ফুটবলপাগলরা সারাজীবনে যা শুধু কল্পনায় দেখে এসেছে, সেই দৃশ্য এবার বাস্তবেও ধরা দিতে পারে— একই জার্সিতে খেলতে পারেন ফুটবলের দুই কিংবদন্তি লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বারবার মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা, কিন্তু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই দলের হয়ে মাঠে নামা? সেটা হয়নি কখনোই।
সময়ের হাত ধরে সবকিছু একদিন শেষ হয়ে যায়। তবে মেসি-রোনালদোর লড়াইয়ের গল্প, সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও থেকে যাবে মানুষের হৃদয়ে। দুই মেরুতে দাঁড়ানো দুই বিস্ময়, যাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনো শুধুই খেলায় সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটি ছুঁয়ে গিয়েছিল সংস্কৃতি, আবেগ, এমনকি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝেও।
আরও পড়ুন: কলকাতার কোচিং প্যানেলে ফিরলেন অভিষেক নায়ার

তাদের একই ম্যাচে দেখা গেছে বহুবার, দেখা গিয়েছে ব্যালন ডি অর কিংবা উয়েফার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চেও। কিন্তু একসাথে? একই জার্সিতে? এক দলের হয়ে, এক লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে? ফুটবল এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি। আর কখনো দেখবেও না— এই বিশ্বাস নিয়েই যেন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ব। কিন্তু এবার, হয়তো শেষবারের মতো সেই বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে চলেছেন এক ভিন্নধর্মী চরিত্র— কার্লোস তেভেজ।
২০২২ সালেই ফুটবলকে বিদায় জানানো তেভেজ সম্প্রতি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ওলগায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঘোষণা দিয়েছেন আরও একটি বিদায়ী ম্যাচ খেলার। তবে সাধারণ কোনো বিদায়ী ম্যাচ নয় এটি, বরং যেন এক ফুটবলীয় স্বপ্নমেলার ডাক। তেভেজ চাচ্ছেন, তার আয়োজিত এই ম্যাচ হোক এমন এক উপলক্ষ, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না, থাকবে কেবল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর স্মৃতির উদ্যাপন। আর এই মহাযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন মেসি ও রোনালদো— ফুটবলের দুই কিংবদন্তি, এক জার্সিতে।

“আমি নিজেই যাব রোনালদোকে আনতে, আমার হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর নাম্বার সেভ করা”— তেভেজের ঠোঁটের কোণে হাসি, চোখে আত্মবিশ্বাস। যেন বলছেন, এ স্বপ্নের শেষ দেখিয়ে ছাড়বেন। আর মেসি? দেশের হয়ে একযুগের বেশি সময় মাঠ ভাগ করা দুই বন্ধুর টান তো মুছে যাওয়ার নয়।
সেই সঙ্গে থাকবেন রুনিরা, ফন ডার সার-বুফন, চিয়েল্লিনি-বোনুচ্চি কিংবা স্কোলস-পিরলো-রিকেলমে— তেভেজ যাঁদের সঙ্গে স্মৃতিতে বাঁচেন। বিদায়ী ম্যাচটি হতে যাচ্ছে যেন একবারে আলাদা এক মহাবিশ্ব, যেখানে কাল আর বর্তমান মিলেমিশে সৃষ্টি করবে এমন এক দৃশ্য, যা কল্পনার বাইরেও বিস্ময়কর।

আরও পড়ুন: ৭ গোলের থ্রিলারে শেষ হাসি বার্সার
মঞ্চটি নির্ধারিত— বোকা জুনিয়র্সের লা বম্বোনেরা। আর্জেন্টিনার কাঁপানো সেই স্টেডিয়াম এবার কাঁপতে পারে এক ভিন্ন ধ্বনিতে— অশ্রুভেজা হাততালি, পুরোনো বন্ধুদের কাঁধে হাত রেখে হাসিমাখা দৃষ্টিতে বিদায়, আর একবারের জন্য হলেও সব প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ছাপিয়ে যাওয়া ঐক্যের গল্পে।
আর যদি সত্যিই আমরা দেখতে পাই— মেসি যখন বল বাড়িয়ে দিচ্ছেন রোনালদোর দিকে, রোনালদো যখন গোল করে এগিয়ে যাচ্ছেন তেভেজকে জড়িয়ে ধরতে, তখন সেটা শুধু একটা ম্যাচ হবে না। সেটা হয়ে থাকবে— একটা প্রজন্মের স্বপ্নপূরণ, একটা যুগের অবসান, আর একসাথে শেষবারের মতো মঞ্চে ওঠা দুই কিংবদন্তির একান্ত গল্প।

এবার দেখার পালা, অসম্ভবকে আসলেই বাস্তবে পরিণত করতে পারেন কিনা মেসি-রোনালদো দুজনের সাথেই খেলা কার্লোস তেভেজ।