বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ড্রাই পিচ কেনো স্পিনারদের স্বর্গ?

ক্রিকেট খেলায় পিচ এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ যা প্রতি ম্যাচের পূর্বেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ম্যাচে ভালো ফলাফল অর্জনে পিচের আচরণের সঠিক মূল্যায়ন করার বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ড্রপইন পিচের আগমনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পিচের আচরণের তেমন পরিবর্তন না হলেও, টেস্ট ক্রিকেটে এখনও পিচের আচরণ বুঝতে পারা— জয় বা পরাজয়ের পার্থক্য করে দিতে পারে।

ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংঙ্কায় হোম এডভান্টেজ অর্জনে স্পিন বান্ধব পিচ তৈরী হয়ে থাকে। স্পিন বান্ধব পিচকে সাধারণত ড্রাই পিচ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কীভাবে তৈরী হয় এই ড্রাই পিচ, অন্যান্য পিচের সাথে ড্রাই পিচের পার্থক্য কোথায় এবং কেন এই পিচে স্পিনাররা বেশি প্রাধান্য পায়? সবকিছুর বিস্তারিত আলোচনা—

ড্রাই পিচের উপাদান ক্লে এবং সিল্ট

ড্রাই পিচ তৈরীর উপকরণ:

সাধারণত একটি ক্রিকেট পিচে ৫০>% ক্লে কনটেন্ট বা কাদামাটি, ২০-৩০% সিল্ট বা পলল এবং ১০-২০% বালি এবং আরও কিছু মিনারেলস ব্যবহৃত হয়। ড্রাই পিচে কাদামাটির পরিমাণ ৬০-৭০% থাকে এবং পলল ও বালির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। তবে কালো ও লাল মাটির পিচে কাদামাটির পরিমাণে তারতম্য রয়েছে। ড্রাই পিচে কাদামাটির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ হলো পললের তুলনায় কাদামাটি সহজেই আর্দ্রতা ছেড়ে দেয় এবং শুকিয়ে যায়। ফলে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পিচে সহজেই ফাটল ধরে যায় যা স্পিনারদের বলে টার্ন পেতে সাহায্য করে।

ড্রাই পিচ তৈরীর প্রস্তুতি:

ড্রাই পিচে উপাদানসমূহ সঠিক পরিমাণে মিশ্রনের পর পিচকে শুকানো হয়। পিচকে শুকানোর প্রক্রিয়াই ড্রাই পিচ তৈরীতে মূখ্য ভূমিকা রাখে। কারণ পিচ যত শুকাবে, ততই শক্ত হবে এবং ফাটলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে যা বল টার্ন করানোর জন্য কার্যকর। পিচ শুকানোর জন্য কিউরেটররা নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করেন যেমন – হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার, পিচে আগুন জ্বালানো বা ফ্যান ব্যবহার করা। ড্রাই পিচ তৈরীতে হালকা রোলার ব্যবহার করা হয়, যাতে পিচের উপরের অংশ শক্ত না থাকে এবং সহজেই যেন ভেঙে যায়। এ ধরনের পিচে ঘাসের পরিমাণ নেই বলাটাই বাহুল্য। তবে পিচের উপরের অংশে মাঝেমধ্যে শুষ্ক ঘাস ব্যবহার করা হয় যা ম্যাচ চলাকালীন সময়ে দ্রুতই বিলীন হয়ে যায়।

পিচ রক্ষণাবেক্ষণ

ড্রাই পিচে সুইং না পাওয়ার কারণ:

সবুজ ঘাসের পিচের তুলনায় ড্রাই পিচ অনেক বেশি শক্ত এবং ভঙ্গুর। তাই নতুন বলে যখন পেসাররা বোলিং করে, বলের সাথে শক্ত মাটির ঘর্ষণের ফলে বলের সাইন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাই সুইং খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। কিন্তু সবুজ ঘাসের পিচে বলের সাথে মাটির সরাসরি ঘর্ষণ হয় না বরং ঘাসের মসৃণ অংশের হয়। তাই বলের সাইন বেশি সময় থাকে এবং সুইং ও বেশি হয়। তবে নতুন বলে সুইং না হলেও রিভার্স সুইং ড্রাই পিচে কার্যকর।

আরও পড়ুনঃ ফাইনালের বীরাঙ্গনা : এক পায়ে এলিস পেরির বিশ্বকাপ জয়!

