অবশেষে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন শমিত সোম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটিকে জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগজয়ী এই মিডফিল্ডার। দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্নপূরণ সম্ভব হয়েছে সবার ভালোবাসা, সমর্থন ও সহায়তায়— এমনটাই বলছেন এই ফুটবলার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় শমিত বলেন, “হ্যালো সবাইকে, আমি শমিত সোম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে ফুটবল খেলতে পারাটা আমার জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য। সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি, যারা এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছেন এবং এটি সম্ভব করে তুলেছেন। ধন্যবাদ!”
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসতে চান কুইন সুলিভান

কয়েকদিন আগেই হাতে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট। এরপর ফিফার প্লেয়ার্স কমিটির সবুজ সংকেতও এসে গেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামার পথে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা পেরিয়ে এসেছেন তিনি। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচেই লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারের।
এর আগে বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম জানিয়েছিলেন, ১ মে কানাডার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন শমিতকে ছাড়পত্র দেয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করে তিনি পাসপোর্ট হাতে পান।
তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে শমিত একেবারে নতুন নন। ২০২০ সালে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। এরপর জাতীয় দলে আর ডাক না পেলেও ক্লাব পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন নিয়মিত পারফরম্যান্সে। বর্তমানে তিনি কানাডার ক্লাব ক্যাভালরি এফসির হয়ে খেলছেন এবং দলটির হয়ে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ শিরোপাও জিতেছেন।

এবার নাড়ির টানে ফিরতে চাইছেন শিকড়ে। বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা তার কাছে শুধু পেশাদার দায়িত্ব নয়, বরং আবেগ ও গর্বের ব্যাপারও বটে। কিছুদিন আগে সাংবাদিক আবু সাদাতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শমিত বলেছিলেন, “আমি প্রচণ্ড এক্সাইটেড। হোপফুলি, পাসপোর্টের কাজটা হয়ে গেলেই বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারব।”
কেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এক সময় দেখেছি বাংলাদেশের ফুটবলে উন্নতি হচ্ছে। হামজা চৌধুরীর মতো বড় ফুটবলারও গিয়েছে। সে যদি যেতে পারে, আমি কেন পারব না?”
আরও পড়ুন: ক্যান্সার জয় করে মাঠের নায়ক ফ্রানচেস্কো আচেরবি
শমিত আরও জানান, তিনি বাংলাদেশ দলের কয়েকজন খেলোয়াড়কে চেনেন এবং ফলো করেন, “আমি জামাল ভূঁইয়া, কাজেম শাহ, তারেক কাজিদের চিনি। সবসময় তাদের ফলো করেছি। মনে হয়েছে, এবার সময় এসেছে খেলার।”

এটাই হবে শমিত সোমের প্রথমবার বাংলাদেশে আসা। জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা তার কাছে জীবনের গর্বের একটি অধ্যায়। তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণ রেসপন্স পাচ্ছি। মুখিয়ে আছি তাদের জন্য খেলার। ধন্যবাদ সবাইকে। আমি অপেক্ষা করছি। আশা করি, আমরা ভালো করব।”
হামজা চৌধুরীর পর এবার আরও এক ইউরোপিয়ান ঘরানার ফুটবলারকে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিকড়ের টানে দেশে ফিরে লাল-সবুজের জার্সিতে নতুন ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় শমিত সোম।