দুই গোলে এগিয়ে থেকেও প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়া— এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এল ক্লাসিকোতে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। কিন্তু , অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের এই হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে রচিত হলো সেই বিরল ইতিহাস। কিলিয়ান এমবাপে যখন মাত্র ১৪ মিনিটেই জোড়া গোল করে রিয়ালকে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন, তখন বোঝা যায়নি, নাটকীয় মোড় নিতে চলেছে ম্যাচ।
শেষ পর্যন্ত তিন গোল করেও দলকে হারের হতাশা থেকে বাঁচাতে পারলেন না এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। এল ক্লাসিকোর রোমাঞ্চে গা ভাসিয়ে ৪–৩ গোলের দারুণ এক জয় তুলে নিল বার্সা, টানা চতুর্থ এল-ক্লাসিকো জিতে রেখে দিল লা লিগার শিরোপায় এক হাত।
আরও পড়ুন: ৩ বছর আগেই বাংলাদেশের কোচ হতে আগ্রহী ছিলেন টেইট

ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল যেন রিয়ালের স্বপ্নময় কোনো স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী। প্রথমে বার্সা ডিফেন্ডার পাউ কুবারসির ভুল, পরে গোলরক্ষক সেজনির বক্সে ফাউল— রেফারি পেনাল্টির জন্য বাশি বাঁজালে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন এমবাপে। এরপর দ্বিতীয় গোলটি আসে আরও জমকালো এক আক্রমণ থেকে; ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পাসে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে তিনি বল জড়ান জালে।
তবে দুই গোল হজম করে যেন ঘুম ভাঙে বার্সেলোনার। এরপরই তারা খেলায় ফিরতে শুরু করে একের পর এক আক্রমণে। কর্নার থেকে এরিক গার্সিয়ার হেডে প্রথমে ব্যবধান কমায় দলটি। এরপর ইয়ামাল বাঁ পায়ের শটে স্কোরলাইন সমতায় নিয়ে আসেন। গ্যালারির উল্লাস তখনো থামেনি, ততক্ষণে রাফিনহা দুর্দান্ত এক গোল করে বার্সাকে ৩–২ তে এগিয়ে দেন।

মাত্র ৩৫ মিনিটে ম্যাচে দেখা যায় পাঁচটি গোল— ১০৩ বছর পর এল ক্লাসিকোয় এমন উন্মাদনা। ১৯২২ সালের পর এবারই প্রথম, যেখানে প্রথমার্ধেই গড়ে উঠে গোলের বৃষ্টি। বিরতির আগে আরও একবার ইতিহাস রচনা করেন রাফিনহা, তাঁর দ্বিতীয় গোলে ৪–২ তে এগিয়ে যায় বার্সা। ১২৩ বছরে এই প্রথম, ক্লাসিকোর প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে পড়ে কোনো দল।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝাঁপায় রিয়াল। বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনে কোচ আনচেলত্তি গতি আনেন মাঝমাঠে। তার ফল মেলে ৭০ মিনিটে, ভিনিসিয়াসের আরেক দৃষ্টিনন্দন পাস থেকে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এমবাপ্পে। এরপর সমতায় ফেরার লক্ষ্যে মরিয়া আক্রমণ করে রিয়াল। তবে শেষ বাঁশি বাজার আগে এক গোল বাতিল হয় হ্যান্ডবলের কারণে। আর বার্সার পক্ষে রাফিনহাও পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগ, কিন্তু শেষ মুহূর্তে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে তা মিস করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক ম্যাচে ১০ ‘রিটায়ার্ড আউট’-কৌশলে ইতিহাস গড়ল আমিরাত

শেষ পর্যন্ত রিয়াল আর ফিরে আসতে পারেনি। ইয়ামাল ও রাফিনহার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রঙিন হলো বার্সেলোনার রাত। জয়ের মাধ্যমে শুধু প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলাই নয়, শিরোপার দৌড়ে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করল বার্সা। এখন লিগ জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ২ পয়েন্ট, সেটি পেতেই পারে তারা পরের ম্যাচে এস্পানিওলের বিপক্ষে।