“তোমরা বিশ্বকাপে চলে গেছো, এবার চাবি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরে যাও”— প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া উজবেক খেলোয়াড়দের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট এভাবেই দিয়েছেন অমূল্য উপহারের ঘোষণা।
উজবেকিস্তানের ফুটবল ইতিহাসে এই মুহূর্তটি যেন রূপকথার চেয়ে কম কিছু নয়। বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডেও কাতারকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা। যদিও ইতিহাস রচনা করেছে আগের ম্যাচেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ড্র করে বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডের আগেই নিজেদের বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত করেছিল দলটি।
আরও পড়ুন: ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে উজবেকিস্তান

অর্থাৎ, ২০২৬ বিশ্বকাপে বাকিদের সাথে, বিশ্বকাপের ময়দানে উজবেকদেরও লড়াই করতে দেখা যাবে। এমন ঐতিহাসিক অর্জনের ঠিক পরপরই জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য এক অনন্য ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়োয়েভ—“তোমরা বিশ্বকাপে চলে গেছো, এবার চাবি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরে যাও।”
তাসখন্দের স্টেডিয়ামে যখন উজবেক ফুটবলাররা দেশের হয়ে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে, ঠিক তখন মাঠের পাশেই সারি ধরে দাঁড়িয়ে ছিল ৩০টি বিলাসবহুল চীনা ইলেকট্রিক গাড়ি (BYD)। প্রতিটির মূল্য প্রায় ৫০ হাজার ইউরো। খেলোয়াড়দের জন্য প্রেসিডেন্টের এই উপহার শুধু পুরস্কারই নয়— একটি বার্তা, যে দেশ এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখেছে।
কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে গোলদাতাদের তালিকায় ছিলেন আজিজবেক তুরগুনবোয়েভ, অধিনায়ক এলদোর শোমুরোদভ ও ইগর সেরগেইভ। আরব আমিরাতের সঙ্গে ড্রয়ের পর বিশ্বকাপে যাওয়া নিশ্চিত হলেও, কাতারের বিপক্ষে এই জয় বাছাইপর্বের শেষটাও দারুণ ভাবে রাঙালো উজবেকিস্তানের জন্য।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর এটিই উজবেকিস্তানের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াসাফল্য। সেই উপলক্ষে মাঠেই আয়োজন করা হয় খেলোয়াড়দের সংবর্ধনার। গাড়ি তো আছেই, সঙ্গে ছিল সম্মানসূচক খেতাব ও রাষ্ট্রীয় পদক। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সবাই পেয়েছেন পুরস্কার। এমনকি সদ্য দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া সাবেক কোচ স্রেচকো কাতানেচকেও ভোলেননি প্রেসিডেন্ট— তাঁকেও দেওয়া হয়েছে সম্মাননা।
আরও পড়ুন: সবাইকে মিস করবেন, অক্টোবরে জেতার প্রত্যাশা ফাহমিদুলের
বর্তমানে দলটির দায়িত্বে রয়েছেন তিমুর কাপাদজে। কোচ বদল, চাপের ম্যাচ, এবং ঐতিহাসিক প্রত্যাশার মুখেও যেভাবে দলটি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে, তা শুধু প্রশংসাযোগ্যই নয়—প্রেরণাদায়ক।
বিশ্বকাপ নিশ্চিতের রাতে তাসখন্দের মাঠে ছিলেন স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ও বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উপস্থিত ছিলেন না, তবে রাশিয়ার সঙ্গে উজবেকিস্তানের ঘনিষ্ঠ ক্রীড়া সম্পর্ক আবারও উঠে আসে আলোচনায়। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে যেসব দেশ খেলেছে, উজবেকিস্তান তাদের মধ্যে অন্যতম।

তবে সেসব কূটনৈতিক আলোচনার বাইরে, রাতে সব আলো ছিল মাঠের ১১ জন নায়কের দিকে। তাঁরা দেশের জন্য গর্ব এনেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুলে দিয়েছেন স্বপ্নের দরজা। আর তার স্বীকৃতি তারা পেয়েছেন মাঠেই—গাড়ির চাবি হাতে।
২০২৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয়। এবারের আসরে প্রথমবার অংশ নেবে ৪৮টি দল। এর মধ্যে এশিয়ার জন্য বরাদ্দ জায়গার একটি এবার উজবেকিস্তানের দখলে।
আরও পড়ুন: ভক্তদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হামজার বার্তা, ‘আবার ফিরবো, ইনশাআল্লাহ’