২৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ আরিনায়। অবশেষে ইউরোপ সেরা হয়ে উঠল ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। যে ক্লাব এতদিন ধরে ব্যর্থতা, আক্ষেপ আর কোটি টাকা খরচের পরেও খালি হাতে ফিরত, তারাই এবার দেখাল পূর্ণতা। দ্বিতীয়বার ফাইনালে এসে আর ভুল করেনি তারা— বরং ইতিহাস গড়ল ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে।
এই ম্যাচটা কেবল একটি ট্রফি জয়ের গল্প নয়। এটি এক মহাকাব্য, যা লিখে গেছে সাহস, দৃঢ়তা আর আবেগের এক অনন্য অধ্যায়। মেসি-নেইমার-এমবাপের গ্ল্যামার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা, ওসমান ডেম্বেলে, দেজিরে দুয়ে, ভিতিনহা, খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া। তাঁদের নিজেদের মতো করেই এঁকে দিয়েছেন সোনালি সাফল্যের রেখা।
আরও পড়ুন: রোনালদো জুনিয়রের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এতটা একতরফা ফাইনাল খুব কমই দেখা গেছে। পিএসজি যেন শুরু থেকেই জানত, এই রাতটা তাদের। ১২ মিনিটেই আশরাফ হাকিমি গোল করে প্যারিসকে এগিয়ে দেন, সাবেক ক্লাব ইন্টারের বিপক্ষে গোল করেও উচ্ছ্বাসে গা ভাসাননি, বরং রাখেন সংযম। এরপর দেজিরে দুয়ে ২০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে জানান দেন, প্যারিস আজ এসেছে ট্রফি নিতে, শুধু অংশ নিতে নয়।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও তাণ্ডব। দেজিরে দ্বিতীয়বার জাল খুঁজে পান ৬৩ মিনিটে। এরপর কাভারাৎসখেলিয়ার অবিশ্বাস্য একটি গোল (৭৩’) এবং ম্যাচের শেষদিকে বদলি হিসেবে নামা মাইয়ুলুর চমক (৮৬’) সবকিছুর পরিসমাপ্তি টানে। এ যেন মিউনিখের আকাশে লেখা হচ্ছিল একটি নতুন ইতিহাস।
আরও পড়ুন: রিয়ালের ইতিহাসের পাতায় ইতি টানছেন লুকা মদ্রিচ

এই জয় শুধুই কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব নয়— এটি আবেগের গল্পও। লুইস এনরিকে, যিনি কন্যাকে হারিয়েছেন ক্যানসারে, তিনি এই ম্যাচটিকে পরিণত করেন নিজের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির রূপান্তরের মঞ্চে। প্রতিটি গোলের পর ডাগআউটে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানো এনরিকে, ম্যাচ শেষে জ্যাকেট খুলে চোখের জল মুছা কোচ— সবটা যেন বলে দিচ্ছিল, “এই জয়টা শুধু পিএসজির নয়, এটি আত্মারও জয়।”
ইন্টার মিলান ম্যাচে কার্যত অদৃশ্য ছিল। প্রথমার্ধে কিছুটা লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে কার্যত আত্মসমর্পণ করে ইনজাঘির দল। প্রথম দুটি গোলের পর ডাগআউট থেকে চিৎকার করলেও শেষদিকে আর কোনো প্রতিরোধ ছিল না, শুধু নীরবতা।

আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তের গোলে প্রিমিয়ার লিগে ফেরার স্বপ্নভঙ্গ হামজার
আরও একটি দৃশ্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ম্যাচ শুরুর টানেলে দুই দলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা পিএসজির তরুণ মুখ বনাম ইন্টারের অভিজ্ঞ সৈনিকরা। ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন, “It’s men versus boys.” কিন্তু সেই ছেলেরা খেলেছে এমন এক মনোভাব নিয়ে, যেন প্রতিটা পাস, প্রতিটা দৌড় তাদের বুকে বহন করছিল বছর বছর ধরে জমে থাকা আক্ষেপের ভার, নিজের জাত চিনিয়ে দেওয়ার দায়।
এই জয় শুধুই ট্রফি নয়, এটি একটি ‘ট্রেবল।’ লিগ, কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ একসঙ্গে ঘরে তোলার কীর্তি। এই রাতে পিএসজি যেন জন্ম নিল নতুনভাবে, একটি ক্লাব, যে আর ব্যর্থতার প্রতীক নয়, বরং ফরাসি ফুটবলের নতুন শুরুর পতাকা।

এর সাথে আরও একবার মিউনিখে দেখা মিললো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন চ্যাম্পিয়নের। এই মাঠেই যে প্রতিবার ফুটেছে নতুন ফুল। তা হোক সে চেলসি, ডর্টমুন্ড, মার্সেই কিংবা ২০২৫ সালে এসে পিএসজি। মিউনিখে যতবারই ফাইনাল হয়েছে, প্রতিবারই নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়া গিয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি পিএসজির বেলাতেও। অবশেষে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেলো ফরাসি এই ক্লাবটি।
আরও পড়ুন: রোনালদোর সঙ্গে দ্বৈরথ ফুটবলের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়: মেসি