র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুরের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক থাকলেও ম্যাচে তা মোটেও দেখা যায়নি। দুই দলই লড়েছে সমানতালে৷ তবে ঘরের মাঠে দর্শকভরা গ্যালারি এবং হামজা, শমিত ও ফাহমিদুলের মতো ফুটবলারদের নিয়েও সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ৷ এমন হারের পেছনে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার ভুল কৌশলকে দায়ী করেছেন সাবেক ফুটবলাররা৷
গত ১০ জুন ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ৷ এ নিয়ে সাবেক ফুটবলাররা বলছেন, জয়ের সামর্থ্য থাকলেও কোচের ভুল কৌশলের কারণে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে৷

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি বলেন,‘নিজেদের মাঠে যেকোনো দলের লক্ষ্য একটাই থাকে, জয়। তাই জয়ের জন্য ফরম্যাশনও থাকবে আক্রমণাত্মক। অথচ কোচ চারজন ডিফেন্ডারের সামনে দুইজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার রাখলেন। হামজার মতো পরীক্ষিত হোল্ডিং মিডফিল্ডার থাকতে কেন দুইজন লাগবে? নিজেদের অর্ধে ৬ জনকে ব্যবহার করলে আক্রমণভাগ দুর্বল তো হবেই। রাইট উইংয়ে অভ্যস্ত নন, সেই কাজেমকে খেলালেন। আবার রাকিবও বারবার তার প্রিয় পজিশন; মানে ডান দিকে চাপছিলেন, ক্রস ফেলছিলেন। লাভ কী? বল কানেক্ট করবে কে?’
আরও পড়ুন: সমীকরণের মারপ্যাঁচে টিকে আছে এশিয়ান কাপের স্বপ্ন
প্রথমে দুই গোল হজম করলেও পরে হামজার অ্যাসিস্টে একটি গোল পরিশোধ করেন রাকিব হোসেন। কিন্তু দল যখন দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া, তখন রাকিবকে কেন রাইটব্যাকে খেলালেন কোচ– এ নিয়ে আপত্তি এমিলির৷
তিনি বলেন, ‘এক গোল দেওয়ার পর প্রয়োজন ছিল আরেকটি গোল আদায় করে নেওয়া। অবাক করার মতো বিষয় হলো- কোচ গোলদাতা রাকিবকে আক্রমণ থেকে নিয়ে গেলেন রাইটব্যাক পজিশনে! ডিফেন্ডার নির্বাচনেও কোচ ইচ্ছে মতো যা খুশি করেছেন। জেনুইন রাইটব্যাক বসিয়ে রেখে সেন্টারব্যাককে খেলিয়েছেন সেই পজিশনে। ঈশা ফয়সাল এ মুহূর্তে দেশসেরা লেফটব্যাক। অথচ তাকে স্কোয়াডেই রাখেননি কোচ!’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ী মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘কাবরেরা ম্যাচটা জয়ের কৌশল নেননি। বড়জোর এক পয়েন্ট ছিল তার লক্ষ্য। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জন্য ছিল সিঙ্গাপুর ম্যাচের প্রস্তুতি। সেই ম্যাচে যাদের যথেষ্ট গেম টাইম দেওয়া হয়েছে, তাদেরকেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলানো উচিত ছিল। কাজেম কোনো অবস্থাতেই একাদশে আসে না। সে রাইট উইঙ্গার নয়। তাকে সেখানে খেলানো হয়েছে। অথচ এই পজিশনে রাকিবকে রেখে একজন প্রকৃত নাম্বার নাইন খেলানো যেতো। সুমন রেজা অথবা আল আমিনকে দিয়ে গোলের চেষ্টা করানো যেতো।
আরও পড়ুন: তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশকে পেনাল্টি না দেওয়া রেফারি ও তার স্ত্রীর ‘ফেসবুক লক’
দল নির্বাচনে ঘাটতি দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচে গোলরক্ষক নির্বাচনে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি ক্যাবরেরা। নিঃসন্দেহে মিতুল মারমা এ মুহূর্তে দলের সেরা। মিতুল ভুটান ম্যাচের দুই দিন পরই তার বড় ভাইকে হারিয়েছেন। ভাই হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার যথেষ্ট সময় কিন্তু পাননি। মানসিকভাবে যে মিতুল প্রস্তুত ছিলেন না, তা খেলাতেই প্রমাণ হয়েছে। শুরু থেকেই ছোট ছোট ভুল করছিলেন তিনি। আর দুটি গোলের পেছনেই তার দায় রয়েছে। দলে তো আরও দুইজন গোলকিপার ছিলেন। তাদের জন্য বিবেচনায় না এনে কেন তাকে নেওয়া হলো?’
ম্যাচ হারের পেছনে কোচের রক্ষণাত্মক কৌশলকে দায়ী করেছেন আলফাজ আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, কোচ এক পয়েন্টের জন্য খেলেছে। শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ছিলেন। অথচ এই ম্যাচটা আমাদের জয়ের জন্য খেলা উচিত ছিল। আরও অ্যাটাকিং কৌশলে খেলা উচিত ছিল। আমার মনে হয়েছে, এই ম্যাচে হৃদয়কে না খেলিয়ে অভিজ্ঞ সোহেল রানাকে খেলানো ঠিক ছিল। সর্বোপরি, এই দলের জেতার সামর্থ্য ছিল। তবে কোচ তা কাজে লাগাতে পারেননি।’