বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ফাহমিদুল দশে দশ, হতাশ করেননি তাজ-কাজেমও

ম্যাচের আগেও সবচেয়ে বেশি লাইমলাইটে ছিলেন একজন হামজা চৌধুরী। ইংলিশ লিগের পরিচিত এই মুখ অবশ্য তার কারণও দেখিয়েছেন মাঠেই। নিজের আন্তর্জাতিক প্রথম গোলটাই কিনা করলেন স্বাগতিক দর্শকদের সামনে। তবে একই ম্যাচে দুর্দান্ত আরও কয়েকজন। যার একজন অবশ্যই ফাহমিদুল ইসলাম। ভারতের বিপক্ষে তাকে না নেওয়ায় যে ঝড় উঠেছিলো ভক্তদের মাঝে, সেটা মাঠেই প্রমাণ করে দিলেন এই তরুণ ফুটবলার।

২০১৬ সালের এই ভুটানের কাছে হেরেই ইতিহাসের কলঙ্কে ঢেকে যাচ্ছিলো বাংলাদেশের ফুটবল। কেউ ভাবেনি, প্রায় ৯ বছর পর আবার এই ভুটানকে হারিয়েই এক নতুন ভোরের সূচনা করবে লাল-সবুজের দল। ২০২৫ সালে এসে বদলে গেছে অনেক কিছু। কিন্তু সবচেয়ে বড় বদলটা যেন এসেছিলো ১৬ নম্বর জার্সিধারী এক তরুণের চোখেমুখে— ফাহমিদুল ইসলাম, যে নিজের অভিষেক ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের ফুটবল যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তার চিহ্ন তিনি নিজেই।

আরও পড়ুন: দুর্দান্ত হামজায় ভুটানকে হারাল বাংলাদেশ

প্রথম মিনিট থেকেই দুরন্ত ছন্দে ছিলেন ফাহমিদুল। তৃতীয় মিনিটে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করে রাখেন রাকিব হোসেন, তবে তার কাটব্যাকে গোল করতে পারেননি জামাল। তারপর মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে আবারও দেখা মেলে ফাহমিদুলের নির্মিত আক্রমণের— কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ভেসে যায় ভুটানের ডিফেন্সে। তবুও আক্রমণের ঢেউ থামেনি।

ম্যাচ যত গড়িয়েছে, ততই চওড়া হয়েছে ফাহমিদুলের খেলার পরিসর। গতির ঝড় তুলে একের পর এক আক্রমণ তৈরি করেছেন। ৩০ মিনিটে দুর্দান্ত এক শট নেন, যেটি ফিরিয়ে দেন ভুটানের গোলরক্ষক। ফিরতি বলেও গোলের কাছাকাছি যান জামাল, কিন্তু ফল আসে না। প্রথমার্ধের শেষ দিকে হেডে গোলের সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে ফাহমিদুলের ছাপ এতটাই গভীর ছিলো যে, দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নেওয়ার সময় পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে করতালিতে অভিনন্দন জানিয়েছে। অভিষেক ম্যাচেই স্ট্যান্ডিং অভেশন— এটা কি কেবল কল্পনার গল্প? না, এটা সত্যি হয়েছে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে।

গ্যালারির এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহমিদুলের বাবা-মা। ম্যাচ শেষে তাদের দিকেই ছুটে যান এই তরুণ। সেই দৃশ্য যেনো বলে দিচ্ছিল, এটি কেবল একটি ম্যাচ নয়, এটি একটি স্বপ্নের যাত্রা, একটি নতুন শুরুর নাম। দেশের জন্য খেলার স্বপ্ন যাঁরা প্রবাসে বসে লালন করেছেন, তাদের তরফ থেকেও যেন ফাহমিদুল হয়ে উঠেছেন নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। অর্থাৎ, নিজের প্রথম ম্যাচেই ফাহমিদুল ছিলেন দশে দশ।

আরও পড়ুন: জামালের এসিস্টে হামজার গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ

তার সাথে সাথে নজর কেড়েছেন আরেক অভিষিক্ত তাজ উদ্দিন। দারুণ পজিশনিং, ধারালো রান আর বোঝাপড়ায় জানিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দলে তার জায়গা পাকাপোক্ত হতে সময় লাগবে না। মাঝমাঠে ত্রিমুখী সাফল্যের গল্পও লেখা হয়েছে— হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া ও কাজেম শাহকে একসাথে খেলতে দেখে অনেকেই চোখ কচলেছেন। কাজেম শাহ ম্যাচ জুড়েই ছিলেন সপ্রতিভ, বল কন্ট্রোল থেকে পাসিং, সব ক্ষেত্রেই রেখেছেন স্বাক্ষর। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ফুটবলেও কাজেম শাহ হতে পারেন নতুন এক সেনানী।

ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোল করেছেন হামজা চৌধুরী। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে হেডে বল জালে জড়ান এই ইংলিশ লিগের পরিচিত মুখ। দেশের জার্সিতে এটি তার প্রথম গোল হলেও, তা যেন ছিলো নতুন যুগের প্রথম কিস্তি। সেই গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি দুর্দান্ত শট থেকে গোল আসে সোহেল রানার পা থেকে। দুটি গোলই যেমন ছিলো ট্যাকটিক্যালি সঠিক পরিকল্পনার ফসল, তেমনি ছিলো আগ্রাসী ফুটবলের ইঙ্গিত।

এক সময় সমালোচনায় ডুবে থাকা বাংলাদেশ দল ভুটানের বিপক্ষে খেলেছে সাহসী ছন্দে। ডিফেন্সে আগ্রাসন, মিডফিল্ডে ভারসাম্য, আর আক্রমণে গতি— সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের ক্যানভাসে এক নতুন রঙ লেগেছে। যে ভুটানের কাছে হার কখনও জাতীয় অপমান হয়ে ধরা দিয়েছিল, তাদেরই বিপক্ষে এমন আধিপত্য বিস্তার করে জয় যেনো প্রতীক হয়ে উঠেছে নবজাগরণের।

ফাহমিদুলদের এই বাংলাদেশ ভয় পায় না। ভারতের বিপক্ষে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ড্র নিয়ে ফিরেছিলেন হামজারা। কিন্তু ভুটানের বিপক্ষে ভুল করেননি। সেই ভুল শুধরে এবার স্টেডিয়ামজুড়ে গর্জে উঠেছে “বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!” চিৎকার।

আরও পড়ুন: হামজার গোলে এগিয়েই বিরতিতে বাংলাদেশ

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর