চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় বলেই নাজমুল হোসেন শান্ত যে শটটি খেললেন, তা শুধু তার উইকেটই নয়— বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণও তুলে দিয়েছিল প্রতিপক্ষের হাতে। মুজারাবানির শর্ট বলটি অযথা পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন শান্ত। তখনই প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের চোখে খেলে গেল জয়ের স্পষ্ট ছবি। ম্যাচ শেষে অকপটে জানালেন, “শান্তর আউটটাই ছিল আমাদের জন্য মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। তখনই মনে হয়েছিল, এই ম্যাচটা আমরাই জিতব।”
একদিকে শান্ত যখন মাথা নিচু করে ফিরে আসছিলেন, অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুমে জন্ম নিচ্ছিল আত্মবিশ্বাস। মুজারাবানির গতি আর নিখুঁত লেন্থে একের পর এক ব্যাটার যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন অচেনা সুরে। শান্তর বিদায়ের পর আর দাঁড়াতেই পারেননি মিরাজ-জাকেররা। যদিও জাকের আলির লড়াকু হাফসেঞ্চুরি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে, তবে মুজারাবানির বিধ্বংসী স্পেলে ৬ উইকেট হারিয়ে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস— মাত্র ২৫৫ রানে।
আরও পড়ুন: ফাহমিদুলকে জাতীয় দলে চায় বাফুফে

অর্থাৎ, জিম্বাবুয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ১৭৪ রানের। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে এই লক্ষ্যমাত্রা অসম্ভব নয়— বিশেষ করে যখন উদ্বোধনী জুটিই এনে দেয় ৯৫ রান!
তবে টেস্ট ক্রিকেট এক সেশনেই বদলে দিতে পারে গল্প। মিরাজ ও তাইজুলের স্পিনজাদুতে হঠাৎ করেই ধুঁকতে থাকে সফরকারীরা। একসময় সমীকরণ দাঁড়ায়— ১৩ রান চাই, হাতে মাত্র ৩ উইকেট। টানটান সেই মুহূর্ত নিয়ে আরভিন বলেন, “আমরা এমন পরিস্থিতিতে খেলি না প্রায় কখনো। ড্রেসিংরুমে টেনশন ছিল তুঙ্গে। জয়ের কাছে গিয়েও হোঁচট খাওয়ার ভয়টা গ্রাস করেছিল সবাইকে।”
তবু শেষ হাসিটা হেসেছে তারাই। চার বছর পর টেস্টে জয়ের স্বাদ, তাও আবার প্রতিপক্ষের মাঠে। বাংলাদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়—এটি কেবল পরিসংখ্যান নয়, সাহস, সংকল্প আর ধৈর্যের জয়।

আরভিন বলেন, “টেস্ট ক্রিকেটই একজন খেলোয়াড়কে তৈরি করে। আমরা চাই নিয়মিত এই ফরম্যাটে খেলতে, চাই বড় দলের মুখোমুখি হতে। তবেই উন্নতির পথ খুলবে।”
হারের পর শান্তর কণ্ঠেও ছিল নিঃসঙ্গতা আর আত্মবিশ্লেষণের ছাপ। একরকম নিজের কাঁধেই তুলে নেন হারের দায়ভার। বলেন, “আমি ভুল করেছি, সেটাই ম্যাচের রূপরেখা পাল্টে দিয়েছে। তখন একটা ভালো জুটি গড়তে পারলে লিডটা ২২০ হতে পারত। হয়তো গল্পটাই অন্যরকম হতো।”
আরও পড়ুন: চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন সৈকত!

মুজারাবানির শর্ট বলটিকে পুল করার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন নিজের মনেই সংশয়। শান্ত বলেন, “বলটা খেলতে হতো না, জানতাম। একটু স্থির থাকলেই গল্পটা অন্য রকম হতে পারত। ম্যাচের আগেই সতীর্থদের বলেছিলাম— প্রথম সেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিজেই সেটা ধরে রাখতে পারিনি।”