বুধবার, জুন ২৫, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ক্লপকে উৎসর্গ করে স্লটের শিরোপা উল্লাস

অ্যানফিল্ডের আকাশে যখন লাল ঝড় বইছিল, লিভারপুল তখন লিখছিল নতুন ইতিহাস। পাঁচ গোলের দাপুটে জয়ে টটেনহ্যামকে উড়িয়ে দিয়ে ইংলিশ ফুটবলের মুকুট আবারও তুলে নিল তারা। আর এই আনন্দঘন মুহূর্তে নিজের কৃতিত্বের চেয়ে একজন মানুষকে বড় করে তুললেন লিভারপুলের নতুন ম্যানেজার আর্নে স্লট— তিনি স্মরণ করলেন ইয়ুর্গেন ক্লপকে।

রবিবারের ৫-১ গোলের জয় নিশ্চিত করল লিভারপুলের ২০তম লিগ শিরোপা, ফলে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে রেকর্ড ভাগাভাগি করে নিল তারা। একইসঙ্গে স্লটও জায়গা করে নিলেন ইতিহাসে— প্রিমিয়ার লিগ জেতা প্রথম ডাচ কোচ হিসেবে। যদিও নিজেকে বড় করে দেখানোর কোনো ইচ্ছাই তার মধ্যে ছিল না।

আরও পড়ুন: টানা তৃতীয়বার এফএ কাপের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি

LFCTV-তে স্লট বললেন, “এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই— সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ ইয়ুর্গেন ক্লপের প্রাপ্য। তার দেখানো পথেই আমরা আজ এখানে।”

প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে, যখন করোনার ছোবলে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন লিভারপুল একটি বিশাল মাইলফলক ছুঁয়ে ছিল। ক্লপের হাত ধরেই এসেছিল ৩০ বছর পর কোনো লিগ শিরোপা। তবে কোভিডের কারণে কোনো বিজয় মিছিল, আনন্দের হট্টগোল ছিল না। সেই সময়, শহরজুড়ে বিজয়ের উল্লাস ছিল নিস্তব্ধ। সেই না-পাওয়া আনন্দের ক্ষতিপূরণও এই উল্লাসের মাঝে ছিল।

সাক্ষাৎকারের মাঝেই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে গেয়ে উঠলেন সেই গান, যা ক্লপ বিদায়ের দিন লিভারপুল সমর্থকদের জন্য রেখে গিয়েছিলেন। তবে নিজের নাম বাদ দিয়ে গাইলেন, ‘ইয়ুর্গেন ক্লপ’কে নিয়েই। যেন বলে দিলেন— এই সাফল্যের ছায়ায় এখনো ক্লপের ছোঁয়া আছে।

BBC’র ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’তে স্লট জানালেন, “আমি নিশ্চিত, এখনই ফোন তুললে ক্লপের কোনো বার্তা পেয়ে যাব। সারা মৌসুম জুড়েই আমাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। গত মৌসুমে যেভাবে তিনি আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তা বলে দেয় কত বড় মনের মানুষ তিনি। তবে আজকের দিনে সবচেয়ে বড় কথা— তিনি যে দলটি তৈরি করে গিয়েছিলেন, সেই দলই আজ শিরোপা জিতেছে।”

Sky Sports’কে আরও বললেন স্লট, “ইয়ুর্গেন এবং পেপ লিন্ডার্স যেভাবে দলের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন— খেলোয়াড়দের মানসিকতা, পরিশ্রমের ধারা, সবকিছু অসাধারণ ছিল। তাদের কাজের ফলই আজ আমরা হাতে ধরে দেখছি।”

মৌসুমের শুরুতে কেউই লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন ভাবেনি। স্লট নিজেও মনে করেন, “মৌসুমের আগে যদি কেউ বলত আমরা টপ ফোরে থাকব, আমি খুশি হতাম। কিন্তু খেলোয়াড়রা দেখিয়েছে— তারা তার চেয়েও বড় কিছু পাওয়ার যোগ্য।”

টটেনহাম যখন প্রথমে এগিয়ে যায়, তখনো স্লটের মনে ভয় ছিল না। “বাস থেকে নেমে যখন অ্যানফিল্ডে ঢুকি, তখন থেকেই মনে হচ্ছিল—আজ আমরা হারব না,” স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।

দর্শকদের অকুণ্ঠ সমর্থনও ছিল সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি। স্লট বলেন, “১-০ পিছিয়েও মনে হচ্ছিল, এই সমর্থকদের সঙ্গে আমরা সবকিছু জয় করতে পারি। মাঠের খেলোয়াড় আর গ্যালারির কণ্ঠস্বর এক হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: বড় শাস্তির মুখে রুদিগার, প্রকাশ্যে চাইলেন ক্ষমা

শেষে স্লট মজার ছলে বললেন, “হ্যাঁ, কেউ বলবে ৩৫ বছরে মাত্র দ্বিতীয় লিগ শিরোপা। কিন্তু আমি বলব, পাঁচ বছরে দ্বিতীয়টি!”

এদিনের জয় ছিল শুধু শিরোপা জয়ের নয়— ক্লপের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারকে ভালোবাসা জানিয়ে, লিভারপুলের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার দিন।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর