বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

বাসায় ফিরে দুর্দিনের সারথীদের স্মরণ করলেন তামিম

চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) তামিম ইকবাল গত সোমবার (২৪ মার্চ) মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। সেখানে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন সাভারের কেপিজে হাসপাতালে। এরপর হার্টে রিং পড়ানো, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, হাসপাতাল বদলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে অবশেষে চারদিন পর বাসায় ফিরেছেন তিনি।

কেপিজে হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার স্থানান্তরের সময় তামিম

তামিম পুরোপুরি সুস্থ নন, এখনো বাকি দীর্ঘ পথ। তবুও বাসায় ফিরে প্রথমেই স্মরণ করলেন তাঁর দুর্দিনে পাশে থাকা ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল, বিকেএসপির চিকিৎসকদের, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম, মোহামেডানের সাপোর্ট স্টাফ ওয়াসিম, কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দলকে। সেই সাথে ভক্তদের কাছে চেয়েছেন দোয়াও।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাতে তামিম ইকবাল তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এসব জানান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে এখন আমি বাসায়। উথালপাথাল এই চারটি দিনে নতুন জীবন যেমন পেয়েছি, তেমনি আমার চারপাশকে আবিষ্কার করেছি নতুন করে। সেই উপলব্ধির সবটুকুতে মিশে আছে কেবল ভালোলাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার ভালোবাসার ছোঁয়া ক্যারিয়ারজুড়ে নানা সময়ই পেয়েছি। তবে এবার তা অনভুব করতে পেরেছি আরও তীব্রভাবে। আমি সত্যিই আপ্লুত।’

তামিম ইকবাল তার দুর্দিনে পাশে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে তার দেয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বিকেএসপিতে আমার অসুস্থতার শুরু থেকেই অনেককে পাশে পেয়েছি তাৎক্ষণিকভাবে। ম্যাচ রেফারি দেবু দা (দেবব্রত পাল), বিকেএসপির চিকিৎসকরা এবং আরও যারা তখন ছিলেন সেখানে, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যে ভাই আমাকে দ্রুতগতিতে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

আরও পড়ুন: চেন্নাইকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় বেঙ্গালুরুর

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব কীভাবে, আমার আসলে জানা নেই। আমি পরে জেনেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন যে, ডালিম ভাই ওই সময় সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না। উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্ত সময়ে আমার পাশে রেখে আল্লাহ আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়েছেন। মোহামেডানের সাপোর্ট স্টাফ ওয়াসিমের কথা না বললেও নয়। শুরু থেকে এখনও সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েই আছে আমার।’

এছাড়া কেপিজে হাসপাতালের ব্যাপারে তামিম বলেন, ‘কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দল তাদের পেশাদারিত্ব আর আন্তরিকতার মিশেলে যেভাবে দ্রুততায় চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মান ও কার্যকারিতাই ফুটে উঠেছে তাতে। আমি পরে শুনেছি যে, দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডা. মারুফ ও তার দল মিরাকল ঘটিয়েছেন। গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা থেকে শুরু করে যারা যে কোনোভাবে যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে হৃদয়ে লালন করব আজীবন। এই হাসপাতালে যতটুকু সময় ছিলাম, তাদের হৃদ্যতার পরশ অনুভব করে যাব সবসময়।’

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ দলের নতুন কোচ হওয়ার দৌড়ে গুল-টেইট

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা শহরের বাইরে ওই এলাকায় এতটা উঁচু মানের হাসপাতাল আছে, এতটা কুশলী চিকিৎসক দল ও স্টাফরা আছেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে চলার একটি প্রমাণ এটি। দেশজুড়ে নানা জায়গায় এর কাছাকাছি মানের হাসপাতাল যদি আরও কিছু থাকে, আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।’

সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তামিম বলেন, ‘ধন্যবাদের তালিকা আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরও অনেকেই নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকের কথা জানি, অনেকের কথা হয়তো জানি না। এতটুকু জানি, ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় তারা কিছু করেননি। আমি তাদের ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ সারা জীবনের জন্য। পুরোপুরি সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ। আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রার্থনায় রাখবেন। সবার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক। ভালোবাসা সবার জন্য।’

আরও পড়ুন: বাসায় ফিরেছেন তামিম ইকবাল

উল্লেখ্য, মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন তামিম। কেপিজে হাসপাতালে ইসিজি করার পর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তামিমের শারীরিক অবস্থা তখন অনুকূলে ছিল না। পরে কেপিজে হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা চলে। হার্টে একটি রিংও পরানো হয়। তখন ডাক্তাররা জানান, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে তামিমকে। কেপিজে হাসপাতালে এক দিন থাকার পর তামিমকে এভারকেয়ারে নিয়ে আসা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তামিমকে ব্যাংকক কিংবা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন তাঁর চাচা আকরাম খান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে তামিমের। বাসায় তাঁকে থাকতে হবে বিশ্রামে। কিছু বিধিনিষেধও মেনে চলতে হবে।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর