দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই কী তবে কাল হলো হামজার জন্য? হারা ম্যাচেও প্রায় ৯০% সফল পাস দেওয়া অপ্রতিরোধ্য হামজাই ম্যাচ শেষে রোষানলে পড়েন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় থেকে দর্শকদের।
বার্নলির মাঠে শেফিল্ড ইউনাইটেডের পরাজয়ের রাতটিকে অনেকেই মনে রাখবেন দলগত হতাশা কিংবা প্রিমিয়ার লিগে সরাসরি উন্নীত হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হিসেবে।
কিন্তু এর বাইরেও যে এক ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হয়ে থাকল, তা হলো হামজার দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা। পুরো ৯০ মিনিটজুড়ে মাঝমাঠে তার ছিল দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ, নির্ভরযোগ্য পাসিং, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙা থেকে শুরু করে বলের দখলে প্রভাব—সব মিলিয়ে প্রায় নিখুঁত একটি ম্যাচ খেলেন তিনি। প্রায় ৯০ শতাংশ সফল পাস, পাঁচটি ক্লিয়ারেন্স, সাতবার বল উদ্ধার কিংবা ৭৫ বার বল টাচ—এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, মাঠে তিনি ছিলেন পুরোপুরি নিজের দায়িত্বে নিবেদিত। কিন্তু সব ছাপিয়ে গেল ম্যাচশেষে ঘটে যাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো।
আরও বলুন: জয় কেন অফস্টাম্পের বাইরের বলে বারংবার পরাস্ত হচ্ছেন?

মাঠের খেলায় হার-জিত থাকবেই। কিন্তু যখন একজন খেলোয়াড় মাঠ ছাড়ার পথে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় থেকে সমর্থকের কটূক্তি, আক্রমণাত্মক আচরণ, এমনকি সম্ভাব্য বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হন—তখন প্রশ্নটা শুধু ফলাফল বা পারফরম্যান্সে আটকে থাকে না। বরং উঠে আসে আরও বড় প্রশ্ন— একজন পেশাদার খেলোয়াড় কি নিরাপদ তার কাজের জায়গায়?
হামজা চৌধুরীর সঙ্গে যেভাবে তর্ক, উত্তেজনা ও অবমাননাকর আচরণে জড়ানো হয়েছে, সেটা শুধু তার ব্যক্তিগত অপমানই নয়, বরং গোটা ফুটবল ব্যবস্থার জন্যই এক গভীর উদ্বেগের বার্তা। মাঠে পুলিশ ও নিরাপত্তার উপস্থিতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রয়োজনে সেই প্রতিরক্ষাই দেখা গেল না। কোচ ক্রিস উইল্ডার ক্ষোভে বলেছিলেন, “যেখানে নিরাপত্তা থাকার কথা, সেখানে আমরা কাউকেই পাইনি।”

অথচ একজন খেলোয়াড় মাঠে নিজের শতভাগ দিয়ে খেলেন এমন মুহূর্তে, পরাজয় স্বীকার করেও মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। কিন্তু টার্ফ মোরে সেই অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হলো হামজার কাছ থেকে। একদল উন্মত্ত সমর্থকের সামনে, যাদের উল্লাস সহ্য করতে হলো অপমানের বিনিময়ে, সেখানে পেশাদারিত্বের কোনো মূল্য থাকল কি? নিরাপত্তার অভাব, নিয়ম লঙ্ঘন, এবং খেলোয়াড়দের প্রতি অসম্মান—সব মিলিয়ে ইংলিশ ফুটবলের উঁচু আসনের নিচে যেন ফাঁকফোকরগুলো আরও পরিষ্কার হয়ে উঠল।
শেফিল্ড বস ওয়াইল্ডার বলেন, “৪০-৫০ জন মানুষ যদি একসাথে আপনার দিকে তেড়ে আসে, তখন রক্ষা পাওয়া কঠিন। হামজার সঙ্গে যা হয়েছে, সেটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না—এটা নিশ্চিত।”
কমেন্ট্রি বক্সে ধারাভাষ্যকাররাও বারবার বলছিল, ‘ঠান্ডা মাথার হামজাও তার মেজাজ হারাতে বাধ্য হলেন।’

আরও পড়ুন: ইডেনে গুজরাটের দাপট, গিল ঝড়ে উড়ে গেল কলকাতা
অন্যদিকে, বার্নলির বিপক্ষে ২-১ গোলে হারের ফলে চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের শীর্ষ দুইয়ে থাকার লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে পড়েছে তারা। এখন শেফিল্ডকে প্লে-অফে খেলেই নিজেদের প্রিমিয়ার লিগ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, যেখানে প্রতিটি ম্যাচই হবে বাঁচা-মরার মতো।
দিনশেষে তাই প্রশ্নটা এখন আর কেবল হামজাকে ঘিরে নয়—এটা গোটা ফুটবল সংস্কৃতির, আয়োজকদের দায়িত্ববোধের, এবং খেলোয়াড়দের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার। হামজা চৌধুরীর এই রাতটা হয়তো পরিসংখ্যানে লেখা থাকবে না, হেডলাইনেও তার নাম থাকবে না প্রথমে। কিন্তু যেভাবে মাঠের পারফরম্যান্স ছাপিয়ে উঠে এসেছে নিরাপত্তা ও মানবিকতার প্রশ্ন, তাতে করে নিশ্চিত করে বলা যায়—শেফিল্ডের সাথে এই রাতে হেরেছে ইংলিশ ফুটবল!