এক শোকবার্তায় স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা ইতালি। পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা, স্তব্ধ হয়ে গেছে মাঠের লড়াইও। সোমবার ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্যাথলিক গির্জার প্রথম লাতিন আমেরিকান নেতা। তাঁর স্মরণে এদিনের সব পেশাদার ও অপেশাদার ফুটবল ম্যাচ স্থগিত করেছে ইতালির ফুটবল ফেডারেশন।
সিরি আ-তে এদিন ছিল চারটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তোরিনো বনাম উদিনেসে, কাগলিয়ারি বনাম ফিওরেন্টিনা, জেনোয়ার বিপক্ষে লাজিও এবং পারমার মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল জুভেন্টাসের। খেলার বদলে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোক আর স্মরণ। নতুন করে কবে এই ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে, তা পরে জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: অধরা শিরোপা কী তবে ধরা দিচ্ছে কেইনের হাতে?
এই স্থগিতাদেশ কেবল শীর্ষ লিগেই সীমাবদ্ধ নয়। যুব দল, নারী লিগ এমনকি শখের ফুটবলও থেমে গেছে পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে সারা সপ্তাহজুড়ে সব ধরনের খেলাধুলার শুরুতে— এই ঘোষণা এসেছে ইতালির অলিম্পিক কমিটির পক্ষ থেকেও।
পোপ ফ্রান্সিস শুধু ধর্মগুরু ছিলেন না— ছিলেন এক ভীষণ রকমের খাঁটি ফুটবলভক্ত। তাঁর হৃদয়ে আজীবন জায়গা করে ছিল আর্জেন্টাইন ক্লাব সান লরেঞ্জো। ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ক্লাবটি তাঁর হাতে তোলে নিজেদের জার্সি। আশ্চর্যের বিষয়, সে বছরই আর্জেন্টিনার লিগ শিরোপা জেতে সান লরেঞ্জো। পরের বছর তারা ইতিহাস গড়ে জেতে প্রথম কোপা লিবার্তাদোরেস।
তাঁর ভালোবাসা ফুটবলের প্রতি কতটা গভীর ছিল, তা বোঝা যায় কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে তাঁর দুই দফা সাক্ষাৎ থেকেই। ২০১৫ সালে পোপকে নিজের নাম ও নম্বর লেখা আর্জেন্টিনা জার্সি উপহার দেন মারাদোনা। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমিই পোপ ফ্রান্সিসের সবচেয়ে বড় ভক্ত।”
পোপের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক জানিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছে বহু ক্লাব। রোমার বিবৃতি ছিল হৃদয় ছোঁয়া— “এই শহর ও গোটা বিশ্বের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর বিশ্বাস, বিনয়, সাহস ও ভালোবাসা ছুঁয়ে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়।”
আরও পড়ুন: শিরোপার আরও কাছে লিভারপুল
ইন্টার মিলান লিখেছে— “একজন বিশ্বাসী, বিনয়ী ও সংলাপপ্রিয় মানুষ, যিনি সবার হৃদয়ের কথা বলতেন।”
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কিংবদন্তি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনও। ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, “তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের এক অনন্য আলো। সাহস দিয়ে পথ দেখিয়েছেন, আমাদের আত্মাকে নাড়া দিয়েছেন। আমি তাঁর উদাহরণ চিরদিন হৃদয়ে ধারণ করে রাখব।”
পোপের মৃত্যুতে যেনো শুধু সিরি আ নয়, গোটা ফুটবল দুনিয়াই এখন শোকে আচ্ছন্ন।