ড্রাই পিচে স্পিনারদের সফলতার কারণ:

নিউটনের গতির ৩য় সূত্র অনুযায়ী “ প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে।” স্পিনারদের বল টার্ন করানোর পিছনেও এই সূত্রের কার্যকারিতা বিদ্যমান। একজন অফস্পিনার যখন হাত থেকে বলটি ছোড়ে, তখন তা ঘড়ির কাটার দিক অনুযায়ী সামনের দিকে ঘুরতে থাকে। এভাবে ঘুরতে থাকা অবস্থায় বলটি যখন মাটিতে আঘাত করে তখন বলটির নিজস্ব গতি বলটিকে একদিকে নিতে চায়, কিন্তু মাটিতে আঘাত করার পর মাটির সাথে বলের পৃষ্ঠের যে ঘর্ষণশক্তির সৃষ্টি হয় সেটি নিউটনের ৩য় সূত্র অনুযায়ী একই শক্তি দিয়ে বলটিকে তার গতির বিপরীতে দিকে অগ্রসর করে। এজন্য অফস্পিনারের বল ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে মিডল বা লেগ স্টাম্পমুখী হয়।
তবে এখানে পিচের ভূমিকা কি? ড্রাই পিচের উপরের স্তর সবুজ ঘাসের পিচের তুলনায় শক্ত, কর্কশ এবং অমসৃণ। তাই ড্রাই পিচে বলের সাথে মাটির সংঘর্ষের সময় যে বিপরীতমুখী শক্তি বা ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তা সবুজ ঘাসের পিচের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। এজন্য ড্রাই পিচে বল বেশি টার্ন হয়।

ড্রাই পিচ

টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন ড্রাই পিচের আচরণের কীরুপ পরিবর্তন হয়:

সাধারণত ড্রাই পিচে প্রথম দুইদিন ব্যাটিং করা তুলনামূলক সহজ। এসময় মাত্রাতিরিক্ত টার্ন বা অসম বাউন্স পরিলক্ষিত হয় না। তৃতীয় দিন থেকে স্পিনাররা টার্ন পেতে শুরু করে এবং শেষের দুইদিন অত্যাধিক টার্নের সাথে অসম বাউন্স ও পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশে এমন স্পিন বান্ধব পিচ তৈরী হয়েছে যেখানে প্রথম দিন থেকেই মাত্রাতিরিক্ত টার্ন পাওয়া যায়, ফলে ২-৩ দিনের মধ্যেই ম্যাচের ফলাফল পাওয়া যায়। এর কারণে আইসিসি বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু স্টেডিয়ামকে ডিমেরিট পয়েন্টও দিয়েছে। এখন একজন প্রশ্ন করতেই পারে যে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাও তো হোম এডভান্টেজ নিতে গিয়ে সবুজ ঘাসের পিচ তৈরী করে বিপক্ষ দলকে তাড়াতাড়ি অলআউট করে, তাহলে তারা কেন ডিমেরিট পয়েন্ট পায়না?
এর উত্তর হলো সবুজ ঘাসের পিচে প্রথম দুই দিন ব্যাটিং করা কঠিন হলেও, সময়ের সাথে সাথে পিচের আর্দ্রতা কমে গিয়ে তা ব্যাটিং বান্ধব হয়ে উঠে। কিন্তু ড্রাই পিচ সময়ের সাথে সাথে আরও কর্কশ ও অমসৃণ হয়ে উঠে এবং ফাটলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। তাই ড্রাই পিচে যদি প্রথম দিন থেকেই অতিরিক্ত টার্ন দেখা যায় তাহলে তিন দিনের মধ্যেই খেলা শেষ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বের স্পিন বান্ধব পিচের জন্য যে স্টেডিয়ামগুলো সুপরিচিত তার মধ্যে মিরপুরের শেরেবাংলা, চেন্নাইয়ের চেপক, শ্রীলংঙ্কার গল, আরব আমিরাতের শারজা এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অধিক পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ আফগান শরণার্থী থেকে ডেনিশ ফুটবলার; নাদিয়া নাদিমের অদম্য পথচলা

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর