বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হ্যারি কেইন, অবসান অভিশপ্ত অধ্যায়ের

একজন ফুটবলারের জীবন কতটা পরিপূর্ণ হলে তাকে সফল বলা যায়? গোলের সংখ্যা, মাঠে উপস্থিতি, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নেতৃত্ব— সবই যদি থাকে, তবু ট্রফি না থাকে, তবে কি তাকে ‘বিজয়ী’ বলা যায়? এই প্রশ্নটার উত্তরই যেনো দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজেছেন একজন হ্যারি কেইন। আর সেই খোঁজ যেন পরিণত হয়েছিল এক অভিশাপে।

এক সময় মনে হতো, কেইনের জীবন কেবলই এক দীর্ঘ ট্র্যাজেডির নাটক। প্রতিবার যখনই তার সামনে এসেছে ট্রফি জয়ের সুযোগ, তখনই কোনো না কোনোভাবে তা দূরে সরে গেছে। কখনও ইংল্যান্ডের জার্সিতে ইউরো ফাইনালে, কখনও টটেনহামের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে, কখনও আবার লিগ কাপ— প্রতিবারই একই দৃশ্য: পরিশ্রম, পারফরম্যান্স, ভালোবাসা— সবই ছিল, কেবল শিরোপা ছিল না।


আরও পড়ুন: রিয়ালের রুদ্ধশ্বাস জয়ের রাতে লিভারপুল-ইউনাইটেডের লজ্জা

কিন্তু ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে হ্যারি কেইন এক ভিন্ন পথ বেছে নেন। শিরোপার খোঁজে তিনি বিদায় নেন টটেনহামের ‘আনব্রোকেন হাউস’ থেকে, এসে যোগ দেন জার্মানির দানব বায়ার্ন মিউনিখে। অনেকে বলেছিলেন, “এবার বুঝি ভাগ্য ফিরবে।”

কিন্তু শুরুতেই আবার সেই পুরনো অভিশাপের থাবা। প্রথম ম্যাচেই সুপার কাপ ফাইনালে হেরে বসল বায়ার্ন, আর কেইনের ওপর আবারও সেই পুরোনো কুৎসিত হাসি— “ট্রফি তার ছায়াও মাড়ায় না!”

তবু হ্যারি কেইন হাল ছাড়েননি। তিনি তো থামার মানুষও নন। লিগে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে শুরু করলেন আগুন ঝরানো পারফরম্যান্সে। একের পর এক গোল করে বুন্দেসলিগার রক্ষণভাগগুলোকে পরিণত করলেন প্রদর্শনীর মাঠে। তার পায়ের নিচে যেন জমে উঠল জার্মান ফুটবলের নতুন ব্যাকরণ।

নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচেই হয়তো শিরোপাল্লাসে মাততে পারতেন তিনি। তবে লাইপজিগের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ড্র করে বায়ার্ন মিউনিখ। ফলে সেদিন মাঠে না থাকা কেইনের হতাশ মুখ দেখা গিয়েছিল গ্যালারিতে। ‘শিরোপা যেনো বরাবরই সোনার হরিণ’ হয়েই রইলো কেইনের জন্য। তবে হাল না ছাড়া কেইন জানতেন সুযোগ আসবেই।

এবং ঠিক সেটাই হলো। পরের রাউন্ডে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লেভারকুজেন হোঁচট খেতেই নিশ্চিত হয়ে গেল শিরোপা। হ্যারি কেইনের জীবনে, এত দিনের প্রতীক্ষার শেষে, অবশেষে ধরা দিল প্রথম ট্রফি।

এই ট্রফি কেবল একটি লিগ শিরোপা নয়। এটি একটি প্রতিশ্রুতির প্রতিদান, একটি যোদ্ধার শেষ অবধি লড়ে যাওয়ার পুরস্কার। কেইনের ক্যারিয়ার যেন এক মহাকাব্য, যেখানে নায়ক প্রতিবার পরাজয়ের পরও থামেন না, হার মানেন না। বারবার নিজের শিরে চাপিয়ে চলেছেন প্রত্যাশার ভার, দলের দায়িত্ব, ভক্তদের বিশ্বাস— এবং সব শেষে, নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে পৌঁছেছেন কাঙ্ক্ষিত শিখরে।

এই মুহূর্তে কেইনের নাম বুন্দেসলিগার ইতিহাসে উঠে গেছে এক বিশেষ রেকর্ডেও— সবচেয়ে দ্রুততম ৬০ গোল করা খেলোয়াড়। হালান্ডকে ছাড়িয়ে এই রেকর্ড শুধুই সংখ্যায় নয়, এটি এক বার্তা— তিনি শুধু গোল করেন না, ইতিহাসও লেখেন।

আরও পড়ুন: এক মৌসুমে তিন ট্রেবল, ইতিহাসের দোরগোড়ায় বার্সেলোনা 

হ্যারি কেইনের এই জয়ের গল্পটা নিছক ট্রফি জয়ের গল্প নয়। এটি এক মানসিক লড়াইয়ের জয়। দীর্ঘদিন ধরে বয়ে চলা অভিশাপ, সামাজিক ব্যঙ্গ, অন্তরের অব্যক্ত কষ্ট— সবকিছুকে পেছনে ফেলে তিনি লিখে দিয়েছেন এক নতুন সকাল।

সেই সকাল যেখানে হ্যারি কেইন আর “ট্র্যাজেডির নায়ক” নন। তিনি এখন এক রাজপুত্র, যিনি বেঁচে থাকবেন প্রতিটি সেই স্বপ্ন দেখানো ছেলের মনে, যে ব্যর্থতা পেরিয়ে একদিন ছুঁতে চায় তার নিজের ‘ট্রফির সকাল’।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর