বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ফিফা বিশ্বকাপ। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে ২২টি আসর। ২০২৬ সালে ২৩ তম আসরটি আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো।
প্যারাগুয়েকে হারানোর মাধ্যমে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকেটও নিশ্চিত করতে পেরেছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিতের পাশাপাশি এক অনন্য রেকর্ড গড়েছে ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত কোন বিশ্বকাপ মিস হয়নি এই দলের।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার গা বাঁচানো ড্র
এক বা একের অধিকবার বিশ্বকাপ জিতেও বিশ্বকাপের আসর থেকে বাদ পড়েছে অনেক দল। এই তালিকায় আছে আর্জেন্টিনা, জার্মানির মত দল। বাদ পড়ার কারণ হিসেবে আছেন যুদ্ধ, কোয়ালিফাই করতে না পারা, নিজ থেকে সরে দাঁড়ানো সহ নানা কারণ। সেক্ষেত্রে ব্রাজিল প্রতিবারই বিশ্বকাপ খেলেছে এবং পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছে।
১৯৫৮ সালে শিরোপার মুখ দেখে ব্রাজিল। ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। এই আসরেই আসে ফুটবলের বরপুত্র পেলে। এরপর ১৯৬২ সালে চিলিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারায় ব্রাজিল। সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের টিম স্পিরিট বিশ্বে দারুণ প্রশংসিত হয়।
এরপর ১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল। সেই দলকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ব্রাজিল দল বলে ধরা হয়। পেলের নেতৃত্বে অসাধারণ আক্রমণাত্মক খেলা প্রদর্শন করে ব্রাজিল দল।
ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় ব্রাজিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে চাপে রেখেই কাঙ্খিত সাফল্য সিঙ্গাপুরের
এরপর বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে ২৪ বছরের দুরত্ত্ব তৈরি হল ব্রাজিলের। এই ২৪ বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপ পায়নি। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্টে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় তারা। রোমারিও, বেবেতো, দুঙ্গার নেতৃত্বে শক্তিশালী দল ছিল ব্রাজিল। ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র এরপর পেনাল্টিতে ব্রাজিল ৩-২ গোলে জয়ী হয়। এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম পেনাল্টি-নির্ধারিত ফাইনাল।
ব্রাজিল সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতে ২০০২ সালে। এই বিশ্বকাপটি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে অনুষ্ঠিত হয়। রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো—ত্রয়ীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শিরোপা নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল। ফাইনালে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারায় ব্রাজিল। সেই বিশ্বকাপে রোনালদো একাই করেন ৮ গোল, যার মধ্যে ফাইনালে রয়েছে দুটি গোল।
বিশ্বকাপে একাধিকবার শিরোপা জেতা বেশ কয়েকটি দল বিভিন্ন সময় আসরে অংশ নিতে পারেনি। এর মধ্যে আছে ইতালি, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড। ইতালি ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২, ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে। তবে ১৯৫৮ ও ২০১৮ সালের আসরে কোয়ালিফাই করতে ন পারায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
ফুটবলের আরেক পরাশক্তি জার্মানি। একবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে নিষিদ্ধ ছিল দলটি। জার্মানি ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে।
আরও পড়ুন: সৌদিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার
ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত মোট বিশ্বকাপ জিতেছে তিনবার। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপ জিতেছে অনেক বছর পর। তারাও অংশ নিতে পারেনি তিন বিশ্বকাপে। ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৪ সালে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এর মধ্যে ১৯৩৮ সালে বিশ্বকাপ আবার ইউরোপে আয়োজন হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
ফ্রান্স এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে দুইবার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা জিতে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে জিনেদিন জিদানের জোড়া গোলের কল্যানে প্রথমবার শিরোপা জিতে দলটি। তবে এখন পযন্ত মোট চারবার বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি তারা। এর মধ্যে তিনবার অর্থাৎ ১৯৬২, ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি দলটি। এছাড়া ১৯৫০ সালের আসরে ফ্রান্স শুরুতে খেলতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু পরে গ্রুপ বিভাজন এবং ভ্রমণ সমস্যার কারণে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপরই আসে উরুগুয়ের নাম। একবার ফুটবল বিশ্বকাপ বয়কট ও একবার কোয়ালিফাই করতে না পারার কারণে মোট দুইবার বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি তারা। ১৯৩৪ সালে ইউরোপীয় দেশগুলো দক্ষিণ আমেরিকায় বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি, তাই উরুগুয়ে সেই প্রতিবাদে ১৯৩৮ সালের আসরে খেলেনি অর্থাৎ বয়কট করেছিল। তবে তারা এখন পর্যন্ত মোট দুইবার শিরোপা জিতেছে।
আরও পড়ুন: ভক্তদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হামজার বার্তা, ‘আবার ফিরবো, ইনশাআল্লাহ’
সর্বশেষ দল হিসেবে আছে ইংল্যান্ড। তারা একবার মাত্র বিশ্বকাপ জিতেছে। সেটা হচ্ছে ১৯৯৬ সালে। তবে প্রথম দিকে অর্থাৎ ১৯৩০, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ড ফিফার সদস্য ছিল না। তাই, দলটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।