চ্যাম্পিয়ন হয়েই চোখ ভিজল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। বয়স ৪০, পুরনো চোট আরও খারাপ হয়েছে ম্যাচের আগে থেকেই। তবু দেশের নামের সামনে নিজের শরীরকেও তুচ্ছ মনে হলো তাঁর। বললেন, “পর্তুগালের জন্য দরকার হলে পা ভেঙে যাক, তবু আমি খেলব।”
জাতীয় দলের হয়ে তৃতীয় শিরোপা জয়, সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারের ৩৬ তম শিরোপা। এমন জয়ের রাতে যেন নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা। মাঠে নেমেছিলেন যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই। ম্যাচ শেষে স্পোর্ট টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, “ওয়ার্মআপ থেকেই ব্যথা অনুভব করছিলাম, অনেকদিন ধরেই এটা ভোগাচ্ছে। কিন্তু আমি জানতাম, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে হবে। দেশের জন্য সব উজাড় করে দিতে হবে।”
আরও পড়ুন: ইয়ামালের স্পেনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন রোনালদোর পর্তুগাল
মিউনিখে অনুষ্ঠিত উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপার লড়াইটা সহজ ছিল না পর্তুগালের জন্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচটা ২-২ সমতায় ফিরিয়ে নিয়ে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে হারায় স্পেনকে। দ্বিতীয় গোলটা আসে রোনালদোর পা থেকেই, যা ছিল তাঁর ১৩৮তম আন্তর্জাতিক গোল।
শিরোপা জয়ের পর রোনালদোর চোখে জল দেখা গেছে। আবেগে ভাসা কণ্ঠে বলছিলেন, “এই আনন্দ অসাধারণ। প্রথমত, এই প্রজন্মের জন্য—তারা একটা বড় শিরোপার প্রাপ্য ছিল। দ্বিতীয়ত, আমার পরিবার এখানে ছিল। আমার স্ত্রী, সন্তান, ভাই আর বন্ধু সবাই এসেছে। এই জয় তাদের জন্যও।”
জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা তাঁর কাছে এখনো কতটা বিশেষ, সেটাও জানান দিয়েছেন তিনি, “পর্তুগালের হয়ে জেতা সব সময়ই অন্যরকম। আমার ক্লাব ক্যারিয়ারে অনেক ট্রফি আছে, কিন্তু দেশের হয়ে শিরোপা জেতার আনন্দ তুলনাহীন। দায়িত্ব পালন, চোখে জল—এই অনুভূতিগুলোই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
রোনালদো প্রশংসা করেছেন স্প্যানিশ কোচ রবার্তো মার্টিনেজেরও, “তিনি একজন স্প্যানিশ, কিন্তু আমাদের দেশের জন্য সব দিয়েছেন। আগেও আমরা শিরোপা জিতেছি, তবে এই ক্ষুধা, এই মোটিভেশনই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।”
আরও পড়ুন: হামজা-জামালদের ম্যাচে নজরদারিতে থাকছে সোয়াট
শেষদিকে কান্নায় ভেঙে পড়া ক্রিস্টিয়ানো আরও বলেন, “এই কান্না, দায়িত্ববোধ, এগুলো খুব সুন্দর অনুভূতি। আমরা হয়তো ছোট একটা দেশ, কিন্তু আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিশাল। এই প্রজন্মের অধিনায়ক হতে পারাটা আমার জীবনের অন্যতম গর্বের বিষয়।”
তবে ম্যাচের আগেও শিরোনামে ছিলেন ১৭ বছরের লামিনে ইয়ামাল। তবে দিনশেষে স্পেনের এই তরুণ তারকাকে বাস্তবতার সামনে এনে দিলেন ৪০ বছরের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যদিও ম্যাচ শেষে ইয়ামালের প্রশংসা করেই তিনি বলেন, “সে অনেক শিরোপা জিতবে। সে এক বিস্ময়। অনেক লম্বা ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে ওর সামনে। নিশ্চিতভাবেই এই নেশন লিগ বহুবার জিতবে ইয়ামাল।”
চোটে জর্জরিত অবস্থাতেও দেশের হয়ে লড়াই করা, নিজের শেষটুকু দিয়ে খেলে যাওয়া, জাতীয় দলের হয়ে একাত্ম হয়ে ওঠার এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। শুধু পারফরম্যান্সে নয়, হৃদয় দিয়েও তিনি পর্তুগালের জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
আরও পড়ুন: রোনালদোর গোলে ফাইনালে পর্তুগাল