেন তিনি।

ম্যাচশেষে ম্যাকআটিয়ার বলেন, “প্রিমিয়ার লিগে প্রথম গোল করতে পারাটা দারুণ অনুভূতি। আর ভার্ডির মতো একজনের সঙ্গে একই দলে খেলার সুযোগ পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। সে আবারও দেখিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিভাবে গোল করতে হয়।”
জয়ের ফলে লেস্টার পয়েন্ট তালিকায় ১৮ নম্বরে উঠেছে, যেখানে ইপসুইচ রয়েছে ১৯তম স্থানে। যদিও দুই দলই আগেই অবনমিত হয়েছে। ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর ইপসুইচও কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল। শেষদিকে লেইফ ডেভিস গোল করেছিলেন, তবে অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়।
৮০ মিনিটে মাঠ ছাড়ার সময় সতীর্থদের গার্ড অব অনার ও দর্শকদের করতালিতে বিদায় নেন ভার্ডি। ক্লাব আগে থেকেই জানিয়েছিল, ইপসুইচের বিপক্ষেই হবে তার শেষ হোম ম্যাচ। যদিও লেস্টারের মৌসুম শেষ হবে আগামী সপ্তাহে বোর্নমাউথের মাঠে ম্যাচ দিয়ে।
ভার্ডি লেস্টারের হয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন ২০১৬ সালে, দলকে এনে দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। এরপর ২০২১ সালে জিতিয়েছিলেন এফএ কাপ।

আরও পড়ুন: রোনালদো জুনিয়রের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল
এদিকে প্রিমিয়ার লিগে টানা চার ম্যাচ জয়ের পর অবশেষে হোঁচট খেল ব্রেন্টফোর্ড। রবিবার ঘরের মাঠে ফুলহ্যামের কাছে ৩-২ গোলে হেরে গেছে তারা। আর এই জয়ের মধ্য দিয়ে আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় খেলার ক্ষীণ আশা টিকিয়ে রাখলো ফুলহ্যাম।
ইউরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ম্যাচে জেতাই ছিল ফুলহ্যামের একমাত্র পথ। ম্যাচের শুরুটা তারাই ভালো করে। ৩৯তম মিনিটে আদামা ট্রাওরের ক্রসে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন রাউল হিমেনেজ। তবে মাত্র ছয় মিনিট পরেই সমতায় ফেরে ব্রেন্টফোর্ড। ফুলহ্যামের অর্ধে ট্রাওরের কাছ থেকে বল কাড়েন ব্রায়ান এম্বুয়েমো। উইসার পাস পেয়ে দূরের পোস্ট বরাবর নিচু শটে গোলটি করেন এই ফরোয়ার্ড।
এক পর্যায়ে পেনাল্টি থেকে এগিয়েও যেতে পারতো ব্রেন্টফোর্ড, কিন্তু ফুলহ্যাম গোলরক্ষক বার্ন্ড লেনো সেটি ঠেকিয়ে দেন। তবে ৪৩তম মিনিটে অবশেষে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ফুলহ্যাম ডিফেন্স ক্লিয়ার করতে না পারায় মাইকেল কায়োডের লং থ্রো থেকে বল পেয়ে সেটি মাথা দিয়ে বাড়ান নরগার্ড, আর ঠিক লাইনের ওপর থেকে তা জালে ঠেলেন উইসা।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ কিছুটা মন্থর হলেও ৬৮তম মিনিটে সমতায় ফেরে ফুলহ্যাম। চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া মিডফিল্ডার টম কেয়ারনি হেডে গোলটি করেন, যিনি সম্প্রতি লিগ ওয়ান রানারআপ রেক্সহ্যামের সঙ্গে যুক্ত থাকার গুঞ্জনে আছেন। এরপর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন হ্যারি উইলসন। ইনজুরি টাইমে তার বাঁ পায়ের কার্লিং শটে জাল খুঁজে পায় বল, ফুলহ্যামও তুলে নেয় দারুণ এক জয়।
আরও পড়ুন: কাকা-ইতোদের সাথে প্রীতি ম্যাচ খেললেন তাবিথ আউয়াল
ম্যাচ শেষে ব্রেন্টফোর্ড কোচ থমাস ফ্র্যাংক বললেন, “এটা এখন আর ‘জিটেক স্টেডিয়াম’ নয়, বরং ‘গোল-টেক’। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম, পেনাল্টি মিস করেছি, অনেক ভালো সুযোগ তৈরি করেছি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ ছিল সমান তালে। ২-০ ব্যবধানে হারা উচিত হয়নি আমাদের।”
এই হারে ব্রেন্টফোর্ড নেমে গেছে অষ্টম স্থানে, এক পয়েন্টের ব্যবধানে তাদের পেছনেই আছে দশম স্থানে থাকা ফুলহ্যাম।

এছাড়া একই দিনে ঘরের মাঠে নটিংহ্যাম ফরেস্টের কাছে হেরেছে ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড। ম্যাচের শুরুতেই মর্গান গিবসের গোলে এগিয়ে যায় নটিংহ্যাম। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে নিকোলার গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করে সফরকারীরা। যদিও ম্যাচের ৮৬ মিনিটে বোয়েন গোল করে, তবে তাতে শুধু ব্যবধানই কমে ২-১ এ নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের সাতে নিজেদের জায়গা ধরে রাখলো নটিংহ্যাম ইউনাইটেড।
আরও পড়ুন: আকবরের ব্যাটে প্রত্যাবর্তনের ঝলক