দ্বিতীয়ার্ধের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভিলা পার্কে নেমে এলো হতাশার ছায়া। খেলোয়াড়েরা একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, ডাগআউটে মুখ ঢাকলেন কোচ উনাই এমেরি। কারণটা খুবই স্পষ্ট— সবটুকু উজাড় করে দিয়েও মাত্র এক গোলের ঘাটতিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হলো অ্যাস্টন ভিলাকে।
দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে সেমিফাইনালের টিকিট পেল প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি)। অথচ ফিরতি লেগে দারুণ এক লড়াইয়ে ঘরের মাঠে ৩-২ গোলের জয় তুলে নিয়েছিল ভিলা। কিন্তু প্রথম লেগে ৩-১ গোলে হেরে বসা দলটির জন্য সেটাও যথেষ্ট হলো না।
আরও পড়ুন: জ্যোতির ব্যাটে রেকর্ডের ঝড়, সাফল্যে ভাসছে বাংলাদেশও

প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভিলার শুরুটা ছিল দারুণ উদ্দীপনাময়। মাত্র দুই মিনিটের মাথায় পরপর দুটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। কিন্তু ১১তম মিনিটে সেই ছন্দে ছেদ টানেন পিএসজি ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। মার্টিনেজের ভুলে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেন মরোক্কান এই ফুটবলার।
এরপর ২৭তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন নুনো মেন্ডেস। উসমান দেম্বেলের পাস থেকে ডি-বক্সে নিচু শটে বল জালে পাঠিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড় করান ৫-১। তখন ভিলা পার্কে কেবল শোকই নয়, একরকম স্তব্ধতা নেমে এসেছিল।
কিন্তু এখানেই যেন শুরু হয় নাটকীয় উত্তরণের গল্প। ৩৪তম মিনিটে ইউরি টিয়েলেমান্সের শটে পিএসজির ডিফেন্ডার পাচোর গায়ে লেগে বল দিক পাল্টে জালে ঢুকে যায়। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-১। ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিতটা ছিল স্পষ্ট।

দ্বিতীয়ার্ধে এসে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় ভিলা। ৫৫তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করেন দলটির স্কটিশ মিডফিল্ডার জন ম্যাকগিন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর জোরালো শট কোনো সুযোগই দেয়নি দোন্নারুম্মাকে। মিনিট দুয়েক পরেই রাশফোর্ডের কাট-ব্যাক থেকে বল পেয়ে নিচু শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ডিফেন্ডার এজরি কনসা। তখন দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-৪। এক গোল, শুধু এক গোলই বাকি ছিল!
এই সময়টায় পুরো ভিলা পার্ক যেন প্রাণ ফিরে পায়। গ্যালারি থেকে গর্জন, মাঠে আগুন ঝরানো ফুটবল। একের পর এক আক্রমণ, একের পর এক শট, কিন্তু দেয়াল হয়ে দাঁড়ান দোন্নারুম্মা। টিয়েলেমান্স, রাশফোর্ড, এমনকি বদলি হিসেবে নামা আসেনসিওর শটও ঠেকিয়ে দেন ইতালিয়ান এই গোলরক্ষক।
৭০তম মিনিটে দারুণ এক সেভে আবারও ভিলার হৃদয় ভাঙেন তিনি। শেষ দিকে ইয়ান মাটসেনের শট গোলমুখে প্রতিহত করেন পাচো। ডাগআউট থেকে কোচ এমেরির রাগমাখা প্রতিক্রিয়ায় ফুটে ওঠে সব ব্যর্থতার হাহাকার।
আরও পড়ুন: টানা তিন জয়ে বিশ্বকাপের আরো কাছে জ্যোতি-নাহিদারা

এদিকে মার্টিনেজও শেষ মুহূর্তে গোল ঠেকিয়ে একের পর এক দৃষ্টিনন্দন সেভ করে ভিলাকে খেলায় টিকিয়ে রাখেন। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মুখেও জমে ওঠে তীব্র হতাশা। হয়তো ভেবেছিলেন, আরেকটু হলে ইতিহাস গড়া যেত!
সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত আসে যোগ করা সময়ের একেবারে শেষদিকে। তখনও মাত্র এক গোল দরকার ভিলার। মাটসেন দারুণ এক পাস পেয়ে শট নেন, কিন্তু গোললাইনে থাকা পাচো বলটি ব্লক করে দিলে আর কিছু করার ছিল না।

শেষ পর্যন্ত অসাধারণ লড়াই করেও বিদায় নিতে হয় অ্যাস্টন ভিলাকে। প্রথমার্ধে দুটি গোল খেয়ে একরকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তারা। কিন্তু সেই চাপে ভেঙে না পড়ে ঠিকই দাঁতে দাঁত চেপে ম্যাচে ফিরে আসে। ম্যাচটা ৩-২ ব্যবধানে জিতলেও প্রথম লেগের ক্ষত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে পিএসজি। সেমিতে তারা মুখোমুখি হবে আর্সেনাল বনাম রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার বিজয়ীর।