বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ইমনকে জয় উপহার দিলেন বোলাররা

পারভেজ হোসেন ইমনের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ও রেকর্ড শতকের পর বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ইমনের শতকে ভর করে ১৯১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। জবাবে অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের অর্ধশতক ও আসিফ খানের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো স্বাগতিকরা। তবে টাইগার বোলার মুস্তাফিজ ও সাকিবের কিপটে বোলিং এবং হাসান মাহমুদের তিন উইকেটে ১৬৪ রানেই শেষ হয় আমিরাতের ইনিংস। ২৭ রানের সহজ পায় বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: ইমনের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৯১

পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচে টস ভাগ্যটা সঙ্গ দেয়নি লিটন দাসের। টসে জিতে টাইগারদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় স্বাগতিকেরা। শুরুটা বেশ দারুণভাবেই করে সফরকারীরা। আগের দিন অধিনায়ক লিটন ফ্রি ভাবে খেলার যেই লাইসেন্স দিয়েছেন সেটারই প্রতিফলন দেখাতে শুরু করেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। প্রথম ওভারেই এক চার ও এক ছক্কায় চাপে ফেলে স্বাগতিকদের।

তবে তানজিদের এই চাপ সামলে নিতে খুব একটা সময় নেয়নি স্বাগতিকেরা। দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নেন টাইগার এই ওপেনারের উইকেট। ৯ বলে ১০ রান করে প্যাভিলিয়নের পথে হাটতে হয় তামিমকে। সঙ্গী ওপেনার বিদায় নিলেও পারভেজ হোসেন ইমন যেন বাইশগজে নেমেছিলেন নির্দিষ্ট পরিকল্পনায়। পাওয়ার প্লে জুড়েই তার ব্যাটে ঝড় চলতে থাকে। ইমনের দেখাদেখি এক ছক্কা হাকিয়ে দারুণ শুরুর আভাস দিয়েছিলেন লিটনও। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৮ বলে ১১ রান করে প্যাভিলিয়নের ফিরতে হয় লিটনকে।

আরও পড়ুন: আমিরাতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

লিটনের বিদায়ের পর হৃদয়কে সাথে নিয়ে রানের চাকা ঘোরাতে থাকে ইমন। সঞ্চিত শর্মার এক ওভারে তিন ছক্কা হাকিয়ে ফিফটির বেশ কাছেও পৌঁছে যান এই ব্যাটার। পরের ওভারেই ২৮ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। হৃদয়ও কিছুটা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলে দশম ওভারেই দলীয় শতকে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

তবে এরপরেই ম্যাচের লাগাম কিছুটা টেনে ধরে স্বাগতিকরা। হৃদয়ের বিদায়ের পরপরই বিদায় নেন মেহেদী হাসান। কিছুটা চাপে পড়া টাইগারদের টেনে তোলার কাজটা করেন সেই ইমনই। বিশাল বিশাল সব ছক্কায় সফরকারীদের উপর থেকে চাপ তুলে দেন এই ব্যাটারই। শতকের বেশ কাছে গিয়ে অবশ্য কিছুটা হোঁচট খেয়েছিলেন ইমন। মতিউল্লাহর করা এক লো ফুল টসে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন এই ওপেনার। যদিও পরে টিভি রিপ্লেতে নো বল ধরা পড়লে সে যাত্রায় বেঁচে যান ইমন।

ইনিংসের ১৯তম ওভারে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছান ইমন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পান এই ব্যাটার। সেই সাথে বলের বিচারে দ্রুততম সেঞ্চুরির হিসেবে ছাড়িয়ে যান তামিমকেও। ইনিংসের শেষ ওভারে ১০০ রান করা ইমন বিদায় নিলে বাংলাদেশের ইনিংস গিয়ে থামে ১৯১ রানে। স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট তুলে নেন মুহাম্মদ জাওয়াদউল্লাহ।

আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন আবাহনীতেই খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব

১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইনিংসের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। টাইগার বোলারদের নাস্তানাবুদ করে প্রথম তিন ওভারেই তুলে ফেলে ৩৮ রান। তবে এরপরই কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মাত্র চার বলের ব্যবধানে দুই উইকেট তুলে নেন মেহেদী ও মুস্তাফিজ। তবে এরপর রাহুল চোপরাকে সাথে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম। দুজনে মিলে দশ ওভারে দলীয় সংগ্রহ নিয়ে যান ৯১-এ।

দলীয় বারোতম ওভারে অবশ্য আঘাত হানেন পেসার তানজিম সাকিব। বিদায় করেন মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন স্বাগতিক এই অধিনায়ক। ওয়াসিমের বিদায়ের পর ব্যাট হাতে ঝড় শুরু করেন আসিফ। মেহেদীর টানা তিন বলে তিন ছক্কা মেরে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন এই ব্যাটার। 

যদিও অপর প্রান্ত থেকে খুব একটা সঙ্গ পাচ্ছিলেন না এই ব্যাটার। রাহুল ও ধ্রুব বিদায় নেন পর পর দুই ওভারে। সঞ্চিতও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। তবে আসিফ যেন লড়াই চালিয়ে গেলেন একাই। যদিও উইকেটের সুযোগ দিয়েছিলেন ঠিকই। ইনিংসের ১৮তম ওভারে ক্যাচ তুলে দিলেও সেটা লুফে নিতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক লিটন।

আরও পড়ুন: ক্রিকেটে না পারলেও ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

যদিও পরের ওভারেই বিদায় নেন আসিফ। হাসান মাহমুদের বলে বড় শট খেলতে যেয়ে মিড অফে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ব্যাটার। শেষ হয় তার ২১ বলে ৪২ রানের লড়াকু ইনিংস। তার বিদায়ের পর বলার মতো রানই তুলতে পারেনি স্বাগতিকেরা। টাইগারদের হয়ে ৩৩ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ টি উইকেট তুলে নেন হাসান মাহমুদ। এছাড়া বল হাতে টাইগারদের হয়ে দুর্দান্ত ছিলেন তানজিম হাসান সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমানও। দুজনেই তুলে নেন দুটি করে উইকেট। চার ওভার বল করে সাকিব খরচ করেন ২২ ও মুস্তাফিজ দেন মাত্র ১৭ রান। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আগামী সোমবার (১৯ মে) একই মাঠে মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

স্কোরকার্ড:

টস: সংযুক্ত আরব আমিরাত

বাংলাদেশ: ১৯১/৭ (২০ ওভার); ইমন ১০০(৫৪), হৃদয় ২০(১৫), জাকের ১৩(১৪); জাওয়াদউল্লাহ ২১/৪, ধ্রুব ৩২/১, জুহাইব ৩৬/১।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১৬৪/১০ (২০ ওভার); ওয়াসিম ৫৪(৩৯), আসিফ ৪২(২১), রাহুল ৩৫(২২); হাসান মাহমুদ ৩৩/৩, মুস্তাফিজ ১৭/২, সাকিব ২২/২, মেহেদী ৫৫/২।

ফলাফল: ২৭ রানে জয়ী বাংলাদেশ

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর