“আমি এখানে থাকতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত। এখন যেন সবকিছু সত্যি মনে হচ্ছে” — বাংলাদেশে পা রেখেই এমন আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় ভাসলেন দেশের ফুটবলের নতুন সম্ভাবনার নাম, শমিত সোম। একসময় কানাডার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা এই মিডফিল্ডার এবার শেকড়ের টানে ফিরেছেন জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করতে। তাঁর লক্ষ্য এখন একটাই— লাল-সবুজের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্যুতি ছড়ানো।
কানাডায় বেড়ে ওঠা, সেখানেই ফুটবলে পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু। কিন্তু দেশান্তরের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে হৃদয়ের গভীরে যে শেকড় ছিল বাংলাদেশের, সেটিই টেনে আনল তাঁকে ঢাকায়। বুধবার (৪ জুন) টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করেন শমিত। বিমানবন্দরে নেমেই জানান নিজের স্বপ্নের কথা—“বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আমরা কিছু ভালো করে দেখাতে চাই।”
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশি’ হয়ে প্রথমবার বাংলাদেশে এসে যা বললেন শমিত
হামজা চৌধুরী, ফাহমিদুল ইসলামদের পর বাংলাদেশি বংশদ্ভূত প্রবাসে থাকা এই ফুটবলারদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে এখন শমিত সোম। তবে তাঁর ক্ষেত্রে রয়েছে এক বড় পার্থক্য— শমিতই একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার যিনি এরইমধ্যে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেছেন।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন তিনি। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে হাভিয়ের কাবরেরা ঘোষিত ২৬ সদস্যের দলে আছেন শমিতও। যদিও ভুটানের বিপক্ষে ৪ জুনের প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামছেন না তিনি, কারণ দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তি এবং অনুশীলনের ঘাটতি। তবে শমিত জানিয়ে দিলেন—”এবার সবার সঙ্গে একসাথে ট্রেনিং করার অপেক্ষায় আছি।”
প্রস্তুতি ম্যাচের পর ১০ জুন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অংশ নিয়েই নিজের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান শমিত। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা, দেশের পতাকা বুকে ধারণ করে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার সুযোগ— এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রস্তুত তিনি।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকরা মাটিতে বসায় জামাল বললেন ‘দেখে কষ্ট লাগছে’
তিনি আরও বলেন, “আমি আমার নতুন সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করতে, মাঠে নামতে, অনুশীলন শুরু করতে এবং সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে মুখিয়ে আছি।”
বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন করে আশার সঞ্চার করছেন এই তরুণ। শেকড়ের প্রতি দায়বদ্ধতা, দেশের হয়ে খেলার গর্ব এবং প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার প্রতিজ্ঞা— এই তিনেই শমিত সোম যেন এক নতুন কাহিনির সূচনা। তাঁর চোখে এখন একটাই লক্ষ্য: দেশের হয়ে লড়াই করে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে দলকে পৌঁছে দেওয়া।
জামাল ভূঁইয়াদের সঙ্গে এবার নতুন এক নাম, নতুন এক গল্প— যার শুরুটা হলো আহ্লাদে ভরা এক বাক্যে: “বাংলাদেশের একজন হয়ে গর্বিত।”
আরও পড়ুন: ভুটানের অধিনায়কের চোখে বাংলাদেশই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল