মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে হামজারা, শনিবার (২৪ মে) লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এক মহারণের মঞ্চ বসতে চলেছে। ইংল্যান্ডের ফুটবল মৌসুমের অন্যতম প্রতীক্ষিত ম্যাচ— চ্যাম্পিয়নশিপের প্লে-অফ ফাইনাল।
এই মহারণে একদিকে লড়বে শেফিল্ড ইউনাইটেড, অন্যদিকে সান্দারল্যান্ড। তবে এ লড়াই শুধু প্রিমিয়ার লিগে ওঠার নয়, বরং এটি অর্থনীতির দিক থেকেও ফুটবল বিশ্বে অন্যতম মূল্যময় ম্যাচ হিসেবে পরিচিত। বলা হয়, এই ৯০ মিনিটই নির্ধারণ করে দিতে পারে একটি ক্লাবের ভবিষ্যৎ ভাগ্য, এমনকি তাদের আর্থিক মানচিত্রও।
আরও পড়ুন: বেনেটের সেঞ্চুরি, তবুও ফলোঅনে জিম্বাবুয়ে

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তরণের এ লড়াইয়ের পেছনে লুকিয়ে আছে কোটি কোটি ডলারের সম্ভাবনা। জয়ী দলটির হাতে উঠে আসবে যে শুধু লিগের টিকিট তা নয়, বরং প্রিমিয়ার লিগে অংশগ্রহণ করায় যে বিশাল আর্থিক লাভ, তার প্রাক্কলিত মূল্য প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৬৫ কোটিরও বেশি!
এই অর্থমূল্য কিন্তু গুজব নয়। প্রখ্যাত আর্থিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট-এর হিসাব বলছে, চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ার লিগে ওঠা ক্লাবগুলো তিন বছরের মধ্যে সম্প্রচার স্বত্ব, স্পনসরশিপ, ম্যাচ ডে আয় ও ‘প্যারাশুট পেমেন্ট’-সহ প্রায় ১৬.৭ কোটি থেকে ৩২.৮ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তি আয় করতে পারে। আর এই ফাইনালের জয়ী হিসেবে একটি ক্লাব সেই স্বপ্নের যাত্রা শুরু করতে পারে।
এবারের ফাইনালে চোখ রাখতেই হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর দিকে। লেস্টার সিটির এই খেলোয়াড় বর্তমানে ধারে খেলছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে। মৌসুমের শেষপ্রান্তে এসে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্লাবের হয়ে মাঠে নামা তাঁর ক্যারিয়ারের জন্যও হতে পারে এক বিশাল বাঁক।

আরও পড়ুন: শাহীন-রিশাদদের নৈপুণ্যে ফাইনালে লাহোর
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শুধু প্রতিযোগিতার দিক থেকে নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও শীর্ষে। প্রতি মৌসুমে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ আয়ের বিশাল একটি অংশ অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। শুধু ২০২০–২১ মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো সম্প্রচার বাবদ ভাগ করে নেয় প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার!
এই ফাইনালের আরেকটি বিশেষ দিক হলো হারলেও ক্ষতিপূরণ পুরোটা চলে যায় না। যে দল উঠে গিয়ে পরের মৌসুমেই নেমে যায়, তারা আগামী তিন বছর পর্যন্ত ‘প্যারাশুট মানি’ নামে নির্ধারিত অনুদান পায়। অর্থাৎ এই ম্যাচের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্লাবদুটি একদিকে যেমন সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখতে পারে, তেমনি আর্থিক নিরাপত্তার জালেও ঢুকে যেতে পারে।
সান্দারল্যান্ড দীর্ঘ সাত বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফেরার স্বপ্ন দেখছে। অন্যদিকে, শেফিল্ড ইউনাইটেড গত মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে আবার ফিরে আসার জন্য মরিয়া। তাই দুই দলের মধ্যকার এই দ্বৈরথ শুধুই ম্যাচ নয়—এটি ক্লাবের ইতিহাস বদলে দেওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ।

বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৪ মে) রাত ৮টা ১ মিনিটে ওয়েম্বলিতে শুরু হবে এই মহারণ। বাংলাদেশেরও কোটি চোখ চেয়ে থাকবে এই ম্যাচের দিকে। আর সেই চোখের কেন্দ্রে থাকবেন হামজা চৌধুরী, যাঁর পায়ে লুকিয়ে থাকতে পারে শেফিল্ড ইউনাইটেডের নতুন প্রিমিয়ার লিগ যাত্রার গল্প।