সান্তিয়াগো বার্নাব্যু— যেন এক রহস্যঘেরা ক্যানভাস। বাইরে থেকে দেখলে শুধুই এক স্টেডিয়াম, কিন্তু এর ভেতরে গড়ায় এমন সব কাহিনি, যা বাস্তবের সীমা ছাড়িয়ে কল্পনার কাব্যে ঢুকে পড়ে। এই মাঠে একটাই নিয়ম— শেষ বাঁশি বাজার আগে কিছুই শেষ নয়। আর তাই তিন গোলে পিছিয়ে থাকলেও আজ রাতের ম্যাচ ঘিরে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের হৃদয়ে স্পষ্ট একটা বিশ্বাস— ‘এবারও পারব, বার্নাব্যু আছে তো!’
প্রথম লেগে আর্সেনালের মাঠে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। ফুটবলবিশ্ব যখন রিয়ালের বিদায়রেখা টানছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় বার্নাব্যু-মনস্তত্ত্ব। ম্যাচের আগের দিনগুলোয় একের পর এক বার্তা ছড়াতে থাকে এমবাপে, ভিনিসিয়াস রদ্রিগো, বেলিংহাম, কিংবা মার্সেলোর মতো সাবেক ফুটবলাররা— সবাই বলছে একটাই কথা, “এখনো কিছুই শেষ হয়নি।”
আরও পড়ুন: ডর্টমুন্ডের কাছে হেরেও ৬ বছর পর সেমিতে বার্সা

এ যেন এক মাইন্ড গেম। একপাশে ভয় ধরিয়ে দেওয়া বার্নাব্যু, অন্যপাশে সেই ভয় কাটিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে আর্সেনাল। এমিরেটস স্টেডিয়ামে রিয়ালকে উড়িয়ে দেওয়ার পরও আর্তেতার দলের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। এমনকি মাঝমাঠের খেলোয়াড়রা প্রকাশ্যে মানসিক চাপের কথা স্বীকার করছেন। আর রিয়াল? তারা যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে। ম্যাচের আগেই তৈরি করে ফেলেছে এক ধরনের ‘যুদ্ধ মঞ্চ’।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ম্যাচ শুরুর ছয় ঘণ্টা আগেই ছাদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ যেন কোনোভাবেই নিঃশ্বাস নিতে না পারে!
এই বার্নাব্যুতে এর আগেও অলৌকিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে রিয়াল। উলফসবুর্গ, ম্যান সিটি, পিএসজি, বায়ার্ন— সবাই কখনো না কখনো বার্নাব্যুর রাতে রিয়ালের প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। ২০২২ সালে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থেকেও যোগ করা সময়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল রিয়াল। এমনকি এক বছর আগেই হোসেলু দুই মিনিটে দুই গোল করে বায়ার্নকে বিদায় করেছিল। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশাতেই আজ আবার জড়ো হবেন বার্নাব্যুর অগণিত সমর্থক।

আর আজকের এই নাটকের মূল চরিত্র হওয়ার দৌড়ে সবার চোখ ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপের দিকে। প্রথম লেগে নিষ্প্রভ থাকলেও আজ যেন ক্ষুধার্ত এক শিকারির মতো মাঠে নামতে যাচ্ছেন তিনি। কয়েক সপ্তাহ আগেই ম্যান সিটির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বার্নাব্যুকে মাত করেছিলেন এমবাপে। এবারও তার কাঁধেই প্রত্যাবর্তনের বড় দায়িত্ব। নজর থাকবে ভিনিসিয়াসের দিকেও। গত সিজনেই যিনি ছিলেন ব্যালন ডি অর জেতার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। বাদ যাবে না রদ্রিগো-বেলিংহামরাও।
তবে বাস্তবতা খুব একটা সহজ নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাস বলছে, মাত্র চারবার এমন হয়েছে যে প্রথম লেগে তিন বা চার গোলে পিছিয়ে থেকেও কোনো দল ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।

যেখানে রিয়াল মাদ্রিদ ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’ নামকরণের পর নতুন আসরে কখনো ৩ বা এর বেশি গোলে নকআউটে পিছিয়ে আর কামব্যাকই করতে পারেনি। অবশ্য এমন কীর্তি মাদ্রিদ গড়েছিলো আগের ইউরোপিয়ান কাপে। তাই এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও রিয়ালের সামনে সুযোগ সেই কীর্তি গড়ার। যদিও আজকের প্রতিপক্ষ আর্সেনালও রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে।
আরও পড়ুন: জিতেও হতাশ অ্যাস্টন ভিলা, সেমিতে পিএসজি
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্নটা খুব সোজা— আবারও কি রিয়াল ইতিহাস লিখবে? নাকি আর্সেনাল বার্নাব্যুর দুঃস্বপ্ন জয় করে নিজের সামর্থ্যের জানান দেবে?

একটাই কথা নিশ্চিত করে বলা যায়— বার্নাব্যুর রাতটা হতে যাচ্ছে স্মরণীয়। হয় এক অসম্ভব প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হব আমরা, না হয় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই চলবে লন্ডনের উদ্দাম নৃত্য!